ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘বাবু খাইছো?’ বাংলা গানের প্রতিনিধিত্ব করে না : ডিজে মারুফ

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:১৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
‘বাবু খাইছো?’ বাংলা গানের প্রতিনিধিত্ব করে না : ডিজে মারুফ

গত ১১ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছে একক নাটক ‘বাবু খাইছো?’। মুক্তির ৬ দিনের মধ্যে নাটকটির ভিউ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ। মূলত এই নাটকের শিরোনাম সংগীত তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গানটি গেয়েছেন মীর মারুফ। ‘ডিজে মারুফ’ নামেই তিনি পরিচিত। গানটি প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচিতও হচ্ছে। সমালোচনার সুলুকসন্ধানে ডিজে মারুফের মুখোমুখি হয়েছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শান্ত। 

রাইজিংবিডি: ‘বাবু খাইছো?’ গানটি নিয়ে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক— দু’ধরনের কথাই শোনা যাচ্ছে। আপনি এই গানের রচয়িতা এবং কণ্ঠশিল্পী। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মারুফ: সব গান সব রুচির মানুষের জন্য তৈরি করা হয় না। কিছু শ্রোতার কাছে রবীন্দ্রসংগীত ভালো লাগে, কিছু শ্রোতার ভালো লাগে নজরুলসংগীত। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে যারা রক মিউজিক শোনেন তারা আবার হিপহপ শুনতে চান না। যারা হিপহপ পছন্দ করেন তারা ডান্স মিউজিক শোনেন না। একেক মানুষের রুচি একেক রকম— সেভাবেই মানুষ গ্রহণ করে। এই গানের ভিডিও মেকিং নিয়ে কিছু মানুষ কথা বলছেন, কিছু মানুষ গানের কথা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শ্রোতাদের এই প্রতিক্রিয়া যে আমাকে আঘাত করছে তা নয়। এমনকি এসব বিষয় আমি ভাবছিও না। কারণ অনেকে আমাকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সাক্ষাৎকারের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা যে নেতিবাচক বিষয়টি বিবেচনা করে যোগাযোগ করছেন তা নয়। আমার দৃষ্টিতে গানটিতে কোথাও কোনো খারাপ কিছু দেখছি না। গানের কথায় খারাপ কোনো শব্দও ব্যবহার করা হয়নি, কোনো মিথ্যা কথা বলা হয়নি, কাউকে হেয় করাও হয়নি। গান একজনের ভালো লাগতেই পারে, পক্ষান্তরে আরেকজনের ভালো নাও লাগতে পারে। 

রাইজিংবিডি: গানে যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন, সেগুলো কি ভাইরাল হওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে করেছেন?

মারুফ: গানটি ভাইরাল হোক এই ইচ্ছা ছিল না। এখনকার দিনের সম্পর্কগুলো কেমন, সেদিকে যদি দৃষ্টিপাত করেন তবে ৮-১০ বছরের প্রেমের সম্পর্ক প্রায় খুঁজেই পাবেন না। দীর্ঘ দিন সম্পর্কে থেকে তারপর বিয়ে করছে এমন ঘটনা খুব কম! বর্তমানের সম্পর্কগুলো ১-২ মাসের। সর্বোচ্চ হলে ৬ মাসের হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত বর্তমানে মেয়েদের প্রেম। অর্থাৎ মেয়েরা ছেলেদের কীভাবে ট্রিট করছে। তৃতীয়ত সম্পর্কে জড়ানোর পর একটি মেয়েকে কীভাবে ট্রিট করা হয়। এবং বন্ধুদের সঙ্গে তার কথোপকথন কী ধরনের হয়? গানটির প্রথম অন্তরায় রয়েছে এ সময়ের প্রেম। দ্বিতীয় অন্তরায় প্রেমের সম্পর্কে থেকে একটি মেয়ে একটি ছেলেকে কীভাবে ট্রিট করে সেটি বলেছি। তৃতীয় অন্তরায় একটি ছেলে একটি মেয়েকে কীভাবে ট্রিট করে সেটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গানটির মোরাল অব দ্যা স্টোরি সারাদিন কথোপকথনের পর একটাই প্রশ্ন— ‘বাবু খাইছো?’ লকডাউনের সময়ে এর প্রভাব আরো বেশি ছিল। কারণ তারা দেখা করতে পারতো না। সারাদিন ঘ্যানঘ্যান করেছে! দিন শেষে ওই একটাই প্রশ্ন— ‘বাবু খাইছো?’

রাইজিংবিডি: অর্থাৎ একটি প্রজন্মের বর্তমান সময়ের প্রেম গানটিতে তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে কোন বার্তাটি আপনি শ্রোতাদের দিতে চেয়েছেন?

মারুফ: গানটির গভীরে গিয়ে যদি লক্ষ্য করেন তবে মেসেজ পাবেন। আমরা এই ‘মহাকাল যুগ’টা থেকে সরে আসতে চাই। আমরা সম্পর্কে সম্মান চাই। রিলেশন শিপে ‘মুরগি ভাঙানো’, গার্লফ্রেন্ডকে ‘মেশিন’ বলে সম্বোধন করা দূর করতে চাই। চাই না একটি পবিত্র সম্পর্কে এসব থাকুক। একটি কাপল পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোক। তারা যেন পরস্পরকে ছোট না করে, বন্ধুদের কাছে যেন নিজের প্রেমিক-প্রেমিকাকে ভালোভাবে উপস্থাপন করে। একটি মেয়ে যেন তার বান্ধবীকে না বলে— ‘আমার বয়ফ্রেন্ড অনেক ধনী। ওকে ভাঙিয়ে খাচ্ছি।’ 

রাইজিংবিডি: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গানটি নিয়ে নেটিজেনরা মন্তব্য করছেন। অনেকে বলছেন এখানে কোনো সুর নেই। 

মারুফ: হ্যাঁ, অনেকে অনেকভাবে গানটি নিয়ে মন্তব্য করছেন। র‌্যাপ গানে কে কবে সুর খুঁজে পেয়েছেন? ‘বাবু খাইছো?’ একটি স্যাটায়ার র‌্যাপ সং। পৃথিবীর কোনো র‌্যাপ গানে সুর ছিল না।

রাইজিংবিডি: তার মানে আপনি বলছেন, গান হতে পারে কিন্তু তাতে সুর না থাকলেও চলবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো; অর্থাৎ যে প্রশ্নটি অনেকে তুলেছেন— ‘বাবু খাইছো?’ গানটি বাংলা সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে কিনা?

মারুফ: প্রতিনিধিত্বে তো আমরা যাব-ই না! লকডাউনের সময় ‘ইচ্ছে করে দেই একটি মিসকল/ কী করিস বল, ঘরে থাকি চল’ এমন কথার একটি গান করেছিলাম। গত ১৫ সেপ্টেম্বর চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ গানটি তাদের টিভিতে প্রচারের জন্য চেয়েছেন। আমরা এই ধরনের বাংলা গান করতে চেয়েছি। কিন্তু ইউটিউবে এই গানের ভিউ ১৮-১৯ হাজার মাত্র। আলটিমেটলি এই গানের ভিউ হচ্ছে না। ভিউ হচ্ছে ‘বাবু খাইছো?’ গানটির। এই গান বাংলা গানের প্রতিনিধিত্ব করার গান না। এগুলো কমেডি কিংবা স্যাটায়ার গান। বলিউডে যদি তাকান তবে দেখবেন ওখানকার ‘গলিবয়’ গানটি হিট। এই গানে মিউজিকের কোনো কিছু নেই। কিন্তু এটি হিট। গানের কথাগুলো মানুষ রিসিভ করেছে। আমার এই গানের প্রথম পাঁচ লাইন মানুষ রিসিভ করেছে। এর আগে-পরে কী বলেছি তা কিন্তু কেউ শোনেননি। মানুষ গান এখন দেখে। এদিক থেকে বলবো, ঈগল মিউজিক সফল হয়েছে। কারণ গানটি দেখার উপযুক্ত করে তারা নির্মাণ করেছেন। আর এই গানের মূল বর্ণনাটা নাটকে প্রকাশ পেয়েছে। সমস্যা হয়েছে মানুষ নাটক না দেখে, গান শুনে বা দেখে  স্টোরি বোঝার চেষ্টা করছেন। যদি নাটকটি দেখে মূল স্টোরি বোঝার চেষ্টা করতেন তবে হয়তো নেতিবাচক মন্তব্য করতেন না। পাশাপাশি কলকাতার কিছু মানুষ গানটি নিয়ে ইতিবাচক ভাবনার কথা আমাকে জানিয়েছেন। আসলে এ গানের ইস্যুটি এত সিরিয়াসলি নেইনি।

রাইজিংবিডি: বর্তমানে ইউটিউবে ভিউ দিয়ে নাটক কিংবা গানের গুণ বিচার করা হচ্ছে। আপনি একজন শিল্পী হিসেবে বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মারুফ: একজন শিল্পী হিসেবে এভাবে কখনো গানের বিচার করি না। ভিউয়ের মাধ্যমে আমি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি। এক্ষেত্রে দুটি বিষয় রয়েছে— সেলিব্রেটি ও তারকা। সেলিব্রেটি ও তারকা এক বিষয় নয়। এক কোটি ভিউয়ের মাধ্যমে আপনি সেলিব্রেটি হতে পারবেন কিন্তু তারকা হতে পারবেন না। তারকা হতে হলে একজন শাফিন আহমেদ, পার্থ বড়ুয়া কিংবা একজন আইয়ুব বাচ্চু হতে হবে। দেখুন ইউটিউবে লতা মঙ্গেশকরের গান ৫-১০ হাজার ভিউ হয়েছে, তাই বলে কী লতা মঙ্গেশকর তারকা নন?

রাইজিংবিডি: আপনার পরবর্তী কাজের পরিকল্পনা জানতে চাই।

মারুফ: আমার পরবর্তী কাজ বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে করার পরিকল্পনা করেছি। অর্থাৎ চিরাচরিত প্রথা নিয়ে কাজগুলো করবো। থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে একটি গান করবো। যেখানে ভরপুর নাচ থাকবে। সামনে বিয়ের মৌসুম। সুতরাং গায়ে হলুদের গান করার ইচ্ছে আছে। লকডাউনের সময়ই গানগুলো তৈরি করেছি। কিন্তু শুটিং বাকি। শুটিং শেষে মুক্তি দেব। দেখি এসব গান মানুষ কীভাবে গ্রহণ করে।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়