ঢাকা     শুক্রবার   ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৯ ১৪৩১

ছাত্র-পুলিশ ভাই ভাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২১:৪৫, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ছাত্র-পুলিশ ভাই ভাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘী ময়দানে ছাত্র-নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় বক্তব্য দিচ্ছেন হাসনাত আবদুল্লাহ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘ছাত্র এবং পুলিশ হচ্ছে ভাই-ভাই। আমাদের কোনো বিভেদ নেই। সব পুলিশ কিন্তু বেনজীর না। সব পুলিশ ডিবি হারুন না। আমার বাবা, আমার ভাই; তারাও পুলিশ। সুতরাং পুলিশদের আমরা সহযোগিতা করবো। আপনারা আপনাদের কাজে ফিরে আসুন। আপনাদের মধ্যে যারা খুনিদের দোসর ছিল তাদেরকে আমরা জানি।’

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘী ময়দানে গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যারা বর্তমানে মাঠে রয়েছেন তাদেরকে আমরা প্রতিপক্ষ না ভেবে সহযোগী ভেবে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাব। পুলিশদের প্রতি বার্তা- দেখেন বেনজীর দেশে থাকতে পারে নাই। ডিবি হারুন ভালো নেই। সুতরাং, আপনারা জনমুখী না হয়ে ক্ষমতামুখী হলে আপনাদের অবস্থাও বেনজীর এবং হারুনের মতো হবে।’

চট্টগ্রামের ছাত্র-নাগরিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ঢাকাতে যখন আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো তখন চট্টগ্রাম থেকে আপনারা আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। আমরা দেখেছি, ওয়াসিমরা কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, শান্তরা কীভাবে রক্ত দিয়েছে। আমরা সেই চট্টগ্রামে এসেছি। আমরা আপনাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে চাই, সংকটকালীন সময়ে আমরা যেভাবে একসঙ্গে হয়েছিলাম আমাদের একইভাবে একসঙ্গে থাকতে হবে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বীর চট্টলাবাসী সবসময় ধর্মভীরু। আমরা দেখেছি, তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সবসময় ধর্মীয় গোঁড়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দাঁড়ি-টুপি যাদের রয়েছে তাদেরকে সবসময় প্রান্তিকীকরণ করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, যে দাঁড়ি-টুপির মানুষগুলো সেদিন উত্তরায় নেমে এসেছিল, যাত্রাবাড়িতে দুর্গ গড়ে তুলেছিলেন। তাদের সমন্বয়কের পরিচয় লাগেনি। উত্তরায় যারা শহিদ হয়েছিল তাদের সমন্বয়কের পরিচয় লাগেনি। ঠিক একইভাবে এ রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে আমাদের সমন্বয়ক হওয়ার প্রয়োজন নেই, সহ-সমন্বয়ক হওয়ার প্রয়োজন নেই। এখানে যারা রয়েছেন প্রত্যেকেই সমন্বয়ক, প্রত্যেকেই সহ-সমন্বয়ক।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘ছাত্রদের যে আন্দোলনটি হয়েছিল, সেটি হয়েছিল ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অসাম্যের বিরুদ্ধে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে। টেন্ডারবাজ এবং দুর্নীতিবাজ যারা রয়েছেন আপনাদের সতর্ক করতে চাই। আপনারা ১৬ বছর একটি দলের ছত্রছায়ায় ছিলেন। এখন যদি আর একটা দলের ছত্রছায়ায় এসে আপনারা দুর্নীতি করার চেষ্টা করেন ছাত্র-জনতা আপনাদেরকে দেখে নেবে।’

প্রশাসনে কর্মরতদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করুন। আপনারা যদি ভেবে থাকেন আপনারা গোস্সা করে বসে থাকবেন, অফিস-আদালতের কাজ করবেন না, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। এই আন্দোলনে কামার ছিল, কুলি ছিল, মুচি ছিল। ঠিক একইভাবে এই আন্দোলনে শিক্ষিত শ্রেণিও ছিল। সুতরাং আপনাদের রিপ্লেসমেন্টও হয়ে যাবে।’

এই সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই ছাত্র নাগরিকদের পাওয়ার কিছুই নেই, আমরা ত্যাগ করতে প্রস্তুত। আমাদের ছাত্র নাগরিক রাস্তায় এসে দাঁড়ায়, পুলিশের সামনে বুক পেতে দেয়। যে চাঁদাবাজ এবং টেন্ডারবাজ রয়েছেন, আপনাদেরকে বলতে চাই, আমরা বুলেট-বোমা ভয় পাই না। আপনারা সতর্ক হয়ে যান। আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে পুঁজি করে আপনারা যদি ভেবে থাকেন আবার দুর্নীতি শুরু করবেন তবে ছাত্র-নাগরিক আপনাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলবে।’

চট্টগ্রামে সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানো চেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের মধ্যে বিভাজন করেছে। বিভাজনের রাজনীতি বিদ্যমান রেখে তারা ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। তারা সবসময় বিভাজন করেছে, কারা দাঁড়িওয়ালা, কাদের দাঁড়ি নেই, কারা মাদরাসা শিক্ষার্থী, কারা না। কিন্তু এই ফ্যাসিজম পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা উদাহরণ তৈরি করেছি। মন্দিরে মন্দিরে যখন হামলা হয় তখন সেই মন্দির পাহাড়া দিয়েছে আমাদের দাঁড়ি-টুপিওয়ালা ভাইয়েরা। আমাদের সবার প্রথম পরিচয় আমরা বাংলাদেশি।’ 

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, মোহাম্মদ আলী, ফজলুল হক শ্রাবণ, রিয়াজুর রহমজান ও পুষ্পিতা নাথ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রেজাউল/মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়