কক্সবাজার সৈকতে মৃত্যু
ছেলে ও নাতির মৃত্যুর খবর এখনও জানেন না আবুল কালাম
রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

কক্সবাজার সৈকতে পানিতে ডুবে ছেলে এবং নাতির মৃত্যুর খবর এখনও জানেন না আবুল কালাম। ৮০ বছরের এই বৃদ্ধ জানেন তার ছেলে শাহানুর আলম (৫৩) এবং নাতি ইফতেশাম আলম সিফাত (২০) গুরুতর অসুস্ত। তাদের রাজশাহীতে আনা হচ্ছে।
স্বজন, প্রতিবেশী, এমনকি মিডিয়ার কল্যাণে দেশবাসীর অজানা নয় এমন শোকাতুর ঘটনার কথা। এ কারণে অনেকেই বাড়ি আসছেন। সবাইকে সাবধান করে দেওয়া হচ্ছে, ছেলে ও নাতির মৃত্যুর কথা আবুল কালামকে যেন জানানো না হয়। বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুশোক সইতে পারবেন না বলেই এই সতকর্তা।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহীর মহিষবাথান পূর্বপাড়া আবুল কালামের বাড়ি গিয়ে এমন করুণ দৃশ্য দেখা যায়। এর আগে, সোমবার বেলা ৩টার দিকে কক্সবাজারের কলাতলী সৈকতের সায়মন বিচ পয়েন্টে সাগরের পানিতে ডুবে মারা যান আবুল কালামের ছেলে এবং নাতি।
শাহানুর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) মোহনপুর জোন কার্যালয়ের সহকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সিফাত অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
শাহানুর আলমের স্ত্রী ইয়াসমিন আরা ঢাকায় চাকরি করেন। তাদের দুই ছেলে। ছোট ছেলে ইফতেখার আলম রাহাত (১৬) রাজশাহীতে স্কুলশিক্ষার্থী। স্ত্রী ঢাকা থাকলেও শাহানুর দুই ছেলেকে নিয়ে রাজশাহীতে বাস করতেন।
শাহানুরের ভাতিজা রাকিবুল আলম জানান, গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতেও স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে কক্সবাজার গিয়েছিলেন শাহানুর। সেবার ফিরে এলেও এবার ফিরলেন লাশ হয়ে। ঈদের আগে ৪ জুন স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় যান তিনি। পরদিন তারা যান কক্সবাজার। সোমবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় তাদের ঢাকা ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সাগরের ঢেউ কেড়ে নেয় বাবা ও ছেলেকে।
সেদিন দুপুরে কলাতলী সৈকতের সায়মন বিচ পয়েন্টে গোসল করতে গিয়ে সাগরে তলিয়ে যেতে থাকেন সিফাত। তাকে বাঁচাতে ঝাঁপ দেন শাহানুর, কিন্তু তিনিও স্রোতের টানে ডুবে যান। পরে লাইফগার্ডের সদস্যরা দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
রাকিবুল জানান, সোমবার সন্ধ্যায় শাহানুর ও সিফাতের লাশ নিয়ে রাজশাহীর পথে রওনা হওয়ার কথা ছিল ইয়াসমিন আরা ও ছোট ছেলে রাহাতের। কিন্তু তারা লাশ নিয়ে ফিরতে পারেননি। মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে তারা কক্সবাজার থেকে রওনা হন। অন্তত ১৩ ঘণ্টার পথ। তাই আশা করা হচ্ছে, বুধবার ভোররাতে লাশ দুটি রাজশাহী পৌঁছাবে। এরপর সকালে মহিষবাথান গোরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হবে বাবা ও ছেলেকে।
শাহানুর আলমের ছোট ভাই একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ভিডিও এডিটর মনসুর আলম জানান, বাবা আবুল কালাম কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। সাতটি কেমো দেওয়া হয়েছে, শরীরে রয়েছে নানা জটিলতা। এর মধ্যেই গত বছরের ১৫ আগস্ট মারা গেছেন মা আলিয়া খাতুন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েছেন আবুল কালাম।
মনসুর আলম বলেন, ‘‘বাড়িতে দুটি লাশ আসছে। বাবাকে কীভাবে বলব, আমার ভাই আর ভাতিজা নেই, তা আমরা কেউই বুঝে উঠতে পারছি না।’’
শিরিন//