ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

লবণ খাওয়া কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসের প্রমাণ মিলেনি

সেন্ট্রাল ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৩   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লবণ খাওয়া কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসের প্রমাণ মিলেনি

ঢাকা: স্বাস্থ্যের ওপর খাবার লবনের প্রভাব নিয়ে সাম্প্রতিক একটি পর্যালোচনা ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক ঘোষণা করেছেন

খাবারে লবণ বেশি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে কিংবা উচ্চ রক্তচাপের কারণে মৃত্যুঝুঁকি বেশি হয়-এমনটা উচ্চতর গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি। গবেষকরা বলছেন খাবারে লবণ কম খেলে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমে বলে চিকিতসকরা এতদিন যে পরামর্শ রোগীদের দিয়ে এসেছেন তার প্রমাণ মিলেনি গবেষণায়। তারা দাবি করেছেন লবণ কম খেলে উচ্চ রক্তচাপ কিছুটা কমে, কিন্তু  হৃদরোগ বা অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায় এটা ঠিক নয়। গবেষকরা ঘোষণা করেছেন, হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে এতদিন ধরে যে গবেষণা হয়েছে তা যথেষ্ট ছিল না। এজন্য বড় পরিসরে আরো গবেষণা পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে। নতুন এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেড টেইলার। তিনি বলেন, লবণ খাওয়া কমানোর উপকারিতা ও ঝুঁকি হ্রাস সম্পর্কে আরো দীর্ঘ পরিসরে গবেষণা ও পরীক্ষা নীরিক্ষা করা প্রয়োজন। অবশ্য নতুন এই গবেষণা ফলাফলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা এটার তীব্র সমালোচনাও করেছেন।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ফ্রান্সেসকো কাপুচ্চিও বলেছেন ,লবণ খাওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণাটি বিস্ময়করভাবে দুর্বল। তিনি বলেছেন, বিশ্বজুড়ে বহুসংখ্যক মানুষ ষ্ট্রোক প্রতিরোধ ও হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষার পেতে লবণ খাওয়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন। এই একটি মাত্র গবেষণা ফলাফলের জন্য মানুষ দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি পরিবর্তন করে লবণ খাওয়ার নীতি পরিহার করবেন না।

লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল এপিওডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইমন কেপওয়েল বলেন, নতুন পর্যালোচনাটি খুবই হতাশাজনক ও এটি কিছুই প্রমাণ করে না। লবণ খাওয়া সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে মানুষ তাদের পুরানো ধারণা পরিবর্তন করেনি ও করবে না। তিনি বলেন, এটিই প্রমাণিত ও বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন অতিরিক্ত লবণ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কমালে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে আসে বিশেষ করে  উচ্চ রক্তচাপ কমে ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক থাকে। এ সম্পর্কে আগের গবষেণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষায় লবণ কম খাওয়ার উপকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। তবে এর ফলে বৃহত্তর জনসাধারণের হৃতপিন্ডের পুরোপুরি সুরক্ষা হয়েছে তা অবশ্য গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি।

গবেষকরা বলছেন বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারন হৃতপিন্ড থেকে সৃষ্ট হৃদরোগ ও ধমনির রোগ অন্যতম। টেইলর বলেন, নতুন গবেষণায় লবণ খাওয়া কমিয়ে দিয়ে বড় ধরনের উপকারিতা না পাওয়ার কারন হচ্ছে খুব কমসংখ্যক মানুষের ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা। এই কারনে কাঙ্খিত ফলাফল মিলেনি। তাছাড়া যাদের ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছিল তাঁরা খুব অল্প পরিমাণে লবণ খাওয়া কমিয়েছিলেন। তাই হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি।

নতুন গবেষণা দলের প্রধান রেড টেইলর বলেন, তারা মোট ৬ হাজার ৪৮৯ জনের ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করেন। এতে তাঁরা উপসংহারে উপনীত হওয়ার মত যথেষ্ট  তথ্য পেয়ে যান। তবে তারা মনে করেন লবণ খাওয়া কমিয়ে স্বাস্থ্যের উপকার হয় এমন সিদ্ধান্ত সঠিক কি-না তা নির্ণয়ের জন্য বিপুল সংখ্যায় মানুষের ওপর গবেষণাটি পরিচালনার প্রয়োজন হয়তো ছিল। নতুন গবেষণা সিদ্ধান্তের বিষয়ে অষ্ট্রেলিয়ার অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির পুষ্টিবিজ্ঞানের অধ্যাপক এলেরিন রাশ বলেন, একটি মাত্র গবেষণা ও একটি মাত্র পুষ্টি উপাদানের ওপর গবেষণা এবং পরীক্ষা নীরিক্ষা চালিয়ে এই ধরণের স্পর্শকাতর বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য মোটেও সহায়ক নয়।

(সুত্র হেলথ জার্নাল: লন্ডন)

রাইজিংবিডি২৪.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়