ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ জুন ২০২৫ ||  আষাঢ় ১০ ১৪৩২

হাসপাতালে মনু মিয়া, জানেন না প্রিয় ঘোড়াটিও মেরে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২০, ১৮ মে ২০২৫   আপডেট: ১২:৪৬, ১৮ মে ২০২৫
হাসপাতালে মনু মিয়া, জানেন না প্রিয় ঘোড়াটিও মেরে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

ঘোড়ায় চেপে গোরখোদকের কাজ করতে যেতেন মনু মিয়া

কারো মৃত্যুসংবাদ শুনলেই তিনি ছুটে যেতেন কোদাল, ছুরি, খোন্‌তা নিয়ে। কবর খুঁড়তেন। এ কাজে তার কোনো বিরাম ছিল না, ছিল না এতটুকু অবহেলা। মানুষের অন্তিম যাত্রাকালে সহযোগিতার এই মহান দায়িত্ব তিনি নিজেই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তিনি মনু মিয়া। ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ তার আরেক পরিচয়। এই নামেও তিনি পরিচিত। 

কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা ইটনার আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মনু মিয়া। ৬৭ বছরের জীবনের ৪৯ বছর তিনি গোরখোদকের কাজ করেছেন। এ জন্য তিনি পারিশ্রমিক কিংবা উপহার কখনও নেননি। নিজ হাতে খুঁড়েছেন ৩ হাজার ৫৭টি কবর। মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ সেবাপরায়ণতার এক অনন্য প্রতীক হয়ে ওঠা মনু মিয়ার বাহন ছিল একটি ঘোড়া। এই ঘোড়ার পিঠে চেপেই তিনি আশপাশের গ্রামে গোরখোদকের কাজ করতে যেতেন। সম্প্রতি দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঘোড়াটি মারা গেছে। কিন্তু সে কথা মনু মিয়াকে বলতে পারছে না পরিবার। 

মনু মিয়ার শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা ধরনের জটিল রোগ। আরোগ্য পেতে ভর্তি হয়েছেন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা চলছে নিঃসন্তান মানুষটির। সঙ্গে আছেন স্ত্রী রহিমা বেগম। শোকাতুর, অসহায় এই নারী বুঝতে পারছেন না মনু মিয়া কীভাবে প্রিয় ঘোড়া হারানোর শোক সইবেন? তার চেয়েও বড় জিজ্ঞাসা- মনু মিয়ার কোনো শত্রু নাই। এমন পাষণ্ডের কাজ করল কে?

আরো পড়ুন:

মনু মিয়া নিঃসন্তান। ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি থাকায় বাড়িতে ঘোড়াটিকে দেখে রাখার কেউ ছিল না। বাড়িশূন্য থাকায় নির্মম বর্বরতার শিকার হয়েছে ঘোড়াটি। শুক্রবার (১৭ মে) সকালে মিঠামইন উপজেলার হাশিমপুর ছত্রিশ গ্রামবাসী মাদরাসার পাশের জমিতে ঘোড়াটির লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এগিয়ে গিয়ে তারা দেখতে পান বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে মনু মিয়ার প্রিয় ঘোড়া। 

প্রত্যক্ষদর্শী এসএম রিজন জানান, মনু মিয়ার ঘোড়ার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তারা ওই গ্রামে যান। গ্রামবাসী তাদের জানান, একই গ্রামে শাওনের একটি স্ত্রী ঘোড়া রয়েছে। ওই স্ত্রী ঘোড়াটিকে মনু মিয়ার ঘোড়াটি আঘাত করেছিল। সেই অপরাধে ঘোড়াটির বুকে তারা ধারালো অস্ত্রের আঘাত করলে ঘোড়াটি মারা যায়। কিন্তু এ কথা তারা মনু মিয়ার স্ত্রীকে জানালেও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় মনু মিয়াকে জানানো হয়নি। বিষয়টি গোপন রেখেছেন। 

রহিমা বেগম মুঠোফোনে বলেন, ‘‘তিনি (মনু মিয়া) জীবনে কারো কোনো ক্ষতি করেননি। এতোদিন জানতাম, তাকে মানুষ ভালোবাসে। কিন্তু উনার অসুস্থ অবস্থায় কি করে তার প্রিয় ঘোড়াটিকে মানুষ মেরে ফেলতে পারলো! এই খবরটা তাকে  দিলে সে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারবে না।’’

একজন নিখুঁত সুদক্ষ গোরখোদক হিসেবে মনু মিয়ার সুনাম রয়েছে। আশপাশের দু’দশ গ্রামের মানুষ তাকে এক নামে চেনে। কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি কারো মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন তিনি সেখানে ছুটে গিয়ে কবর খুঁড়ে দিয়েছেন। বয়স হওয়ায় জমি বিক্রি করে তিনি ঘোড়াটি কিনেছিলেন। 

এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত সরকার বলেন, ‘‘মিঠামইন থানার ওসিকে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

রুমন//

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়