গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবে থাকছে না ভারত
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
দীর্ঘ বিরতির পর আবারো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব। নগরীর শিল্পকলা একাডেমির পাঁচটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে এটি। তবে এবারের উৎসবে থাকছে না ভারতীয় সাংস্কৃতিক দলের উপস্থিতি। শুধু দেশীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পরিবেশনা নিয়ে সাজানো হয়েছে উৎসবের অনুষ্ঠানমালা।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান উৎসবের আহ্বায়ক কমিটি। এসময় উৎসবের আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমিটির সদস্য এবং প্রচার উপপর্ষদের আহ্বায়ক মীর জাহিদ হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে উপজীব্য করে এবারের গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। ১ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বারো দিনব্যাপী এই উৎসব বাংলাদেশ শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালার মূল হল, পরীক্ষণ থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল, জাতীয় সংগীত-নৃত্যকলা-আবৃত্তি মিলনায়তন এবং জাতীয় নাট্যশালার মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, করোনার কারণে গত বছর আমরা উৎসব আয়োজন করতে পারিনি। গত দেড় বছরে হারিয়েছি দেশের অনেক সংস্কৃতিজন, সাংস্কৃতিককর্মী, অগণিত আলোকিত মানুষকে। আমরা গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদের পক্ষ থেকে সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। করোনার কারণে ভারতের কোনো নাট্যদলের অংশগ্রহণ ছাড়াই এবারের উৎসব হবে। ভারত-বাংলাদেশ অভিন্ন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং জনগণের মৈত্রীর বন্ধন দৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়েই মূলত ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’ আয়োজিত হয়ে আসছে গত আট বছর ধরে।
এবারের উৎসবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ৩৬টি নাট্যদলের মোট ৩৬টি মঞ্চনাটক প্রদর্শনী হবে। সংগীত, নৃত্যকলা ও আবৃত্তি মিলনায়তনে ৪৪টি সংগীত আবৃত্তি ও নৃত্যদল তাদের পরিবেশনা আনবেন। উন্মুক্ত মঞ্চে ১২টি পথনাটক, ১১টি আবৃত্তি সংগঠনের পরিবেশনা, ১২টি সংগীত সংগঠন, ১১টি নৃত্য সংগঠন, ১০টি শিশুদল এবং একক আবৃত্তি ও একক সংগীত পরিবেশনা থাকবে উৎসবে। সব মিলিয়ে ১৪০টি সংগঠনের আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার শিল্পী-কলাকুশলীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এবারের ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’ উদযাপিত হবে।
১ অক্টোবর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ১২ দিনব্যাপী ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব’-এর উদ্বোধন করবেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সুজেয় শ্যাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। উদ্বোধনী পর্বে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান নূর, রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন উৎসব পর্ষদের সদস্য সচিব আকতারুজ্জামান এবং সভাপতিত্ব করবেন উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস।
উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মূল হলে মঞ্চস্থ হবে থিয়েটার প্রযোজনা ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। নাটকটি রচনা করেছেন সৈয়দ শামসুল হক ও নির্দেশনা দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল মামুন। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে থাকবে আরণ্যক নাট্যদলের প্রযোজনা ‘কহে ফেসবুক’। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন মামুনুর রশীদ। এছাড়া স্টুডিও থিয়েটার হলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকার প্রযোজনা ‘জনকের মৃত্যু নেই’ মঞ্চায়িত হবে। এটি রচনা করেছেন আবদুল হালিম আজিজ এবং নির্দেশনা দিয়েছেন স্মরণ সাহা। উন্মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক পর্ব প্রতিদিন ৪টা থেকে ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং মঞ্চনাটক প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে। নাটকের অগ্রিম টিকিট কাউন্টারে পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন—উৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব এবং নাট্যজন আকতারুজ্জামান, উৎসবের অর্থ উপপরিষদের আহ্ববায়ক আহমেদ গিয়াস, উদযাপন পর্ষদের সদস্য খোরশেদুল আলম, মানজার চৌধুরী সুইটসহ বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা।
ঢাকা/শান্ত