জাহিন স্পিনিংয়ের আর্থিক প্রতিবেদনসহ ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত
নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ফটো
পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জাহিন স্পিনিং পিএলসির ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে নানান অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। তাই কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রমসহ সংশ্লিষ্ট বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এরই ধরাবাহিকতায় ১২টি শর্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে শর্তসাপেক্ষে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে জাহিন স্পিনিং পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক (জেনারেল) মোহাম্মদ আল মাসুম মৃধা, সহকারী পরিচালক (জেনারেল) মার্জিয়া জাহান এবং ডিএসইর ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম প্রামাণিক।
সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লিখিত সার্বিক তথ্য অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখতে বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটি।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে জাহিন স্পিনিং মিলস পিএলসির ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের উপর তদন্ত করা প্রয়োজন।
তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২১ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৭ এর প্রদত্ত ক্ষমতা বলে উল্লিখিত বিষয়ে কমিশন তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গঠিত কমিটি জাহিন স্পিনিং পিএলসির বিভিন্ন কার্যপরিধি তদন্ত করে দেখবে। কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন এবং কমিশনের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে
কোম্পানিটি বর্তমানে স্থায়ী সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করছে কিনা এবং সমস্ত সম্পদ সঠিকভাবে নিবন্ধনে অন্তর্ভুক্ত আছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। এছাড়া ১৫ জন গ্রাহকের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের সংযোগসহ তাদের অস্তিত্ব খতিয়ে দেখবে। কোম্পানিটি বাণিজ্য এবং অন্যান্য প্রাপ্য অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য কোনো আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে কি-না তা অনুসন্ধান করা হবে। পরবর্তীতে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে কোনো টাকা আদায় করা হয়েছে কি-না এবং কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে গঠিত তদন্ত কমিটি।
সেই সঙ্গে ৪৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার নগদ বিক্রয়ের নন-ব্যাংকিং নিষ্পত্তির বৈধতা আছে কি-না সে সম্পর্কে কোনো অনিয়ম থাকলে তা অনুসন্ধান করা হবে। নগদ প্রবাহ বিবরণীতে ‘গ্রাহক এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে আদায়’ শিরোনামে অ্যাকাউন্ট রিসিভেবল বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি যাচাই করা হবে।
এই বিষয়ে কোনো অনিয়ম পাওয়া গেছে কি-না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কোম্পানির একমাত্র ক্রেতা এবং সরবরাহকারী মেসার্স ঢাকা এন্টারপ্রাইজের মালিকানা তথ্য সংগ্রহ করা এবং কোনো সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন হয়েছে কি-না তাও তদন্ত করা হবে। উপযুক্ত সময়সীমার মধ্যে বিমা দাবি প্রাপ্য রিপোর্ট না করার কারণ এবং সম্পর্কিত আর্থিক প্রতিবেদন লঙ্ঘনের কারণ চিহ্নিত করা হবে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) ১৯ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুসারে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটি স্কিম প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতায় শাস্তি সম্পর্কে আর্থিক প্রতিবেদন জানানো হয়েছে কি-না তা যাচাই করা হবে। মাসিক ভ্যাট রিটার্নের সাথে প্রকৃত বিক্রি ও আয়ের সমন্বয় যাচাই করা এবং অসঙ্গতির বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এছাড়া আয়কর রিটার্ন জমা না দেওয়ার কারণ এবং আর্থিক প্রতিবেদনে এর শাস্তি সম্পর্কে উল্লেখ করা হবে। কোম্পানির বর্তমান চলমান উদ্বেগের অবস্থা মূল্যায়ন করা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সমস্যার বিষয়ে তদন্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করবে।
সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের ০.২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে জাহিন স্পিনিং পিএলসি। এরপর ২০২৪ ও ২০২৫ সালের ৩০ জুন হিসাব বছরে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের আর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (০.৫৫) টাকা। আর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১.০৮ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩.৩৯ টাকায়।
শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি
জাহিন স্পিনিং পিএলসি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৫ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ১১৩ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৩৮ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৮টি। ২০২৫ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩১.১০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪.০১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৪.৮৯ শতাংশ শেয়ার আছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির স্বল্প মেয়াদী ২৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও দীর্ঘ মেয়াদি ২ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩.৯০ টাকা।
ঢাকা/এস