ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মুন্সীগঞ্জে ৬৩ সহকারী শিক্ষকের বেতন হঠাৎ বন্ধ

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ৮ নভেম্বর ২০২৫   আপডেট: ০৮:৪২, ৮ নভেম্বর ২০২৫
মুন্সীগঞ্জে ৬৩ সহকারী শিক্ষকের বেতন হঠাৎ বন্ধ

উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়, মুন্সীগঞ্জ।

কোন প্রকার নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ করেই মুন্সীগঞ্জ সদরের ৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৩ জন সহকারী শিক্ষকের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে শিক্ষকরা চলতি মাসে বেতন উত্তোলন করতে পারেননি।

গত অক্টোবর মাসের বেতন না পাওয়ায় ওইসব শিক্ষকদের পরিবারে নেমে এসেছে অনামিশার অন্ধকার। পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

এসব শিক্ষক ২০০৮ ও ২০০৯ সালে সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। ১০ বছর পূর্তিতে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তারা উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হন। সেই মোতাবেক নিয়মিত তাদের বেতন হয়ে আসছিল। দীর্ঘদিন সেই সুবিধাভোগ করে এলেও পূর্ব ঘোষণা বা লিখিত কোনো নির্দেশনা ছাড়াই হঠাৎ করেই অক্টোবর মাসের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে তাদের।

এদিকে, শিক্ষকদের বেতন বন্ধের কারণ হিসেবে জেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয় ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস একে অপরকে দোষারোপ করছে।

গত বুধবার (৫ নভেম্বর) বেতন বন্ধের কারণ জানতে হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ে গেলে শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিট অফিসার মেহেদী হাসান শরীফ।

এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) শিক্ষকরা জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের বরাবরে ওই অডিট অফিসারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সহকারী শিক্ষকরা।

সদর উপজেলার নৈরপুকুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, চলতি বছরের গত ২০ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রের আলোকে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মেহেদী হাসান শরীফ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে এসব শিক্ষকের উচ্চতর গ্রেড বাতিল হতে পারে বলে জানান। এরপর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে বেতন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। অথচ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা বা লিখিত নোটিশ দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, “চলতি মাসে আমরা গত অক্টোবর মাসের বেতন উত্তোলন করতে গিয়ে দেখি আমাদের বেতন হয়নি। এ বিষয়ে জানতে আমরা শিক্ষা অফিসে গেলে বলা হয় জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের নির্দেশ এসেছে। কিন্তু সেই চিঠি কেউ আমাদের দেখাতে পারেনি।”

মুন্সীগঞ্জ সদরের ইদ্রাকপুর ১নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা খালেদা আক্তার বলেন, “চাকরিতে যোগদানের ১০ বছর পর আমরা উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হই। সেই মোতাবেক আমাদের বেতন হয়ে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই চলতি মাসে বেতন উত্তোলনে গেলে বাঁধে বিপত্তি। অক্টোবর মাসের বেতন হয়নি আমাদের। এ অবস্থায় চলতি মাসে কোনো বেতন তুলতে পারিনি।”

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, “বেতন বন্ধের বিষয়ে জানতে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে গেলে সেখানে দায়িত্বে থাকা অডিটর অফিসার মেহেদী হাসান শরীফ তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। ওই কর্মকর্তা তাদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ পর্যন্ত করেছেন। এমনকি হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে প্রবেশের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।”

মুন্সীগঞ্জ সদরের কোটগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন ইয়াসমিনসহ একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে জানান, বেতন বন্ধের বিষয়ে জানতে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে গেলে সেখানে দায়িত্বে থাকা অডিটর মেহেদী হাসান শরীফ তাঁদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিট অফিসার মেহেদী হাসান শরীফ বলেন, “তাদের সাথে খারাপ আচরণ ও গালাগালি করার দাবি মিথ্যা। তারা উল্টো ২০-২৫ জন নিয়ে এসে আমাকে হুমকি দিয়েছে। অথচ তাদের বেতন আটকে রাখা হয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিসের চিঠির কারণে।”

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মোমিন মিঞা বলেন, “জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের লিখিত চিঠির প্রেক্ষিতে ওইসব শিক্ষকের বেতন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রেড উন্নীতকরণ সমস্যায় বেতন আটকে গেছে তাদের। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ওই শিক্ষকরা আগের গ্রেডে নিয়মিত বেতন পাবেন। এতে ১৫-১৬ দিন সময় লাগতে পারে।”

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মোমিন মিঞাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের বেতন প্রতি মাসের ন্যায় নিয়মিত করে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছি। এতে যেন কোন কালক্ষেপণ করা না হয় সে ব্যাপারেও সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/রতন/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়