ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

তবুও থেমে নেই জীবন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ২৮ জুন ২০২৫   আপডেট: ০৮:৪৭, ২৮ জুন ২০২৫
তবুও থেমে নেই জীবন

অন্ধ বাউল শিল্পী আসলাম হোসেন

বাউল শিল্পী আসলাম হোসেন চোখে দেখতে পান না। বাবা অসুস্থ, তাই সংসারের ভার পড়েছে তারই কাঁধে। গান করেই দিন চলে তার। তবে আগের মত এখন আর কেউ বাউল গান শুনতে চান না। তাই গানের আসরও জমে না। অন্ধ বাউল আসলামের আয় উপার্জন বলতে গেলে একেবারেই নেই। একে অন্ধ, তার উপরে পরিবারের চাপ কাঁধে নিয়ে দিশেহারা এই শিল্পী। 

কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের বটতৈল গ্রামের আজাদ সর্দারের ছেলে অন্ধ বাউল আসলাম হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে বাবা আজাদ সর্দার শরীরের ব্যথা ও হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছেন। বর্তমানে তিনি কানেও খুব একটা ভালো শুনতে পান না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হারিয়েছেন কাজের সক্ষমতাও। অভাবের সংসারে যেখানে ঠিকমতো খেতেই পান না, সেখানে চিকিৎসা যেনো বিলাসিতা। তাই বিনা চিকিৎসায় পড়ে আছেন তিনি।

সংসারের টুকিটাকি কাজের ফাঁকে প্রতিবেশীদের সাথে প্রতিনিয়ত গানের আসর বসাতো আসলাম। এভাবেই এলাকাবাসী ভালোবেসে তার নাম দিয়েছেন বাউল আসলাম। এখন তিনি এই নামে পরিচিত। 

বাউল আসলাম বলেন, “জন্ম থেকেই অন্ধ। অনেক ডাক্তার, কবিরাজ এবং সর্বশেষ খুলনা শিরোমণি চক্ষু হাসপাতালে চোখের অপারেশন করেও দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাইনি। আমি গান শুনতে এবং গাইতে ভালোবাসি।” 

দেখতে না পেলেও গান-বাজনার ছন্দের তালে তালে এবং মেধার জোরে দোতারা বাজাতে পারেন আসলাম। এভাবেই গান-বাজনার আসর জমিয়ে মনের শান্তিও মেলে, আবার কিছু উপার্জনও হয়। তা দিয়েই কোনো মতে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে আছেন এই শিল্পী। একবেলা খাচ্ছেন তো আরেক বেলা না খেয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে তিন মাস পর পর আড়াই হাজার টাকা পান। এতে তো জীবন চলে না!

শহর থেকে গ্রাম, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটে লাঠির সাহায্যে একাই ঘুরে বেড়ান আসলাম। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সংগীত পরিবেশন করে অল্প কিছু রোজগার হয়।

তিনি জানান, তার বাবা অনেক বছর ধরে কোন কাজ কর্ম করতে পারে না। তাকেই চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়। তিনি ছাড়া বাবাকে দেখার মত কেউ নেই। অর্থের অভাবে তার পিতার চিকিৎসা এখন বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘অন্ধ হয়েই আসলাম জন্ম গ্রহণ করেছে। পরিবার বলতে পিতা ও মাতা ছাড়া সংসারে তেমন কেউ নেই। আগে আসলামের পিতা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় সংসারে হাল ধরেছেন আসলাম। হাট বাজারে গান করেই তার সংসার চলছে। তাকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোছা. সেলিনা খাতুন বলেন, “অসুস্থ পিতাকে নিয়ে অন্ধ আসলাম কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছে। ইউনিয়ন পরিষদে কোন রকম সাহায্যে সহযোগীতা আসলে তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হয়।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়