ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বেক্সিমকোর ১৪ কারখানা স্থায়ী বন্ধ, সকল শ্রমিক ছাঁটাই

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৩:০৪, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বেক্সিমকোর ১৪ কারখানা স্থায়ী বন্ধ, সকল শ্রমিক ছাঁটাই

ফাইল ফটো

গাজীপুর মহানগরীর সারাব এলাকার বেক্সিমকো ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্কের টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেল বিভাগের ১৪টি কারখানা ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বন্ধ কারখানাগুলোর সকল শ্রমিককে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ওই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 

নোটিশে লেখা রয়েছে, গাজীপুরে অবস্থিত বেক্সিমকো লিমিটেড (ইয়ার্ন ইউনিট-১ ব্যতিত) ও এর সংশ্লিষ্ট অপর ১৩ টি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মরত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শ্রমিকদের বিশেষ অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কারখানায় কোন কাজ না থাকার কারণে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর এবং ৫ ফেব্রুয়ারি হতে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সর্বশেষ সংশোধিত ২০১৮) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক কারখানাসমূহের লে-অফ ঘোষণা করা হয়। কোন ভাবেই কাজের সংস্থান না থাকায় কারখানাসমূহ ১৬(৭) ধারা এবং তদনুযায়ী ২০(৩) ধারা মোতাবেক কারখানার সকল শ্রমিককে ২৮ ফেব্রুয়ারি হতে ছাঁটাই করা হলো এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণরুপে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। ছাঁটাইকৃত সকল শ্রমিককে আইন ও বিধি অনুযায়ী তাদের সকল প্রাপ্য পাওনাদি প্রদান করা হবে। এই প্রাপ্য পাওনাদি আগামী ৯ মার্চ হতে পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হন। অনেক ব্যাংকের সঙ্গে বেক্সিমকোর লেনদেন থাকলেও শুধু জনতা ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা হতো। এই ব্যাংকে গ্রুপটির ২৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে বড় অংশই এখন খেলাপি। গ্রুপটির ঋণ একক ঋণগ্রহীতার সীমাও অতিক্রম করায় বেক্সিমকোর নতুন করে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে নিয়মিত বেতনভাতা দিতে না পারায় বেক্সিমকো গ্রুপের একাধিক কারখানায় শ্রম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকদের মাসিক বেতন ৬০ কোটি টাকা আর কর্মকর্তাদের বেতন ১৫ কোটি টাকা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের দুটি ধারা শিথিল করে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে বেক্সিমকোর কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতার জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

সম্প্রতি হাইকোর্টে এক রিটের শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৬টি ব্যাংক ও ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেক্সিমকোর ৭৮টি প্রতিষ্ঠানের দায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা।

গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বন্ধের কারণ হিসেবে সরকার জানায়, কারখানাগুলোতে অর্ডার না থাকা ও ব্যাংকে ঋণখেলাপি থাকায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, “কারখানা এলাকায় কোনো শ্রমিক অসন্তোষ নেই। শান্তিপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন রয়েছে।”

ঢাকা/রেজাউল/টিপু 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়