ঢাকা     রোববার   ১৩ জুলাই ২০২৫ ||  আষাঢ় ২৯ ১৪৩২

খুলনায় নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হয়নি পশুর চামড়া, ব্যবসায়ীরা হতাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ৮ জুন ২০২৫   আপডেট: ১০:০৫, ৮ জুন ২০২৫
খুলনায় নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হয়নি পশুর চামড়া, ব্যবসায়ীরা হতাশ

খুলনা নগরীর পওয়ার হাউজ মোড়ে গরুর চামড়া বিক্রি করছেন এক মৌসুমী ব্যবসায়ী

খুলনায় অনেকটাই বেহাল অবস্থা চামড়া ব্যবসার। এই নগরীতে পশুর চামড়া বিক্রিতে হতাশার ছাপ দেখা গেছে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এখানে বড় গরুর চামড়া প্রতি পিচ বিক্রি হয়েছে ৩০০-৪০০ ও ছোট গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৫০-২০০ টাকায়। চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, ট্যানারি ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে দাম নিয়ে কোনো সমন্বয় না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারো কোরবানি ঈদের দিন শনিবার (৭ জুন) খুলনার শেখপাড়ার পওয়ার হাউজ মোড়ে পশুর চামড়া কেনাবেচা হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে এই কেনাবেচা। ভ্রাম্যমাণ ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে ওঠে পাওয়ার হাউজ মোড়। মহানগরীতে স্থায়ী কোনো চামড়ার বাজার না থাকায় ক্রেতা বিক্রেতারা প্রতিবছরের মতো এবারো চামড়া কেনাবেচা করেন রাস্তার ওপর।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা না পাওয়ার কারণে চাহিদা মতো অনেক ব্যবসায়ী চামড়া কিনতে পারেননি। এমনকি খুলনা অঞ্চলের কয়েকটি ট্যানারি কর্তৃপক্ষ সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনার ব্যাপারে মূল্য নিয়ে লুকোচুরির কারণেও তারা কাঙ্খিত চামড়া কিনতে পারেননি। তাদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে অনেক কম দামে চামড়া বিক্রি করছেন।

আরো পড়ুন:

হাফেজ শফিকুল ইসলাম নামে একজন মাদরাসা শিক্ষক বলেন, “শেখপাড়ার চামড়া পট্টিতে বিক্রির জন্য কয়েকটি গরুর চামড়া নিয়ে এসেছিলাম। কাঙ্ক্ষিত দাম পাইনি। ফলে চামড়া পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।” 

তিনি বলেন, “ছোট গরুর চামড়া ১৫০-২০০টাকা এবং বড় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।” চামড়ার প্রকৃত দাম না পাওয়া গেলে এতিম খানা ও মাদরাসা চালাতে অসুবিধা হবে বলে জানান তিনি। 

পাওয়ার হাউজ মোড়স্থ চামড়া ব্যবসায়ী মো. নুর ইসলাম সরদার বলেন, “ঢাকায় নিয়ে চামড়া বাকি বিক্রি করলে দাম বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু বড় পুঁজি নেই আমাদের, এ কারণে এ বাজারে নগদ কিনে এখানেই নগদ বিক্রি করতে হয় চামড়া। এ থেকে যা লাভ হয়, তাতেই চলে।” তিনি জানান, ১০ হাজার টাকা লাভের দরকার নেই, ২০০-১০০ টাকা হলেই তারা খুশি। তারা প্রতিটি বড় গরুর চামড়া ৪০০ টাকায় কিনে ৫০০-সাড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

চামড়া ব্যবসায়ী ভুট্টু সরকার জানান, খুলনায় এবার সরকারের বেধেঁ দেওয়া দামে চামড়া বেচাকেনা হয়নি। পছন্দসই দামে চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, বাজারে দাম ছিল না। তারা বেশি দামে চামড়া কিনে লাভে বিক্রি করতে পারবেন না। ছোট গরুর চামড়া ১৫০-২০০ এবং বড় গরুর চামড়া ৪০০ টাকায় কিনেছেন। তিনি ১০০ পিস চামড়া কিনেছেন বলেও জানান।

খুলনা জেলা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মিন্টু ঢালী হতাশা প্রকাশ করে জানান, ট্যানারি এসোসিয়েশন ও এক্সপোর্ট গুডস এসোসিয়েশনের মধ্যে সরকার ঘোষিত দাম নিয়ে কোনো সমন্বয় ছিল না। কোন রেটে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনবেন, সেটি তাদের ব্যাপার উল্লেখ করে ট্যানারি থেকে জানানো হয়, তাদের নিজস্ব রেটে হলে তারা কিনবেন, অন্যথায় কিনবেন না। এতেই ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে পড়েন। 

তিনি আরো জানান, খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের অনেক টাকা ঢাকার ট্যানারি মালিক ও আড়তদার কাছে বকেয়া রয়েছে। এই ঈদেও তারা কেউ টাকা পরিশোধ করেননি। ফলে, এ বছর চাহিদা মতো চামড়া ক্রয়ের টাকা ছিল না কারো কাছে। ব্যাংকগুলোও চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয় না। ফলে তারা চাহিদা মতো চামড়া কিনতে পারেননি।

মিন্টু ঢালী জানান, খুলনায় চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য স্থায়ী কোনো চামড়ার মার্কেট না থাকার কারণে তারা সড়কের ওপর অস্থায়ীভাবে চামড়া কেনাবেচা ও প্রক্রিয়াজাত করতে বাধ্য হন। এবার প্রশাসন রাত ৮টার মধ্যে সব কাঁচা চামড়া শেখপাড়া এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়। যদিও অনেক অনুরোধের পর তারা রাত দশটা পর্যন্ত সময় দেন। এ কারণেও অনেক চামড়া তারা কিনতে পারেননি। সব মিলে এবার খুলনার চামড়ার বাজার চরম মন্দা গেছে। এতে করে সাধারণ ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড লোকসানের মুখে পড়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়