শহীদ সাদের মায়ের আকুতি
‘এখন আমার মোবাইলে ওর ফোন আসে না’
আরিফুল ইসলাম সাব্বির, সাভার || রাইজিংবিডি.কম
জুলাই আন্দোলনে শহীদ সাদের মা জাহানারা বেগম, ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম আবীর ও বাবা মো. শফিকুল ইসলাম
ঘরে তাকে তাকে সাজিয়ে রাখা বই। টেবিলে খাতা, আর নানা অর্জনের মেডেলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। প্রতিটি কোনায় থাকা স্মৃতি চিহ্নগুলো পরিবারকে আফিকুল ইসলাম সাদের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ঢাকার ধামরাইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ এই শিক্ষার্থীর স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছেন তার মা-বাবা। ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা তারা। ছেলে হারানোর বেদনায় দিন কাটে তাদের। মা-বাবার একটাই দাবি, ছেলে হত্যার বিচার।
পুলিশ বলছে, মামলায় অন্তত অর্ধ শতাধিক আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিগগিরই দেওয়া হবে তদন্ত প্রতিবেদন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকালে ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি স্কুল অ্যন্ড কলেজ গেটের সামনে বিক্ষোভ চলছিল। এসময় কলেজছাত্র সাদ গুলিবিদ্ধ হন। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনদিন পর ৮ আগস্ট সকালে তিনি মারা যান।
সাদ সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ধামরাইয়ের রথখোলা এলাকায় বাবা মো. শফিকুল ইসলাম, মা জাহানারা বেগম এবং ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম আবীরের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দড়গ্রাম এলাকায়।
আফিকুল ইসলাম সাদ
ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সাদের মা জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, ‘‘ও যতক্ষণ বাইরে থাকত, কিছুক্ষণ পরপরই কল দিয়ে খোঁজ নিত, নিজের খোঁজ জানাত। এখন আমার মোবাইলে ওর কোনো ফোন আসে না।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার সন্তানকে আল্লাহ শহীদের মর্যাদা দান করেছেন। আল্লাহ যেন আমার সন্তানকে জান্নাতে নেয়।”
শোককে ধারণ করে ছেলে হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবি করেন সাদের বাবা মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘যে ফ্যাসিস্টরা তাকে শহীদ করেছে, আমাদের বুক খালি করেছে, আমার সন্তানকে নিয়ে নিয়েছে তাদের বিচার যেন এই বাংলার মাটিতে হয়।”
সাদকে হত্যার ঘটনায় গত বছরের ২১ আগস্ট ধামরাই থানায় মামলা করেন তার নানা আজিম উদ্দিন। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৮২ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ৮০-৯০ জনকে।
এ মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবীর মোল্লাসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। অন্যদের গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান।
ধামরাই থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সাদ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৫০ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন। শিগগিরই মামলার প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।”
ঢাকা/মাসুদ