হেলমেট না থাকলে ‘শাস্তি’ সড়ক নিয়ন্ত্রণের কাজ
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তায় হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল দেখলেই আটকে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শাস্তি হিসেবে করতে হচ্ছে ১০ মিনিট রাস্তার শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) ছুটির দিন সকাল থেকে উপজেলার কাপাসিয়া রোড, পুরাতন ব্যাংকের মোড়, কালীগঞ্জ বাজার বাসস্ট্যান্ড ও বটতলায় দেখা গেছে এমনই দৃশ্য। স্থানগুলোতে অবস্থান নিয়েছে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, স্কাউট ও বিএনসিসি সদস্যরা।
কালীগঞ্জের প্রধান সড়ক বটতলার রাস্তার দুই ধারে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থী ও তরুণেরা। সবার হাতে একটি করে বাঁশি। দূর থেকেই সেই বাঁশি বাজিয়ে বাস ও অন্যান্য যানবাহনের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তারা। হঠাৎ একটি মোটরসাইকেলে হেলমেট ছাড়া চালক দেখে আটকে দিলেন শিক্ষার্থীদের দলটি। মোটরসাইকেলে বসা ব্যক্তিটি বয়সে তরুণ। তিনি হাতজোড় করে কিছু বলছিলেন শিক্ষার্থীদের। তবে তারা কিছুতেই মানছিলেন না। শিক্ষার্থীদের দাবি মোটরসাইকেলটি পার্কিং করে ১০ মিনিটের জন্য হলেও রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ করতে হবে। তবে বয়োজ্যৈষ্ঠদের ব্যাপারে তারা মানবিক আচরণ করছেন। তাদেরকে ছেড়ে দিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে হেলমেট পরে মোটরসাইকেল চালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, একজন ট্রাফিক যেভাবে সড়কে দায়িত্ব পালন করতেন, তারাও সেভাবে চেষ্টা করছেন। তবে সড়কের নীতিগুলো অনুসরণের বিষয়গুলো দেখছেন তারা। মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি বসতে দেখলে জীবনের ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে অন্তত একজনকে নেমে যাওয়ার অনুরোধ করছেন। আবার হেলমেট ব্যবহার করে মোটরসাইকেল চালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। মূলত কোনো সড়কে যানজট সৃষ্টি না হয়, সেটিই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
সরেজমিন দেখা গেছে, আজ কালীগঞ্জের সকল সড়কে বেশিরভাগ ট্রাফিক পয়েন্ট শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে। কোনো মোটরসাইকেলে তিনজন দেখলে তারা বাইক থামিয়ে দিচ্ছেন। হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালকদেরও থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মোড়ে, গলিতে তারা দাঁড়িয়ে আছেন। প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করলেও তা যেন শৃঙ্খলা মেনে করে, সে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। বাসের লেন নিয়ন্ত্রণ, অ্যাম্বুলেন্সকে দ্রুত যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া সবই করছেন তারা। শিক্ষার্থীরা রাস্তার দুপাশ ও মাঝে অবস্থান নিয়েছেন। এতে তারা যানবাহনের লেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন। অনেকের গলায় তাদের নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড ঝোলানো আছে। অনেকে আবার স্কাউট ও বিএনসিসির ড্রেস পরে এসেছেন।
অনেক জায়গায় পরিচ্ছন্নতার কাজে নেমেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী। তারা রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছেন, সড়কের আবর্জনা সরিয়ে ফেলছেন। কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিষ্কার করার পাশাপাশি কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ময়লা পরিষ্কার করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। অনেকেই রাস্তার পাশে রাখা ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে ফেলছেন। ময়লা-আবর্জনা অন্যত্র ফেলার জন্য ব্যবহার করছেন কালীগঞ্জ পৌরসভার মযলার গাড়ি। শিক্ষার্থীদের এই দায়িত্ব পালন দেখে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে তাদেরকে ভালোবেসে নাস্তা ও পানির ব্যবস্থা করছেন।
কালীগঞ্জ বাজার এলাকার বটতলার সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিএনসিসির সদস্য অরণ্য বণিক। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দাবি পূরণ হয়েছে। মানুষ এখন শৃঙ্খলা চাচ্ছে। কালীগঞ্জের রাস্তায় কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই। আমাদের বিদ্যালয়ের কয়েকজন সকাল থেকেই বড় ভাইদের সাথে রাস্তায় আছি। আমরা সময় ভাগ করে কাজ করছি।’
কালীগঞ্জ বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বিএনসিসির সদস্য জিসান নামের আরেক কিশোরের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাটারিচালিত রিকশাকে প্রধান সড়কে শৃঙ্খলভাবে চলার এবং এগুলো যেখানে-সেখানে না থামার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই কথা শুনছেন। আবার অনেক বাইকার জোরে চালিয়ে চলে যাচ্ছেন। এ জন্য আমরা রাস্তার দুই ধারে অবস্থান নিয়েছি।’
কালীগঞ্জ পুরাতন ব্যাংকের মোড় এলাকায় দায়িত্ব পালন করা স্কাউট সদস্য ও কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ বলেন, ‘কালীগঞ্জের রাস্তায় স্বাভাবিক সময়ে রাস্তায় যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের। তবে গত কয়েকদিনের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তার সাথে দায়িত্ব পালন করছে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নারী স্কাউট সদস্যরাও।’
কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজের শিক্ষার্থী ও স্কাউট লিডার নাদিম বলেন, ‘পুলিশের কর্মবিরতির ফলে কালীগঞ্জ এখন কার্যত পুলিশ শূন্য। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আনসার ও ভিডিপি) দেশের বিভিন্ন থানার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসহ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের কালীগঞ্জ থানা ও উপজেলা পরিষদের সামনে দেখা গেলও সড়কে তাদের দেখা যায়নি। তাই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, স্কাউট ও বিএনসিসির সদস্যরা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব পালন করছে।’
রফিক সরকার/সনি