ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আমার প্রথম আয় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা: আফ্রিদি

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২৪ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমার প্রথম আয় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা: আফ্রিদি

তৌহিদ আফ্রিদি

দেশের জনপ্রিয় ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদি। ২০১৭ সালে গুগল ট্রেন্ডিংয়ে তার নাম দেখে অনেকেই চমকে গিয়েছিলেন। সে বছর গুগল ট্রেন্ডিংয়ে বাংলাদেশের তালিকায় সবচেয়ে বেশি খোঁজা তারকাদের মধ্যে আফ্রিদি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ‘তৌহিদ আফ্রিদি’ নামে তার ইউটিউব চ্যানেলে এখন সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ২৫ লাখ। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তার ভিডিও দেখছেন। এই সাফল্য একদিনে হয়নি। এর পেছনে রয়েছে কষ্ট ও পরিশ্রমের গল্প। আফ্রিদি রাইজিংবিডিকে শুনিয়েছেন স্বপ্ন শুরুর সেই গল্পের কথা।   

রাইজিংবিডি: অন্য কিছু না করে ইউটিউবার হলেন কেন?

তৌহিদ আফ্রিদি: স্বাধীনতার জন্য। নিজেকে ঠিকমতো শো করার জন্য। টেলিভিশন বা অন্য মাধ্যমে কোনো কাজ করতে গেলে অনেক নিয়ম-নীতি থাকে। সেসব জায়গায় চাইলে যেকোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা যায় না। কিন্তু ইউটিউব এমন একটি জায়গা যেখানে নিজের মতো করে কাজ করা যায়। এই স্বাধীনতা আমি ইতিবাচকভাবে ব্যবহারের চিন্তা করেছি। যেমন: নিজের দেশকে উপস্থাপন করা। দেশের খুব সুন্দর একটি জায়গা তুলে ধরতে চাই। কিন্তু টেলিভিশনে করতে গেলে অনেক বিষয় আছে চাইলেই প্রচার করতে পারি না। কারণ এখানে টাকা, স্পন্সর ইত্যাদি বিষয় থাকে। কিন্তু ইউটিউবে প্রচারের জন্য এসব প্রয়োজন নেই। বরং উল্টো তারা আমাকে টাকা দিবে। আগে পাপা (বাবা) বা আম্মুর কাছে টাকা চাইতে হতো এখন হয় না। উল্টো এখান থেকে টাকা আয় করে আম্মু বা পাপাকে কিছু উপহার দিই। তাদের জন্য এটা করতে পেরে নিজের কাছেই ভালো লাগে। আরেকটি বিষয় হলো, মানুষের মন্তব্য জানতে পারা। মানুষ আপনার ব্যাপারে কেমন চিন্তা করে, মানুষ কী চায়, দুনিয়া কীভাবে চলছে সবকিছুর খবর আপনি এখান থেকে জানতে পারবেন। বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রচুর প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু কাজ করিনি। ভবিষ্যতে অভিনয় না করার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ ইউটিউবকে আমি বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।

রাইজিংবিডি: তার মানে ভবিষ্যতে মেইন স্ট্রিমে অভিনয়ে আপনাকে দেখা যাবে না?

তৌহিদ আফ্রিদি: সত্যি কথা বলতে এখন মেইন স্ট্রিমের অভিনেতারা ইউটিউবে আসতে চাইছেন। ইউটিউবে ভিউয়ের কারণে তাদের পারিশ্রমিক বেড়ে যাচ্ছে। আজকাল অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিচার করছে ইউটিউবের ভিউ বিবেচনায়। স্পন্সর আসে ইউটিউবের ভিউয়ের উপর। শম্পা রেজার মতো বড় শিল্পীর পারিশ্রমিক এখন কমে গেছে। ভাবলে কষ্ট লাগে। টিভি চ্যানেলও আর্টিস্টের ইউটিউব ভিউ দেখে। তারপর তারা শিল্পী নির্বাচন করে।   

রাইজিংবিডি: আপনি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের পরিচালক। ইউটিউবে ভিউ গণনার মাধ্যমে একজন শিল্পীকে বিচারের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

তৌহিদ আফ্রিদি: সত্যিকার অর্থে এভাবে একজন শিল্পীকে সঠিক মূল্যায়ন করা যায় না। অভিনয়শিল্পীর সবচেয়ে বড় গুণ তার অভিনয় দক্ষতা। আমি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি, সেখানে ইউটিউবের ভিউয়ের বিষয়টি প্রাধান্য দিতে দেখেছি। আমি নিজে একজন ইউটিউবার। কিন্তু পেশাদার শিল্পীরা তো ইউটিউবার না।

রাইজিংবিডি: ইউটিউবে আপনার প্রথম ভিডিও কী ছিল?

তৌহিদ আফ্রিদি: একটা এক্সপেরিমেন্টাল ভিডিও ছিল। নাম- বাংলাদেশি ৪২০। কমেডি ভিডিও। ওটা ফালতু একটা ভিডিও ছিল। এই ভিডিও পোস্ট করার মাধ্যমে বুঝতে পারি ইউটিউব নামে কিছু একটা আছে। এটা ২০১৫ সালের ঘটনা। তারপর লাফালাফি বাদরামির ভিডিও দেই। তারপর দেখি সেটা ৪/৫ হাজার ভিউ হয়ে গেছে। এরপর মানুষ আমাকে বলতে শুরু করে, ‘খুব বাজে! খুব বাজে!’ এসব কথা শুনে মনে হয়- মানুষ আমাকে কেন বাজে বলবে? তারপর আরো ভিডিও তৈরি করতে থাকি। পরে ভ্লগ করি। তৈরি হয় নতুন বিড়ম্বনা। মানুষ আমাকে বলে- তুমি ব্লগ করো? তুমি ব্লগার? ব্লগ আর ভ্লগের মধ্যে তফাৎ না বুঝে মানুষ অনেক গালাগালি করত। লাইফে অনেক ট্র্যাজেডি হয়। 

রাইজিংবিডি: ইউটিউব থেকে আপনার প্রথম আয় কত ছিল?

তৌহিদ আফ্রিদি: এই তথ্যটি আগে কাউকে বলিনি। আজ আপনাকে বলছি। আমার প্রথম আয় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ইউটিউব থেকে আয়ের পেছনের একটি ঘটনা বলি— ইউটিউব চ্যানেল খোলার পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত মনিটাইজেশন করিনি। একদিন পাপা বললেন, তুমি তো ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে পারো। বললাম, আমি কেন ইনকাম করব? পাপা বললেন- কেন তুমি ইনকাম করবে না? আমার কথাগুলো পাপা নেতিবাচকভাবে নেন। তিনি বলেন, ও আচ্ছা, বাবার টাকা আছে এজন্য ইনকাম করবে না! তারপর পাপা আমার বেতন বন্ধ করে দেন। কয়দিন পরে পাপা বললেন, এখন থেকে তুমি বাসা ভাড়া দিবে, বিদ্যুৎ বিল দিবে। এমনকি এখনো বলেন, তোমার পেছনে মাসে খরচ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে তোমার কাছে এই টাকা আমি পাই। যাই হোক, পাপার কথার পর ইউটিউবে মনিটাইজেশন করি। চ্যানেলে যত ভিউ ছিল সেখান থেকে দেখি— ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চলে এসেছে। তখন আমার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ছিল ৫ লাখ। তারপর থেকে আয় হচ্ছে, কখনো বন্ধ হয়নি।

রাইজিংবিডি: আপনি এখন সফল ইউটিউবার। কিন্তু এই প্রাপ্তির পেছনে কষ্টের কোনো ঘটনা আছে?

তৌহিদ আফ্রিদি: আমি সবসময় অনুশোচনায় ভুগী কারণ আমার জন্য আমার বাবা অনেক মন্দ কথা শুনেছেন। আমার বাবা আমার আইডল। তিনি আমার সবকিছু। আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষক। আমার স্কুল, ইউনিভার্সিটি আমার বাবা। বিভিন্ন শোয়ে ডেকে নিয়ে আমাকে পচানো হতো। এটা আমি বুঝতাম না। একটা নামকরা শো আছে কিন্তু নামটা বলব না। টাকা দিয়ে এই শোয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়ার পর নিজে পচেছি আর কমেন্টেস-এ বাবাকে নিয়ে গালি শুনেছি। তখন বুঝতাম না, এখন কাঁদি। সন্তানের কারণে কোনো বাবা গালি খাক এটা কোনো সন্তানই চায় না। বাবা কোনো কারণে নিরাশ হলে আমার মাথা এখনো ঠিক থাকে না। জীবনে স্ট্রাগল করছি শুধু বাবার জন্য। অন্য দশটা মানুষের সামনে বড় হয়ে লাভ নেই কিন্তু আমি আমার বাবার কাছে বড় হতে চাই। আমি না হয় অনেক খারাপ, আমাকে গালি দিলে কষ্ট নেই কিন্তু আমার বাবা-মা কী করেছেন? তারা তো ভালো মানুষ। যখনই আমাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয় তখন সেখানে বাবা-মাকে টানা হয়। এটা আমার সবচেয়ে কষ্টের কারণ।

রাইজিংবিডি: বাবার টাকা আছে আপনি উড়াচ্ছেন! আপনাকে নিয়ে প্রায়ই এমন কথা শোনা যায়...

তৌহিদ আফ্রিদি: যারা এসব কথা বলেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি— বাবার টাকা নয়, বাবার কষ্টে অর্জিত টাকা বলুন। মানুষ আমাকে কেন বলে- আমি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নিয়েছি তা জানি না। কিন্তু আমিও স্ট্রাগল করে বড় হয়েছি। আমি দেখেছি বাসা ভাড়া দিতে না পারার কষ্ট, একটা ইয়ো ইয়ো কিনতে না পারার কষ্ট, ছোটবেলায় একটা কাঠের ব্যাট কিনতে না পারার কষ্ট। ব্যাট না থাকার কারণে অন্যদের বল কুড়িয়ে দিতাম। ব্যাট ছিল না বলে খেলতে নেয়নি। আমার পাপার ১০টা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছিল না। আমরা ধীরে ধীরে গ্রু আপ করেছি। আমার পাপা ধীরে ধীরে বড় হয়েছেন। তারপরও মানুষ কেন এমন ভাবে জানি না।

রাইজিংবিডি: আপনি যখন ভিডিও তৈরি করেন তখন কোন বিষয়টিকে প্রাধান্য দেন?

তৌহিদ আফ্রিদি: আমি প্রত্যেকটি ভিডিওতে মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করি। গুলশানে আমাকে বলতো তোমার ভিডিও কে দেখে? আমি বলতাম, আমার মাই টিভি গ্রামের, আমিও গ্রামের ছেলে। এজন্য যে গ্রামে যাই সেখানে লাখ লাখ মানুষ আমাকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করে। গুলশান-বনানীর দর্শক নিয়ে আমি বসে নাই। গুলশান বানানীর দর্শক নিয়ে বসে থাকলে আমি অন্য দুনিয়াতে থাকতাম। কুলেস্ট ভিডিও বানাতাম। আমি কুলেস্ট চাই না, হ্যাপি ভিডিও চাই, ফ্যামিলি ভিডিও চাই। ইউটিউবে অনেক ভিডিও আছে যেগুলো আপনি পরিবার নিয়ে দেখতে পারবেন না। কিন্তু শতভাগ নিশ্চিত পরিবার নিয়ে আমার ভিডিও দেখতে পারবেন। বাংলাদেশ সোনার টুকরা দেশ। চট্টগ্রামে কত চমৎকার পাহাড় আছে, সিলেটে কি কি আছে তা অনেকে জানেন না, টাংগাইলে শাড়ি কীভাবে তৈরি হয় সেটা অনেকে জানেন না। এজন্য আমি সবসময় টার্গেট করি কোন জেলায় কী আছে সেটা। দেশের প্রত্যেকটি ভালো দিক তুলে আনার চেষ্টা করি। দেশবিরোধী কোনো ভিডিও আমার চ্যানেলে পাবেন না। আমি দেখাব না। কারণ এটি একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম।   

রাইজিংবিডি: সবাই ইউটিউব চ্যানেল খুলছেন। এর ইতিবাচক-নেতিবাচক দুটি দিকই রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।

তৌহিদ আফ্রিদি: আমরা নেতিবাচক দিকটা খুব পছন্দ করি। ইউটিউবে আমরা ইতিবাচক কথা বলছি কিন্তু দেখা যায় টাইটেল নেগিটিভ। কিন্তু কেন? এর কারণ এভাবে ভিডিও পোস্ট করলে মানুষ আগ্রহী হয়। ধরুণ, একটা ঝগড়া হচ্ছে, সেখানে এক শ্রেণির মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে, আরেকজন হুজুগে বলবে- মার মার! আরেক শ্রেণির মানুষ উপেক্ষা করে চলে যাবে। আরেক শ্রেণির মানুষ প্রতিবাদ করে। আমি চার নম্বর শ্রেণির মানুষটা সবসময় খুঁজি। চার নম্বর বাদে বাকি তিন শ্রেণির মানুষ সবসময় ইউটিউবে ঘুরতে থাকে। ইউটিউব দিয়ে যেমন ক্যারিয়ার দাঁড়ায়, তেমনি এর মাধ্যমে ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়। এটা ঘটে শুধু একটা দুইটা ভুলের কারণে। দুদিনের খ্যাতির জন্য তো পৃথিবী না। বরং এমন কিছু করা প্রয়োজন যা পৃথিবী আজীবন মনে রাখবে।           

রাইজিংবিডি: আপনার চ্যানেল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

তৌহিদ আফ্রিদি: অনেক বড় পরিকল্পনা রয়েছে। দুই বাংলার ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাবস্ক্রাইবার আমার চ্যানেলে। আমি চাই এটা সবচেয়ে বড় চ্যানেল হোক। যা দেখে মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না। বাংলাদেশ থেকে ইউটিউবে নেতৃত্ব দিতে চাই। অনেক চ্যানেলে তিন চার হাজার ভিডিও আছে। কিন্তু আমার চ্যানেলে মাত্র একশ ভিডিও। অনেক কষ্ট করে আমার সাবস্ক্রাইব ২৫ লাখ। অনেক সহজে অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। ভালোবাসা অনেকেই পায় কিন্তু সবাই ধরে রাখতে পারে না। আমি ভালোবাসাটা ধরে রাখতে চাই। সেটা ধরে রেখে নিজের দেশকে প্রেজেন্ট করে যাব।

রাইজিংবিডি: ইউটিউবে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র কী?

তৌহিদ আফ্রিদি: ক্যামেরার কোয়ালিটি নয়, ভিডিওর থাম্বনেইল আর টাইটেল সফলতার মূলমন্ত্র। থাম্বনেইল মানুষের মনে কৌতূহল তৈরি করে। মনে করেন, একটি ছবিতে আমি দাঁড়িয়ে আছি, ছবিতে একটা গোল চিহ্ন ও একটা অ্যারো দিয়ে দিবেন দেখবেন মানুষ সেটাতে ঢুকবে। মানুষের মনে কৌতূহল জাগবে দেখি তো আফ্রিদির ওখানে কী হয়েছে? 

রাইজিংবিডি: আপনি চ্যারিটি করছেন। কিছুদিন আগে রানার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন।

তৌহিদ আফ্রিদি: আমি সাধারণত প্রতিবন্ধি, পথশিশু ও স্কুলে চ্যারিটি করে থাকি। এখন স্কুলে বেশি করছি। কারণ এখনো আমাদের শিক্ষার সুযোগ কম। এখন প্রায় ২৫টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছি। কিন্তু জানি না তাদের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলাম। কিন্তু হয়ে গেছি। আমার আয় বা পাপা যা দেন সেখান থেকে ৪৫ শতাংশ টাকা চ্যারিটিতে দিই। এই টাকা পাওয়ার পরই ৪৫ শতাংশ আলাদা করে ফেলি চ্যারিটির জন্য। এটা আমি আজীবন করে যেতে চাই। তবে কিছু বিড়ম্বনাও হচ্ছে। যেমন: কিছুদিন আগে ১৬/১৭ বছর বয়েসি একটি ছেলে এসে কান্নাকাটি করে বলল, তার ক্যানসার হয়েছে। জীবনের শেষ মুহূর্তে আছে। আমি তাকে অনেক সহযোগিতা করেছি। কিন্তু পরে জানতে পারি, ছেলেটি মিথ্যা বলেছে। টাকার জন্য মানুষ এভাবে মিথ্যা বলতে পারে? আমার মনটাই ভেঙে দিয়েছিল। আমি এখন বুঝি, যারা আমার কাছে আসেন তাদের বড় অংশ ফেক। আমি জানি না টাকাগুলো সঠিক জায়গায় যাচ্ছে কিনা? কিন্তু এটা সত্যি আমি যে টাকা দিচ্ছি সেটা অনেক কষ্টে উপার্জিত টাকা। এসব ফেক প্রতিষ্ঠানের জন্য সত্যিকারের প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারছে না। আর রানার ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছি। আগামী ডিসেম্বরে রানাকে কামরাঙ্গীরচরের একটি স্কুলে ভর্তি করাব। এর মধ্যে জানতে পারলাম অনেকে নাকি লাখ লাখ টাকা রানাকে দেওয়ার জন্য ঘুরছেন। সে যাই হোক, আমি কথা দিয়েছি আর সেটা আমি রাখব।

রাইজিংবিডি: আপনি মানুষকে সহযোগিতা করেন আবার আনুষ্ঠানিকভাবে মানুষকে জানান-  এটা নিয়ে বিতর্ক আছে...

তৌহিদ আফ্রিদি: আজকে বিষয়টি পরিষ্কার করে দিচ্ছি। আমি যখন কিছু দান করি সেটা আমি আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানেন না। কিন্তু কারো উপকার করলে সেটা জানাই। কারণ আমি চাই, আমাকে দেখে অন্যরা যাতে এগিয়ে আসেন। আমি হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে কাজ করি। আমার পাপা-মা শিখিয়েছেন— টাকা থাকলে মানুষকে দান করবে। কিন্তু এই দুটি বিষয় মানুষ ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে।

রাইজিংবিডি: কিছুদিন আগে কলকতায় গিয়ে চিত্রনায়ক দেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। দেবকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?

তৌহিদ আফ্রিদি: হ্যাঁ, কলকাতায় গিয়েছিলাম দেব মামার সঙ্গে দেখা করতে। এর আগে সিনেমার বিষয়ে একবার কথা বলেছিলাম। আসলে ‘শালা দুলাভাই’ নামে একটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট আছে। সিনেমায় কাজ করা নিয়ে মায়ের আগ্রহ আছে। তিনি একবার হলেও আমাকে বড় পর্দায় দেখতে চান। কিন্তু এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো কথা হয়নি। তবে মায়ের ইচ্ছা পূরণ করব। সেটা নিজের যোগ্যতা দিয়ে। কাউকে দিয়ে উঠতে চাই না। আর দেব মামা অনেক ভালো মানুষ। তার মন অনেক বড়। দেখা করার পর অবাক হয়েছি। দেব মামার একটি বিষয় দেখেছি, তিনি সবসময় ছোট মাপের মানুষকে বেশি মূল্যায়ন করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন- আমিও ছোট থেকেই বড় হয়েছি।     

রাইজিংবিডি: আপনার পড়াশোনার কী খবর?

তৌহিদ আফ্রিদি: আমি এখন মিডিয়া অ্যান্ড এমসিআর মানে মেইন কন্ট্রোলিং রুম নিয়ে ডিপ্লোমা করছি। মিডিয়ার উপর পিএইচডি করার পরিকল্পনা আছে। সে লক্ষ্যেই এগুচ্ছি।

রাইজিংবিডি: ক্যারিয়ার হিসেবে কোন বিষয়টিকে বেছে নিতে চান?

তৌহিদ আফ্রিদি: ব্যবসায়ী হতে চাই। আরো তিনটি টেলিভিশন চ্যানেল করতে চাই। পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ড থাকবে। পাপা বরিশালে একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করছেন। অনেক বড় পরিসরে কলেজটির কাজ শুরু করেছেন। পানির ব্যবসা করার ইচ্ছে আছে। মাথায় আরো কিছু সৃজনশীল পরিকল্পনা আছে। পাপার কাছ থেকে যদি অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাই তো হলো, না হলে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে এসব ব্যবসা করার ইচ্ছে আছে।

 

 

দেখুন ‍ভিডিও:

 

ঢাকা/শান্ত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়