ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ডিলারের বাড়িতে বিতরণ হচ্ছে খাদ্যবান্ধবের চাল!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ২৬ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ০৯:৩০, ২৬ আগস্ট ২০২৫
ডিলারের বাড়িতে বিতরণ হচ্ছে খাদ্যবান্ধবের চাল!

নিজ বাড়ি থেকে খাদ্যবান্ধবের চাল বিতরণ করছেন ডিলার জাকির হোসেন

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় ডিলারের বাড়ি থেকে বিতরণ করা হচ্ছে হতদরিদ্র পরিবারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সুফলভোগীরা।

হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে স্বল্প মূল্যে চাল বিতরণ করতে সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করে। প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন ১৫ টাকা কেজি দরে। এজন্য প্রথমে সুফলভোগির তালিকা প্রণয়ন করে তাদেরকে একটি করে কার্ড দেওয়া হয়। কার্ডের বিপরীতে প্রতি মাসে ৩০ কেজি হারে চাল কিনতে পাচ্ছেন কার্ডধারীরা। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জন্য ৩০ কেজি ওজনের বস্তাও করা হয়েছে। যেন ডিলাররা ওজনে কম দিতে না পারে। প্রতিটি কার্ডধারীর জন্য ৩০ কেজির একটি বস্তা বরাদ্দ থাকে।

চাল বিতরণের জন্য সরকার প্রতিটি ইউনিয়নে নুন্যতম তিন জন করে ডিলার নিয়োগ করে। ডিলাররা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন করেন। পরে উপজেলা কমিটি যাচাই বাছাই করে ডিলার নিয়োগ করে থাকেন। ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো- খাদ্য দ্রব্য রাখা যায় এমন পরিবেশ বান্ধব গুদাম এবং তা অবশ্যই স্থানীয় বাজার বা দৃষ্টিনন্দন ও জনবান্ধব স্থানে হতে হবে।

ডিলার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কার্ডধারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে জনবান্ধব স্থানে ডিলার পয়েন্ট তথা গুদাম থাকতে হবে। গুদাম ঘর অবশ্যই মেঝেসহ পাকা হতে হবে। যেন খাদ্যদ্রব্য নষ্ট না হয় এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব না থাকে। ডিলার নিয়োগের আগে যাচাই বাছাই কমিটি সরেজমিনে এসব গুদাম তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করে থাকেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা ডিলার নিয়োগ বাছাই কমিটির উদাসীনতায় বাড়িকেও গুদাম হিসেবে দেখানো আবেদনকারীকে টাকার বিনিময়ে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যার সত্যতা মিলেছে উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের বলাইরহাট পয়েন্টে। 

এ পয়েন্টের জন্য জাকির হোসেন নামে একজন রড সিমেন্ট বিক্রেতাকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। স্থানীয় বলাইরহাট পয়েন্টে তার গুদাম না থাকায় তিনি নিজ বাড়ি থেকে খাদ্যবান্ধবের চাল বিতরণ করছেন।

সরেজমিনে সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে বলাইরহাট পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, নিজ বাসস্থানের একটি টিনশেড ঘরের মেঝেতে ত্রিপলের উপর রাখা হয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সরকারি চাল। ইঁদুর চালের বস্তা কেটে ফেলায় অনেকগুলো বস্তা থেকে চাল পড়ে যাচ্ছে। সেখান থেকেই কার্ডধারীদের মাঝে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। 

চলতি মাসেই আগের ডিলারকে বাতিল করে নতুনভাবে জাকির হোসেনকে নিয়োগ দেয় খাদ্য বিভাগ। সোমবার ছিল এ ডিলারের চাল বিক্রির প্রথম দিন। উদ্বোধন করা হয় তার বাড়ি থেকেই।

চাল নিতে আসা সুফলভোগী প্রফুল্ল বর্মন বলেন, “আগের ডিলার বলাইরহাট বাজার থেকে চাল বিক্রি করতেন। নতুনভাবে নিয়োগ পাওয়া জাকির হোসেন নিজ বাড়ি থেকে বিক্রি করছেন। মূল সড়ক থেকে তার বাড়ি যাবার রাস্তাটি কাঁচা। তাই চালের বস্তা পরিবহনে গাড়ি পাওয়া যায় না। বহন করাও কিছুটা কষ্টের। তবুও কম দামের চাল, তাই আসতেই হবে।”

বাড়িতে তৈরি গুদামে ত্রিপল বিছিয়ে রাখা হয়েছে খাদ্যবান্ধবের চাল।


চাল বিক্রি পয়েন্টে আসা গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য শ্যামলী রানী বলেন, “এ পয়েন্টে নতুন ডিলার আমাদেরকে ডেকেছেন উদ্বোধনের জন্য। এসে দেখি তার পয়েন্টটা নিজ বাড়িতে নিয়েছেন। এটা ঠিক না। সুফলভোগীদের সুবিধার্থে পয়েন্ট হওয়া দরকার ছিল বাজারে। বিষয়টি উপজেলা খাদ্য বিভাগকে অবগত করা হবে।”

ডিলার জাকির হোসেন বলেন,     ‘‘আগে কখনই খাদ্য বিভাগের ডিলার বা ব্যবসা করিনি। এবারই প্রথম খাদ্য বিভাগে লাইসেন্স করে আবেদন করেছি এবং নিয়োগ পেয়েছি। আমার পয়েন্টে ৫২৬টি কার্ডের বিপরীতে ৫২৬ বস্তা (প্রতি বস্তা ৩০ কেজি) চাল রয়েছে। বাড়ির এ ঘরটি গুদাম। যা উপজেলা বাছাই কমিটি দেখে গিয়ে আমাকে অনুমোদন করেছেন। যদি বাড়িতে নেওয়া অপরাধ হয়, তবে বাজারেও গুদাম আছে, সেখানে নেওয়া হবে।”

কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল হক বলেন, “বাড়ি থেকে খাদ্যবান্ধবের চাল বিক্রি বা সংরক্ষরণ করার কোন নিয়ম নেই। কেউ করে থাকলে তা তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বলাইরহাট পয়েন্টের ডিলার না বুঝে নিজ বাড়িতে নিয়েছে। আমরা তাকে সরিয়ে নিতে বলেছি। মঙ্গলবার থেকে বাজারের গুদাম হতে তাকে চাল বিক্রি করতে বলা হয়েছে।”

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, “জনবান্ধব স্থানের গুদাম ছাড়া বাড়িতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল সংরক্ষণ বা বিতরণের কোন নিয়ম নেই। কেউ করে থাকলে তা তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/সিপন/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়