ভর্তিতে বাড়তি টাকা আদায়, কর্তৃপক্ষের দাবি ‘বিবিধ ফি’
জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
মানিকগঞ্জের সেরা বিদ্যাপীঠ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ। কলেজে একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে এসেছেন মো. নাহিদুল ইসলাম। ভর্তির কাগজপত্র কলেজে জমা দেওয়ার আগে বোর্ড নির্ধারিত টাকা অনলাইনে জমা দিয়েছেন তিনি। তবে কাগজপত্র জমা দিতে এসে দেখেন ৩৩০ টাকা পরিশোধ না করলে আবেদন ফরম জমা নিচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। ভর্তি হতে আসা সব বিভাগের শিক্ষার্থীরাই এ টাকা নগদ হাতে হাতে পরিশোধ করছেন। কলেজের নিচ তলায় এমন চিত্র দেখে নাহিদুল ইসলামও ৩৩০ টাকা পরিশোধ করে ভর্তির কাগজপত্র জমা দিলেন। নাহিদুল ইসলামের মতো শত শত শিক্ষার্থী এ টাকা দিচ্ছেন।
দেবেন্দ্র কলেজে একাদশ শ্রেণীতে তিন বিভাগে শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা ১ হাজার ৮৫০ জন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩৩০ টাকা আদায় করলে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা।
সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ডিজিটাল হাজিরা পরিচালন ব্যয়, একাডেমিক ক্যালেন্ডার, কলেজ ব্যাচ, আইডি ফরম ও অন্যান্য খাতে এ টাকা ব্যয় করা হবে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে, বিবিধ ফি আদায়ের রসিদ।
অভিভাবকদের ভাষ্য, ডিজিটাল যুগে ভর্তি আবেদনের টাকা অনলাইন পদ্ধতি নেওয়া হচ্ছে। তাহলে কলেজ কেন নগদে টাকা নিচ্ছে? শহরের সরকারি মহিলা কলেজও একই কায়দায় শিক্ষার্থী প্রতি নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। তবে দেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকার রসিদ।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের একাদশ শ্রেণীতে মানবিক শাখায় ৮২৫ জন, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৬০০ এবং বিজ্ঞান শাখায় ৪২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। সরকারি মহিলা কলেজে মানবিক বিভাগে ১ হাজার, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ২৫০ জন ও বিজ্ঞান শাখায় ২৫০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে।
সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের মানবিক শাখার শিক্ষার্থী এনি আক্তার বলেন, ‘বোর্ড নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছি। এখন ভর্তি হতে এসে জানতে পারলাম ৩৩০ টাকা দিতে হবে। এক বান্ধবীর কাছ থেকে ২০০ টাকা ধার করে জমা দিয়ে ভর্তি হয়েছি।’
মানিকগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী আয়শা আক্তার বলেন, ‘ব্যাংকে নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে কলেজে ভর্তি হতে এসে জানতে পারলাম ১৫০ টাকা দিতে হবে। সকল শিক্ষার্থী দিচ্ছেন, তাই আমিও ১৫০ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছি।’
জুলেখা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, বোর্ড যে টাকা নির্ধারণ করেছে তার বাইরে ৩৩০ টাকা দেওয়া কতটুকু যুক্তিসংগত এটা ভেবে দেখতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে এমন বিষয়ে অনিয়মের অভিযাগ উঠলে তা শিক্ষার্থীদের মনে প্রভাব পড়তে পারে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে তার কক্ষে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, একাডেমি কাউন্সিল সভায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৩০ টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। তবে পরে দেখানো যাবে বলে জানান।
একাডেমিক কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা কোন কোন খাতে খরচ হবে তা জানতে চাইলেও তিনি জানাতে পারেননি। পরে তিনি ভর্তি কমিটির সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের তার কক্ষে ডেকে নিয়ে আসেন। ভর্তি কমিটির সদস্য রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মাহাফিল খান, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহামুদুল্লাহ ও গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বায়জিদ হাসানের কাছে ৩৩০ টাকা কোন খাতে নেওয়া হচ্ছে তার হিসাব চাওয়া হলে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটি হিসাব দেখান। এতে ৩৩০ টাকার হিসাব দেখানো হয়, পাঠ পরিক্রমা ৫৮ টাকা, আইডি ফরম ৩ টাকা, রিসিট ২ টাকা, ডিজিটাল আইডি কার্ড ৮৫ টাকা, ডিজিটাল মেশিন ৬০ টাকা ও দুই বছরের শিক্ষার্থীদের এসএমএস ১২২ টাকা। সবগুলো খাত যোগ করা হলে তাতে দেখা যায় ৩৩৩ টাকা হয়। খরচের খাত বেশি হওয়ার প্রসঙ্গে ওই শিক্ষকরা জানান, এটা কম-বেশি হতে পারে। তাই আইডিয়া করে হিসাব করা হয়েছে।
সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ আদায়কৃত ১৫০ টাকার ১০০ টাকা ফরম, ব্যাচ, হোল্ডার, প্রসপেক্ট, চকলেট ও ফুলের তোড়ায় খরচ হবে। আর বাকি ৫০ টাকা ডিজিটাল আইডি কার্ডে খরচ হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. রেজাউল হক বলেন, এ ধরনের ফি নিতে বোর্ড নির্দেশনা দেয়নি। কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল ফি নিতে পারেন। তবে তার স্বচ্ছতা থাকা উচিত। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যাতে পরিষ্কার জানতে পারেন কী কারণে টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে ঢালাওভাবে টাকা আদায় করা ঠিক নয়। বিষয়গুলো নিয়ে বোর্ড সভায় আলোচনা করা হবে।
নির্ধারিত ভর্তির টাকা যখন ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়, তখন এ টাকা না নিয়ে কেন নগদে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিচ্ছেন এমন বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে যোগদান করেছি। এ বিষয় নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে সেই বিষয়ে কাজ করব। কেউ যদি নিয়মের বাইরে অর্থ আদায় করেন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
/বকুল/