ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

একটি ব্রিজের জন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ৯ গ্রামের মানুষ

পিরোজপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১১ জুন ২০২৪   আপডেট: ০৯:৩৬, ১১ জুন ২০২৪
একটি ব্রিজের জন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ৯ গ্রামের মানুষ

মোগো এই ভোগান্তির শেষ অইবে কবে ভালো ব্রিজটা ভাইঙ্গা, নতুন ব্রীজ করার লাইগা ৫ বছর ধইরা হালাইয়া রাখছে, দিছিলে একটা চার বন্যায় হেইডাও ভাইঙ্গা গেছে। মোগোই দুর্ভোগ যে কবে শেষ অইবে- আক্ষেপ করে বলছিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ আ. সোরাফ হাওলাদার।

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ৯টি গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এই  ব্রিজটি। গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি নির্মাণ কাজ দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলাচলের জন্য ঠিকাদার ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায় নির্মিত একটি সাঁকো দিয়ে এতদিন পারাপার করলেও ঘূর্ণিঝড় রিমেলের আঘাতে সে সাঁকোটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আর এতে করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এই এলাকার দুই পাড়ের প্রায় ২২ হাজার মানুষ। জনগুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, সমাজসেবা অফিস, এনজিও, জোলাগাতী মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জোলাগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফলোইবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঐতিহ্যবাহী জোলাগাতী ফাজিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। 

দুই পাড়ের ৯টি গ্রাম শিয়ালকাঠি, জোলাগাতি, ফলোইবুনিয়া, মোল্লারহাট, শাপলাজা, শংকরপুর, পাঙ্গাশিয়া, পার্শ্ববর্তী ভান্ডারিয়ার ভিটাবাড়ি, রাজাপুর এসব গ্রামের মানুষকে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।

ঠিকাদার একটি খেয়ার ব্যবস্থা করে দিলেও টাকা না দেওয়ায় গত দুইদিন পর তা বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় লোকজন আবার একটি নৌকা এনে খেয়া পারাপারের ব্যবস্থা করে চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। এখন তাদের এই ঝুঁকিপূর্ণ খেয়াই একমাত্র ভরসা।

জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে উপজেলার শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের পরিষদের সামনে পাঙ্গাশিয়া খালের উপর প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় আরসিসি গার্ডার ব্রিজের কার্যাদেশ পেয়ে দুই বছরের অধিক সময়ে ১০% নির্মাণ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। খালের উপর থাকা পূর্বের আয়রন ব্রিজটি অপসারণ করে পাইলিং এর কাজ শেষ করে ফেলে রাখা হয়েছে। যার ফলে স্থানীয় মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর থেকে ৫ কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৭ মিটার আরসি গার্ডার ব্রিজের টেন্ডারটি হয়। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য রুবেল বলেন, এখানে একটি ভালো ব্রিজ ছিল, নতুন করে ব্রিজ করার জন্য বছরের পর বছর ধরে পুরনো ব্রিজ ভেঙে রেখেছে। আমাদের এখানে জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এখান দিয়ে প্রতিদিনই কমপক্ষে কয়েক হাজার লোক যাতায়াত করে।

স্থানীয় তরুণ সমাজসেবক রাসেল রাড়ী জানান, খালের দুই পাড়ের জনগণসহ হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি শিকার হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নুরুল আমিন মাঝে মাঝে ব্রিজের নির্মাণ কাজ করেন আবার বন্ধ করে দেন। যার ফলে এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই, কবে এই ব্রিজের কাজ শেষ হবে তা ঠিকাদারই ভালো জানেন। এরমধ্যে আমরা এ বিষয়ে বহুবার মানববন্ধন প্রতিবাদ করেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

জোলাগাতি মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে ছোট্ট নৌকায় পার  হয়ে আসা-যাওয়া করে। এ নিয়ে আমরা চিন্তিত। 

 তাওহিদুল/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়