ঢাকা     বুধবার   ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৩ ১৪৩১

গাজীপুরে সংঘর্ষে নিহত ৮ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর ও কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫২, ৫ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ২১:৫৬, ৫ আগস্ট ২০২৪
গাজীপুরে সংঘর্ষে নিহত ৮ 

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমিতে হামলা চালিয়ে দুইটি প্রধান ফটক ও ভেতরে ভাঙচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসময়ে আনাসার সদস্যরা গুলি চালালে দুই জন নিহত হন। আহত হয়েছে অনেকে। অপরদিকে, জেলার শ্রীপুর উপজেলায় সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।  

কালিয়াকৈরে নিহত ব্যক্তির নাম হলো এলিম হোসেন। তিনি উপজেলার রাখালিয়াচালা এলাকার বেলায়েত হোসেনের ছেলে। অপর নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার  বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। 

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমিতে সোমবার বিকেলে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। তারা আনসার একাডেমির ভেতরে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। পরে তারা আনসার একাডেমির অফিসে ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিংসংযোগ করার চেষ্টা করে। এসময় তাদের বধা দিতে আনসার সদস্যরা গুলি ছুঁড়ে। ফলে আহত হন শতাধিক মানুষ। পরে স্থানীয় লোকজন হতাহতদের উদ্ধার করে সফিপুর মডার্ণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুই জনকে মৃত ঘোষণ করেন। 

সফিপুর মডার্ণ হাসপাতালের চিকিৎসক সাদ্দাম হোসেন বলেন, হাসপাতালে দুইজন মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। এছাড়া আরো দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, আজ সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ বিভাগে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যরা কয়েকটি বাসে করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় আসলে আন্দোলনকারীরা বাসগুলো আটকে দেন। দুটি বাসে থাকা প্রায় ৮০জন বিজিবি সদস্যদের মুলাইদ এলাকার বাংলাদেশ ফিলিং স্টেশনের সামনে আটকে দেন। এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা তাদের ভারতীয় পুলিশ বা বিএসএফ সদস্য ও তারা হিন্দিতে কথা বলেন বলে প্রচার করেন। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যের কাছে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ আন্দোলনকারীরা বস্তায় ভরে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা বিজিবি সদস্যদের ওপর চড়াও হন। এ সময় বিজিবি সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালান। এসময় ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে।

শ্রীপুরে নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মৃত আসাদের ছেলে সিফাতউল্লাহ (২২), শ্রীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দারগারচালা গ্রামের শুক্কুর আলমের ছেলে শরীফ আহমেদ (২০), ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার তাজুল ইসলামের ছেলে কাওসার (২৮) এবং ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার আব্দুল হাইয়ের ছেলে জুয়েল মৃধা (৩০)। অন্য দুই জনের নাম জানা যায়নি। 

গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলেন- আজাহার (৩০), ফারুক (২৬), মারুফ (১৯), ইদ্রিস (৩০), রিয়াজ (২৪), স্বপন (৩৫), বাবুল (২১), জাকির (৫২), শামীম (৩০) এবং রায়হানসহ (২৮) অর্ধশতাধিক।

মাওনা চৌরাস্তার আলহেরা মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপক মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত অবস্থায় পাঁচজনের মরদেহ এসেছে। তাদের মধ্যে তিন জনের নাম জানা গেছে। অপর দুইজনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। এছাড়া একজনের মরদেহ উপজেলা মাওনা এলাকায় তার আত্মীয় আরিফ সরকারের বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ২২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

আলহেরা হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল হোসেন বলেন, ‘দুপুরের পর থেকে গুলিবিদ্ধ ২২ জনসহ ৫০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জারিন ফারা বলেন, বিকালের দিকে চার জন ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছে।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসারের মুঠোফোনে কল দিলেও তারা কল তিনি রিসিভ করেননি। যে কারণে তাদের বক্তব্য পাওয়া জানা যায়নি। 

রেজাউল/রফিক/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়