শেষ পর্যায়ে রাকসুর সংস্কার কাজ, রবিবার থেকেই বসতে পারবেন নির্বাচিতরা
রাবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
রাকসু সংস্কারে ব্যস্ত শ্রমিকরা।
দীর্ঘ ৩৫ পর নানা ‘চড়াই-উৎরাই’ পেরিয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ফলাফল ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয় নির্বাচনী কার্যক্রম; বাকি শুধু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণ।
এবারের রাকসু নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল। নির্বাচনে ২৩টি পদের মধ্যে ভিপি, এজিএসসহ ২০টি পদেই জয়লাভ করেছেন তারা। বাকি তিনটি পদে একজন করে ছাত্রদল প্যানেল, আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেল ও স্বতন্ত্র থেকে জয়লাভ করেছে।
নর্বনির্বাচিত এসব প্রার্থীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে রাকসু ভবন। প্রস্তুত করা হচ্ছে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ সব প্রার্থীর বসার কক্ষ। আগামীকালকের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে রাকসুর দোতলা ভবন। ভবনে রাকসুর ভিপি হিসেবে সবশেষ নিজের কক্ষে বসেছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৯০-১৯৯১ সালের জন্য। পরের বছর নির্বাচন না হওয়ায় ১৯৯১-১৯৯২ মেয়াদেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তারপর আর কোনো ভিপি পায়নি রাকসু ভবন।
গত ৩৫ বছর রাকসু না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন রাকসু ভবনের বিভিন্ন কক্ষে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। পাশাপাশি সাংবাদিকদের সংগঠন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি’র অফিসও ছিল। তারা যে কক্ষটি ব্যবহার করছিল, সেটিই রাকসুর সহ-সভাপতির (ভিপি) কক্ষ। গেল সপ্তাহে সব সংগঠনকেই ভবন ছাড়তে হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল থেকে অন্তত ৫০ জন শ্রমিক একসঙ্গে প্রতিটি কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ঘষামাজার কাজ শুরু করেন। একইসঙ্গে চলে দেয়ালগুলোতে নতুন রঙ করার কাজও।
আব্দুল ওয়াহাব নামের একজন ঠিকাদার জানান, তারা মোট পাঁচজন ঠিকাদার কাজ করছেন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে তাদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে তারা ৫০ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যার মধ্যে তাদের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা কষ্টকর। তারা শুক্রবার সকালের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। আজ (শনিবার) রাতের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
রাকসু ভবন সংস্কারের দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন।
তিনি বলেন, “রাকসু ভবনে থাকা সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্কুলের টিনশেড ভবনে জায়গা দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকেই ভবনটিতে রং করাসহ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। আগামীকাল রবিবারে (১৯ অক্টোবর) মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। আগামীকাল রবিবার থেকেই নবনির্বাচিতরা তাদের কক্ষগুলোতে বসতে পারবেন।”
১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত রাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয়লাভ করেছে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের এস এম সালমান সাব্বির, জিএস নির্বাচিত হয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার।
এবারের নির্বাচনে ২৩টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬ জন। ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিতসহ মোট ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও, সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন প্রার্থী ও হল সংসদ নির্বাচনে ১৫টি পদে মোট ১৭টি হলে ৫৯৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
রাকসু ও সিনেট নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন ছিল।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী