ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সাংবাদিককে অপহরণ করে নির্যাতন, প্রতিবাদে ‍পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও

রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আপডেট: ২০:০৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সাংবাদিককে অপহরণ করে নির্যাতন, প্রতিবাদে ‍পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও

রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে অপহরণের পর নির্যাতনে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয় ঘেরাও করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এ সময় জড়িতদের গ্রেপ্তারে তিনদিনের আল্টিমেটাম দেন তারা।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করে তারা।

আরো পড়ুন:

এতে  রংপুর সাংবাদি ইউনিয়ন- আরপিইউজে, প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব , রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ  দুই শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন।

রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেকের সভাপতিত্বে  ও সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নানের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন,  ভুক্তভোগী রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক সমকালের ব্যুরো প্রধান স্বপন চৌধুরী, সময় টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান নাজমুল আলম নিশাত, দৈনিক প্রথম খবরের নির্বাহী সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বাবলা, রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশিদ জীবন, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান জুয়েল, এখন টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান মোকাররম হোসাইন প্রমুখ।

তারা অভিযোগ করে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ উপস্থাপন করে মামলা দেওয়া হয়েছে। মাত্র দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ দিয়ে শেয়ার করছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে মামলা করার চেষ্টা করছে। সিটি করপোরেশন মাত্র তিনজনকে আইওয়াশ বদলি করে দায় সেরেছে। এটা উদ্বেগজনক।

পরে সাংবাদিকদের ঘেরাও কর্মসূচিতে আসেন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী। ঘেরাও কর্মসূচি থেকে তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এতে আসামিদের গ্রেপ্তারে তিনদিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। দাবি না মানলে ধারাবাহিক আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিকরা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব একুশে টেলিভশন, দৈনিক সংবাদ ও বাংলা ট্রিবিউনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক লিয়াকত আলী বাদলকে একটি প্রতিবেদনের জেরে গত ২১ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার দিকে নগরীর কাচারীবাজার থেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে রকি নামের এক যুবকের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী অপহরণ করে। তারা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিউজ করার জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলে।

পরে তারা সাংবাদিক বাদলকে সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকের সামনে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে তাকে টেনে হেচড়ে নামিয়ে নির্যাতন করতে করতে নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের সামনে নিয়ে নির্যাতন ও গালিগালাজ করতে থাকেন। সাংবাদিকরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে সাংবাদিকরা চলে আসার জন্য তৈরি হলে সেখানে সিটি করপোরেশনের চিহ্নিত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রধান ফটক আটকে দিয়ে আবার নির্যাতন করেন।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, এ ঘটনায় সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদুল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা, ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজু, সাবেক কাউন্সিলর লিটন পারভেজসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০-২৫ জন অজ্ঞাতনামার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ ও ৬ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কিন্ত অন্যান্য আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফেসবুকে লাইভ করছে। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের নামে বিষোদাগার করছে। আসামিরা থানায় গিয়ে সাংবাদিকদের নামে মামলা করার জন্য চেষ্টা করছে এবং নানাভাবে মিথ্যাচার, হুমকি ধামকি দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। এতে সাংবাদিক সমাজ গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন এবং উৎকণ্ঠিত ও নিরাপত্বাহীনতায় ভুগছেন।

ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে নামীয় এবং অজ্ঞাত আসামিদের আগামী তিনদিনের মধ্যে গ্রেপ্তার এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা না হলে ধারাবাহিকভাবে কঠোর কর্মসূচিতে পালন করা হবে।

এ বিষয়ে রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, “আগামী তিনদিনের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে এবং সিটি করপোরেশনের জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করা না হলে ধারাবাহিক আন্দোলনে যাওয়া হবে।”

ঘেরাওস্থলে গিয়ে পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী গ্রহণ করে বলেন, “এরই মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে নেপথ্যের কয়েকজনের নামও এসেছে। বাকী আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে চার্জশিট দেওয়া হবে।”

গত ১৭ সেপ্টেম্বর লিয়াকত আলী বাদল দৈনিক সংবাদে ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধার নামে অটোর লাইসেন্স, ৫ কোটি টাকার বাণিজ্যের পাঁয়তারা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। ওই সংবাদের জেরে তাকে অপহরণ করে নিয়ে মারধোর ও তার প্রকাশিত সংবাদের জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করানোর চেষ্টা করা হয়।

এ দিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনার জেরে সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজু, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির শান্ত  এবং সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা তম্ময়কে বদলী করা হয়েছে।

ঢাকা/আমিরুল/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়