ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনে আপত্তি
ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২০ জুলাই) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করে তারা।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘কমিশন না সার্বভৌমত্ব? সার্বভৌমত্ব সার্বভৌমত্ব’, ‘গাজায় যখন মানুষ মরে, মানবাধিকার কী করে?’, ‘মানবাধিকার কমিশন, মানি না মানবো না’, ‘শ্রীলঙ্কা যখন মানেনি, বাংলাদেশও মানবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের কর্মকাণ্ড দেশের নানা সেক্টরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করবে। এজন্য আমরা এর প্রতিবাদে মাঠে নেমেছি। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, সরকার যেন অতিদ্রুত জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সমঝোতা চুক্তি বাতিল করে।
ঢাবি শিক্ষার্থী আবিদ হাসান বলেন, “আমার যে জুলাই অভ্যুত্থান করেছিলাম, তার মূল মোটিভেশন ছিল হাসিনার স্বৈরাচার শাসন। হাসিন তার বিভিন্ন সংস্থা, এজেন্সির মাধ্যমে শাসন করেছিল। আন্তর্জাতিক আধিপত্যবাদী শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো আধিপত্য কায়েম করার জন্য বিভিন্ন দেশে তাদের সংস্থা স্থাপন করে।”
তিনি বলেন, “সম্প্রতি বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা স্থাপন করার মাধ্যমে তারাও এই আধিপত্য কায়েম করতে চাচ্ছে। তাই আমার অন্তবর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এই চুক্তি বাতিল করার জন্য।”
শিক্ষার্থী জিয়াউল হক ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মিশন চালুর বিরোধিতা করার ৪ টি কারণ উল্লেখ করেন। কারণগুলো হলো- সার্বভৌমত্বগত সমস্যা, মূল্যবোধগত সমস্যা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন ও মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি হ্রাস।
তিনি বলেন, “জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় দেশের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। পররাষ্ট্রনীতিতে আমাদের স্বকীয়তা থাকবে না। মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে পার্বত্য চট্টগ্রাম অস্থিতিশীল হবে। পাহাড়ের সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠবে। দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র পরিবর্তন তথা পরিকল্পিত ইহুদীবাদী খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠন তরান্বিত হবে।”
মূল্যবোধগত সমস্যা নিয়ে তিনি আরো বলেন, “জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এলজিবিটিকিউ (সমকামিতা, ট্রান্সজন্ডার ইত্যাদি) এবং পতিতাবৃত্তির স্বীকৃতি ও ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে থাকে, যা বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক মূল্যবোধ ও প্রচলিত আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। ঢাবিসহ স্কুল, কলেজ, মাদরাসার সিলেবাসে তারা এসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করবে। যার কারণে আমরা শিক্ষার্থীরা খুবই উদ্বিগ্ন।”
আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমর্যাদা নিয়ে জিয়াউল হক বলেন, “যেসব দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে সেসব দেশের অন্তর্জাতিক স্ট্যাটাস অত্যন্ত নিম্নমানের। বাংলাদেশে এই অফিস স্থাপিত হওয়ায় দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে! সাধারণত যুদ্ধবিদ্ধস্ত ও চরম অস্থিতিশীল দেশগুলোতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপিত হয়ে থাকে। অথচ বাংলাদেশ ওরকম কোনো অবস্থায় নেই।”
মৃত্যুদণ্ড নিয়ে জিয়াউল হক আরো বলেন, “ধর্ষক কিংবা খুনী যাদের শাস্তি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, এসব অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস থেকে সরকারের উপর চাপ আসবে। ফলে দেশে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে এবং ফরীয়াদীরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী