ঢাকা     বুধবার   ২৫ জুন ২০২৫ ||  আষাঢ় ১১ ১৪৩২

‘একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে বেশ্যা ডেকে কেন পার পাবেন?’

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ১৩ মে ২০২৫   আপডেট: ১৪:৫৯, ১৩ মে ২০২৫
‘একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে বেশ্যা ডেকে কেন পার পাবেন?’

সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান

দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার এই শিল্পী। গান দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ উঁচু করেন। এমনকি রাজপথে নেমেও ন্যায়ের দাবি তুলেন এই শিল্পী। গত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যত্থানে প্রতিবাদী গান নিয়ে রাজপথে নেমেছিলেন। 

চলমান নানা ইস্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে সরব হতে দেখা গেছে সায়ানকে। ফের একবার গর্জে উঠল তার ‘ডিজিটাল কলম’। নারীকে ‘বেশ্যা’ বলা, ‘ঘৃণা’ ছড়ানো, ‘হত্যার’ হুমকির মতো উস্কানিমূলক ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এই সংগীতশিল্পী। 

এ নিয়ে সায়ান তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে এই শিল্পী বলেন, “আমি বর্তমান সরকারকে এই বিষয়গুলোতে কঠোর হতে জোর দাবি জানাই। আপনারা ঘৃণা চর্চার বয়ানকে চিহ্নিত করুন, আক্রমণাত্মক ভাষা-ভঙ্গি নিয়ে কাজ করুন। সিভিলিয়ানদের জন্য সিভিল আচরণের ন্যূনতম স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করার কথা ভাবুন।” 

আরো পড়ুন:

উদাহরণ টেনে সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বলেন, “বিভিন্ন মঞ্চে গিয়ে একে বেশ্যা, তাকে দালাল— এগুলো তো রোজকার ব্যাপার হয়েছে। তার সঙ্গে এই যে জবাই করার কথা বলা, ‘ধরে ধরে জবাই কর’ এটা পৃথিবীর যেকোনো সমাজে, যেকোনো রাষ্ট্রে কীভাবে গ্রহণযোগ্য? এইভাবে ঘৃণার এবং হত্যা-হুমকির খুল্লামখুল্লা চর্চা চালিয়ে যাবে কেউ, তারপর সেটার কোনো পরিণতি হবে না, এটা কেন গ্রহণযোগ্য? এখানে তো ব্যক্তিকে হত্যা করার কথা বলা হচ্ছে। এটা কীভাবে স্বাভাবিক? এটা স্লোগান হিসেবে কেন আপত্তিকর নয়? হত্যার উস্কানি নয়?” 

২০১৩ সালে একই ভাষা শুনেছেন গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময়। তখন আনন্দ হয় নাই সায়ানের প্রাণে। শিহরিত হন নাই। বিচার চাওয়া আর জবাই করা এক ব্যাপার নয়। বিচারের সংস্কৃতিই সেটা নয় বলে মত এই শিল্পীর।

‘ঘৃণা নিয়ন্ত্রণ কমিশন’ তৈরির দাবি জানিয়ে সায়ান বলেন, “সাধারণ জনতার ভিড়ে সুশীলও থাকেন, উন্মাদ মব-জনতাও থাকেন। তাদের কাছে বাড়তি কিছু আশা করি না। তারা রাষ্ট্রের দায়িত্বে নাই। তারা যে যার নীতি-গতি-বিবেক অনুযায়ী আচরণ করবেন, সকলেরই দেশ, সকলেই স্বাধীন। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে তো একটা মানদণ্ড থাকতে হবে আচরণের। কেন একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে বেশ্যা ডেকে পার পাবেন? কেন যে কেউ যে কাউকে ভালো না লাগলেই জবাই করার হুমকি দেবেন এবং তার স্বাভাবিকীকরণ হবে? কেন বিভিন্ন মাহফিলে ঘেন্না ছড়ানোর বয়ান চলতে পারে যুগের পর যুগ, অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি? মেয়েদের প্রতি? একটা ‘ঘৃণা নিয়ন্ত্রণ কমিশন’ এখন সময়ের দাবি।

একটি আন্দোল মঞ্চের উদাহরণ দিয়ে সায়ান বলেন, “সেদিন দেখলাম কোনো এক মঞ্চ থেকে কেউ কেউ তালে তালে বলছেন, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জবাই কর!’ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা মানুষেরা কেন এই চর্চায় কোনো সমস্যা পাচ্ছেন না? মব-জনতা উন্মাদনায় ভেসে যাচ্ছে জংলীপনায়। কিন্তু রাষ্ট্রের নিযুক্ত সেবকেরা কি করে এখানে নির্বিকার থাকবেন? এগুলোকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে দেখতে চাই। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার করবেন আদালতে। জবাই করার স্লোগানের মধ্যে ২০১৩-তেও দেশপ্রেম ছিল না, এখনো নাই। বিচারের মানসিকতা ছিল না। এখনো নাই।”

কিছু মানুষের পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধের খেলা থেকে মুক্তি চেয়ে সায়ান বলেন, “এই দেশে গণহত্যার আগের জমানার কারিগরেরা বা সহযোগীরা কেউ নাই এখন। গোলাম আজম, নিজামীরা কেউ নাই আর। হাসিনাও এখানে ফিরবে শুধু বিচারের মুখোমুখি হতে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ সেটা নিশ্চিত করবে, তাতে কোনো সন্দেহ রাখলাম না। কিছু লোকের পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধের খেলা থেকে মুক্তি পেতে চাই। গা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে সংস্কৃতি পাল্টাবে না। কাজ করতে হবে। ক্যাম্পেইন করতে হবে। এখানে মানুষকে গালি দেয়া এবং জবাই করার হুমকি দেবার মধ্যে দিয়ে দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব শেষ করে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।”

সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সায়ান বলেন, “সরকারকে বলছি, কেউ কিছু বললেই, গায়েবি মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে যায়েন না কাউকে। কোন কথাগুলো ভায়োলেন্ট এবং অফেনসিভ সেগুলোর তালিকা করেন। আইনিভাবে ঘৃণা চর্চাকে নিষিদ্ধ করেন। এটা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার জটিল প্রক্রিয়ার চেয়েও কিছুটা সহজ হবে করা। ঘৃণা চর্চাকে খাটো করে দেখবেন না। সেখান থেকে বৈধতা আসে বড় বড় অপরাধের।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়