ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বুস্টার ডোজে আশানুরূপ সাড়া নেই

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ৬ জুন ২০২২  
বুস্টার ডোজে আশানুরূপ সাড়া নেই

ছবি: সংগৃহীত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বুস্টার ডোজ সপ্তাহ ঘোষণা করা হয়েছে ৪ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত। এসময়ের মধ্যে এক কোটি মানুষকে বুস্টার ডোজের আওতায় আনার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। কিন্তু সপ্তাহের তৃতীয় দিনে (৬ জুন) সরেজমিন গিয়ে টিকা কেন্দ্রে তেমন ভিড় লক্ষ করা যায়নি। এমনকি, দুটি কেন্দ্রে মানুষকে লাইন ধরে টিকা নিতেও দেখা যায়নি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দিন দিন করোনা আক্রান্ত-মৃত্যুর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে করোনা ভীতি কমে গেছে। সে কারণে করোনার টিকা গ্রহণেও আগ্রহের পরিমাণ কমেছে।

সোমবার (৬ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) টিকাকেন্দ্র ও গ্রিন রোডের সূর্যের হাসি অস্থায়ী কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, এসব টিকাদান কেন্দ্রে স্বাভাবিক সময়ের মতো টিকাদান কর্মসূচি চলছে। তবে বুস্টার ডোজের জন্য সপ্তাহব্যাপী গণটিকা কার্যক্রমে বাড়েনি টিকা প্রত্যাশীদের উপস্থিতি।

মানুষের মধ্যে তেমন আগ্রহ না থাকা বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনজুর রহমান গালিব বলেন, এ মুহূর্তে বিশ্বের অনেক দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়লেও আমাদের এখানে পরিস্থিতি অনেক ভালো। সেজন্য করোনা টিকার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়লেও বুস্টার ডোজ নেওয়ার ব্যাপারে অনেকটা ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাছাড়া যেভাবে প্রচার-প্রচারণা হওয়ার দরকার ছিল, সেভাবে না হওয়ার কারণে অনেক কেন্দ্রেই টিকাপ্রত্যাশীদের উপস্থিতি কম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলছেন, এটা সত্য যে; রোববার পর্যন্ত প্রথম দুই দিন বুস্টার ডোজ নেওয়ার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি মানুষের মধ্যে। এভাবে বুস্টার ডোজ নিলে এক কোটি মানুষকে টিকার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটা পূরণ হওয়া কঠিন হবে। তবে আশা করা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে টিকাপ্রত্যাশীদের ভিড় বাড়বে। আমাদের এখনও প্রায় চার কোটি মানুষ বুস্টার ডোজ দেওয়ার বাকি রয়েছে।

অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, পর্যাপ্ত প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। মানুষকে বুস্টার ডোজের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হবে। মানুষজন এখন প্রায়ই মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করছেন। তাদের মধ্যে করোনার ভয় বা আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তারপরও বার বার করে বিশেষ ক্যাম্পেইন করে বুস্টার ডোজ দেওয়া বাড়াতে হবে। 

সোমবার সকালে বিএসএমএমইউ টিকাকেন্দ্রে বুস্টার ডোজ নিতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম বা দ্বিতীয় ডোজের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও মানুষ টিকা নিয়েছে। সেই তুলনায় বুস্টার ডোজ নিতে এসে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। খুব সহজে অল্প সময়ে টিকা নিতে পেরে খুশি তারা।

এরকম একজন মাহবুবুর রহমান জানান, অফিস থেকে হাফ বেলা ছুটি নিয়ে বুস্টার ডোজ নিতে এসেছি। তেমন লাইন ছাড়া আধা ঘণ্টার মধ্যে কাজ শেষ করতে পেরেছি। কোনো ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়নি। অথচ একই কেন্দ্রে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সময় প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা করে সময় লেগেছে।

বিএসএমএমইউ টিকাকেন্দ্রের সমন্বয়ক ডা. মো. দাউদ আহমেদ তালুকদার বলেন, গতকাল (রোববার) ৮৭৬ জনকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে। এর আগের দিনও প্রায় এই সংখ্যক মানুষ টিকা নিয়েছেন। করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় অনেকেই আগ্রহ নিয়ে টিকা নিতে আসছেন না। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় অনেকের ধারণা, বুস্টার নেওয়ার দরকার নেই। এ ছাড়া বুস্টারের ক্যাম্পেইনে মানুষের মধ্যে তেমন আগ্রহ তৈরি করতে পারেনি বলেও মনে এই চিকিৎসক। 

গ্রিনরোডের সূর্য কমিউনিটি ক্লিনিকের রেড ক্রিসেন্টের একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, আমাদের এই কেন্দ্রে প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা মানুষ যে হারে লাইন ধরে নিয়েছেন, বুস্টার ডোজ সেভাবে এখনও নিতে আসেনি। তবে আশা করছি, এখনো যারা বুস্টার ডোজ নেওয়ার বাকি আছেন, তারা শিগগিরই এসে নেবেন। বর্তমানে যারা বুস্টার ডোজ নিতে আসছেন, তারা অনেকেই অন্য কেন্দ্র থেকে আসছেন। বুস্টার ডোজ ক্যাম্পেইন আরও বেশি বেশি করা দরকার। তাহলে মানুষ সচেতন ও আগ্রহী হবেন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকে দেশে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত মোট বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৬৭ লাখ মানুষ। প্রথম ডোজ নেওয়া টিকাগ্রহীতার ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বুস্টার ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে এরকম প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ বুস্টার ডোজের অপেক্ষায় রয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব শামসুল হক বলেন, আশা করছি ক্রমে টিকাপ্রত্যাশীদের আগ্রহ বাড়বে। টিকা নেওয়ার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ কমেছে, এটা ঠিক। এর প্রধান কারণ বর্তমানে করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মানুষ মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করছেন। স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না অনেকে। এমনকি টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না অনেকেই।

বিশেষ ক্যাম্পেইনের সময় বাড়ছে না জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, লক্ষ্য পূরণ না হলেও বাড়ছে না ক্যাম্পেইনের মেয়াদ। আগামী ১০ জুনের মধ্যেই এই কর্মসূচি শেষ হবে। তবে টিকাগ্রহীতাদের আগ্রহ বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা আরও বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তথ্য মতে, দেশে মোট ১৬ হাজার ১৮১ টিকাকেন্দ্রে বুস্টার ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৬২৩টি স্থায়ী ও ১৫ হাজার ৫৫৮টি অস্থায়ী কেন্দ্র। স্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে ৭ দিন ও অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে ২ দিন টিকাদান কার্যক্রম চলমান থাকবে। অস্থায়ী কেন্দ্রে টিকা দেওয়ার তারিখ স্থানীয় পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা ও মাইকিং করে জানানো হয়। 

একযোগে ৪৫ হাজার ৫৩৫ জন টিকাদান কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী এই কার্যক্রমে কাজ করছেন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার পর ৪ মাস পার হলে ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সের যেকোনো নাগরিক বুস্টার ডোজ দিতে পারবেন।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়