ফেনীতে ছাত্র হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ২২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
ফেনী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
মাহবুবুল হাসান মাসুম
ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে কলেজছাত্র মাহবুবুল হাসান মাসুমকে (২৫) হত্যার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ ২২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ফেনী সদর আমলী আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ আছে ১৫৬ জনের, অজ্ঞাতনামা ৬৫ জন। অভিযুক্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ২২টি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন মোট ৬ হাজার ১৯৯ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ১৯৯ জনের নাম আছে এজাহারে, বাকি ৪ হাজার জন অজ্ঞাত। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১১ জন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মো. হাবিবুর রহমান আরো জানান, গত বছরের ৪ আগস্ট মহিপালে মাসুম হত্যাকাণ্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে সরাসরি নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মূলত, পুলিশের তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তারাই চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এখানে কে কোন রাজনৈতিক দলের, তা বিবেচনা করা হয়নি।
গত বছরের ৪ আগস্ট ফেনী শহরের মহিপালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকালে গুলিবিদ্ধ হন মাসুম। ৭ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
মাসুম সোনাগাজীর চরচান্দিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি ছাগলনাইয়া আব্দুল হক চৌধুরী কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন।
হত্যাকাণ্ডের এক মাস পর ৪ সেপ্টেম্বর নিহতের ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় ১৬২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন— ফেনী সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল, সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, ছাগলনাইয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, দাগনভূঞার সাবেক চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, পরশুরামের সাবেক মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল, সোনাগাজীর সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম পিটু ও জিয়া উদ্দিন বাবলু।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত এজাহারনামীয় ১২ জন এবং সন্দেহভাজন ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে মুরাদ হাসান বাবুসহ তিনজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার বাদী ও নিহতের ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেছেন, “আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই। ৪ আগস্ট মহিপালে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলি মাসুমের মাথায় লাগে। সহপাঠীরা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিন দিন আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে আমার ভাই না ফেরার দেশে চলে যায়।”
ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/রফিক