ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে হঠাৎ পাসপোর্ট করার হিড়িক

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ২৮ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১৯:৫৫, ২৮ আগস্ট ২০২৪
ঠাকুরগাঁওয়ে হঠাৎ পাসপোর্ট করার হিড়িক

হঠাৎ করে ঠাকুরগাঁও পাসপোর্ট অফিসে নতুন পাসপোর্ট করার হিড়িক পড়েছে। বিগত দিনের তুলনায় ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সবচেয়ে বেশি মানুষ পাসপোর্ট করতে শুরু করেছেন। প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছেন পাসপোর্ট করতে। এর আগে একসাথে এত মানুষের ভিড় পাসপোর্ট অধিদপ্তরে কখনই দেখা যায়নি। অতিরিক্ত গ্রাহকের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ।

চলতি আগস্ট মাসের গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসের সামনে এবং সামনের রাস্তায় অস্বাভাবিক ভিড় দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন বয়সী গ্রাহক দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন পাসপোর্ট করার জন্য। 

আগে ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৬০টি আবেদন জমা পড়ত।বৈষম্য বিরোধী গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক সাপ্তাহ পর থেকেই এর সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি। অতিরিক্ত গ্রাহকের কারণে তাই আবেদনের কাগজপত্র জমা নিলেও একই দিন ছবি তোলা কিংবা আগুলের ছাপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবা প্রত্যাশীরা।

পাসপোর্ট অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে পাসপোর্ট আবেদন বাবদ মাসে প্রায় দেড় কোটি রাজস্ব আয় হলেও বর্তমানে বেড়েছে এর পরিমাণ।

নতুন পাসপোর্ট কিংবা নবায়নে নতুন করে ডাটা এন্ট্রি করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্টের জন্য চোখের আইরিশসহ ছবি তোলা হচ্ছে নতুন করে। এতে করে নতুন করে ছবি তোলা, আইরিশ নেয়া এবং স্বাক্ষর করার কাজ করতে হচ্ছে অপারেটরদের। প্রতিটি কাজে গড়ে পাঁচ-সাত মিনিট সময় লাগছে। এর মধ্যে সার্ভার ডাউনসহ নানা ধরনের প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনাও বড় ধরনের সংকট তৈরি করছে। হঠাৎ করে অধিক সংখ্যক গ্রাহক পাসপোর্ট করতে আসায় তাদের কাঙ্খিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

পাসপোর্ট করতে আসা রূপসী বলেন, ‘সামনে পূজা আর দেশের এই অবস্থায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে এসেছি। কিন্তু পাসপোর্ট করতে পারব কিনা বলতে পারছি না। লাইন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।’

হরিপুর উপজেলা থেকে আসা দীলিপ জানান, ‘সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। সকাল থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কখন আবেদন জমা দিতে পারব কে জানে।’

গৌতম নামে এক ছাত্র বলেন, ‘খুব বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় সবাই পাসপোর্ট করতে এসেছি। পাসপোর্ট করে আমি ভারতে গিয়ে পড়াশোনা করব। এছাড়া অনেকেই বলছেন চিকিৎসার জন্য, কেউ বলছেন তীর্থে যাবে আবার কেউবা বলছেন আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে এসেছেন।’

সমাজ উন্নয়নকর্মী মনিরুজ্জামান মিলন জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকেই দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করা হয়। আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও হামলা করা হয় এবং অনেকে হামলা শিকার হন। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় ধরনের কোনো সমস্যা বা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হয়নি। তারপরও তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয়-ভীতির সঞ্চার হয়েছে। যে কারণে আগের তুলনায় বর্তমানে ধর্মাবলম্বীদের অধিকাংশ মানুষ পাসপোর্ট করছেন।

আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁওয়ের উপ-সহকারি পরিচালক মো. রুকুনুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, ‘আগে দৈনিক সর্বোচ্চ ৬০-৭০টি আবেদন জমা হতো। বর্তমানে প্রতিদিন ২৫০-৩০০টিরও বেশি পাসপোর্টের আবেদন জমা হয়। হঠাৎ করেই অতিরিক্ত চাপ পড়ায় আমাদের যে পরিমাণ জনবল আছে, সে অনুযায়ী কাঙ্খিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এজন্য রাত পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় কাজ করে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

হিমেল/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়