গাজীপুরে আলোচনার কেন্দ্রে ‘ভাওয়াল রাজা’
রফিক সরকার, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম
গাজীপুরের লোহাগাছ গ্রামে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন ভাওয়াল রাজাকে দেখতে
নাম তার ‘ভাওয়াল রাজা’। নাম ধরে ডাকলেই মাথা ঘুরিয়ে তাকায় সে। চোখে কৌতূহল, পায়ে রাজকীয় ভঙ্গি। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লোহাগাছ গ্রামে মাস্টার এগ্রো নামের খামারে প্রতিপালিত হচ্ছে ‘ভাওয়াল রাজা’ নামের এই দর্শনীয় ষাঁড়। ওজন ১২০০ কেজি।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গাজীপুরে এখন আলোচনার কেন্দ্রে লোহাগাছ গ্রামের ‘ভাওয়াল রাজা’।
খামারটির মালিক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘‘তিন বছর আগে মাত্র ৮৫ হাজার টাকায় ষাড়টি কিনেছিলাম। প্রথমে সাধারণই মনে হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তার চলাফেরা, আচরণ আর ভাবসাব দেখে মনে হলো এটি আর দশটা গরুর মতো নয়। তখনই নাম দিই-ভাওয়াল রাজা।’’
তিনি বলেন, ‘‘সেই নামই হয়ে ওঠে তার পরিচয়। ষাড়টিকে বড় করতে কোনো কৃত্রিম বা ক্ষতিকর উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি। দেশীয় খাবার খুদের ভাত, ঘাস, ভুসি আর ছোলা দিয়ে রাজাকে পোষা হয়েছে। কোনো স্টেরয়েড, হরমোন বা কৃত্রিম মোটাতাজাকরণ প্রয়োগ করা হয়নি।’’
ভাওয়াল রাজার একান্ত সঙ্গী ও পরিচর্যাকারী জুয়েল বলেন, ‘‘ও আমার সন্তানের মতো। দিনে তিনবার খাওয়ানো, নিয়মিত গোসল, শরীর পরিষ্কার- সব নিজের হাতে করি। আমি ডাক দিলে সাড়া দেয়, আমার সঙ্গে খেলে। এখন ঈদে বিক্রি হবে। মনে হচ্ছে নিজের সন্তানকে হারিয়ে ফেলছি।’’
জুয়েল জানান, ভাওয়াল রাজার সঙ্গে তার সম্পর্ক শুধুই কাজের নয়, আবেগেরও। অনেক সময় খামারে নিঃসঙ্গ মুহূর্তে রাজাকেই সঙ্গী মনে করেন তিনি।
ভাওয়াল রাজাকে ঘিরে এখন গাজীপুরের লোহাগাছ গ্রাম বেশ আলোচনায়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন রাজাকে দেখতে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন, কেউ আবার দরদাম করছেন।
মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘‘সাড়ে ৮ লাখ টাকা দাম চেয়েছি। তবে রাজাকে এমন কারও হাতেই দিতে চাই, যিনি ওকে স্নেহ করবেন, বোঝেন পশু মানে শুধু মাংস নয় এটা একটা জীবন, একটা ভালোবাসা।’’
ভাওয়াল রাজা বিক্রি হবে-এটাই বাস্তবতা। কিন্তু যারা তাকে পালন করেছেন, তাদের চোখে এ যেন রাজাকে বিদায় দেওয়ার মুহূর্ত। সে চলে যাবে, কিন্তু রেখে যাবে একটি ব্যতিক্রম সম্পর্কের গল্প।
ঢাকা/টিপু