ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

রাশিয়ার বন্দিশালায় নির্যাতন, বাঁচার জন্য ইউক্রেনিয়দের মৃত্যু প্রার্থনা

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০০, ১৭ জুলাই ২০২৩   আপডেট: ১৩:০৭, ১৭ জুলাই ২০২৩
রাশিয়ার বন্দিশালায় নির্যাতন, বাঁচার জন্য ইউক্রেনিয়দের মৃত্যু প্রার্থনা

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বরতম মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চলছে। মানবতার পাঠ শেখানো দুই বিশ্বমোড়লের বিরুদ্ধে উঠেছে এই অভিযোগ। ধারণা করা হচ্ছে, আমেরিকার নিয়ন্ত্রণাধীন গুয়ানতামো বে কারাগার যেমন ইতিহাসের পাতায় বর্বরতার জন্য স্থান করে নিয়েছে, তেমনি কালের অন্তিম পর্যন্ত স্থান করে নিতে পারে রাশিয়ার বন্দিশিবিরগুলো। নির্যাতনের মাত্রা অনুযায়ী এই বন্দিশিবিরগুলো এখন গুয়ানতানামো বে কারাগারকেও যেন হার মানিয়েছে।  

রাশিয়ার সিমফেরোপল ডিটেনশন সেন্টার থেকে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন আলেকজান্ডার তারাসভ। তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ‘মিরর’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার বন্দিশিবিরগুলোর ভিতরের জীবন সম্পর্কে এবং কীভাবে নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন। 

তারাসভ রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমাবেশ করার জন্য ২০২২ সালের মার্চ মাসে গ্রেপ্তার হন। সে সময় তিনি রাশিয়া অধিকৃত খেরসনে বাস করছিলেন। ২০২২ সালের মে মাসে তাকে সিমফেরোপল বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তিনি ক্রেমলিনবিরোধী রাশিয়ান নিউজ সাইট ‘মেডুজা’র সঙ্গে কথা বলেন। সেখানেও কারাগারের দরজার ওপাশে যা কিছু ঘটেছে তার বাস্তবতা সম্পর্কে বর্ণনা দেন তিনি। 

আলেকজান্ডার তারাসভের ‘মিরর’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার বন্দিশিবিরে ইউক্রেনিয় বেসামরিক নাগরিকদের জীবনের রূঢ় বাস্তবতা উন্মোচিত হয়েছে। তারাসভ বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের শুরু থেকেই কয়েক হাজার ইউক্রেনিয়ানকে ধরে সিমফেরোপল ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়। সেখানে তাদের উপর চালানো হয় নির্যাতনের স্টীম রোলার। তিনি এককথায় বলেছেন, বন্দিশিবিরে থাকা বন্দিদেরকে নিয়মিত ইলেট্রিক শক দেয়া হয়। বন্দিরা মৃত্যুর জন্য ডিটেনশন সেন্টারের নির্যাতনকারীদের কাছে প্রার্থনা করত। সে এক মর্মান্তিক ও রোমহর্ষক ঘটনা। তাদের আর্তচিৎকারে বন্দিশিবিরের বাতাস ভারী হয়ে উঠত। 

সিমফেরোপল বন্দিদের কাছে অন্যতম ভয়ঙ্কর ডিটেনশন সেন্টারে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তারাসভ বিশদভাবে বর্ণনা দিয়েছেন সেখানে কীভাবে বৈদ্যুতিক শককে শাস্তি এবং নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নির্যাতন থেকে বাঁচতে বন্দিরা পালানোর চেষ্টা করলে তাদের পেছনে ছেড়ে দেয়া হয় হিংস্র কুকুর। 

সিমফেরোপল ডিটেনশন সেন্টার

তারাসভ বলেছেন, এমনভাবে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয় যেনো শরীরের প্রতিটি পেশী ফাইবার তারের মতো চার্জ হয়। এবং বিস্ফোরিত হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। আবার শক বন্ধ করলে শরীরের পেশীগুলি সংকুচিত হতে থাকে। তখন অসহ্য যন্ত্রণা হয়। এতো নির্যাতন সহ্য করার পরও কেউ প্রতিরক্ষামূলক কোনো কাজ করলে তার উপর নেমে আসে নির্যাতনের বৃষ্টি।   

তারাসভ দাবি করেছেন কারাগারে যাওয়ার আগে খেরসনে রাশিয়ান সেনারা বন্দি ভবনের বেসমেন্টে তাকে ‘যৌন নির্যাতন’ করে। সেনারা তার কানে শক দেয় এবং অন্যান্য প্রতিবাদী সংগঠকদের নাম জানতে চায়। তবে এর চেয়েও ভয়াবহ ছিল যখন একজন রাশিয়ান তার বুক লক্ষ্য করে গুলি করার হুমকি দেয়। বলেন তারাসভ। 

কারাগারকে ‘মধ্যযুগের অন্ধকূপ’ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি আরও বলেন, নতুন কেউ আসলে সে রাতেই তার উপর নির্যাতন শুরু হতো। এমন নির্যাতন করা হতো যেন পরদিন আর চলাফেরা তো দূর, হাঁটার ক্ষমতাও সে হারিয়ে ফেলে। 

আরেকজন প্রাক্তন বন্দি ম্যাক্সিমের বরাতে বলা হয়েছে, নারী বন্দিদের ক্ষেত্রে প্রথম রাতেই যৌন নির্যাতনের হুমকি দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়নও করা হতো। আর এসব নির্যাতন সহ্য করতে হয় মুখ বুঝে। এমনকি এমনও হুমকি দেয়া হয় যে, তাদের লুহানস্কে পাঠানো হবে। যেখানে গুলি মারলেও তা যুদ্ধক্ষেত্রে নিহতের মধ্যে গণ্য হবে। 

কোনো ধরনের জবাবদিহিতা করতে হয় না নির্যাতনকারী সেনাদের। রাশিয়া ক্রমাগত কারাগারে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করছে। একইসঙ্গে সব ধরনের যুদ্ধাপরাধ অস্বীকার করছে তারা। তবে তাদের অস্বীকারের বিপরীতে রয়েছে অকাট্য প্রমাণ দাবি আলেকজান্ডার তারাসভের। 

তারা//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়