ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ডেঙ্গু আক্রান্তদের নতুন উপসর্গ

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩০, ২৬ অক্টোবর ২০২২  
ডেঙ্গু আক্রান্তদের নতুন উপসর্গ

ছবি: সংগৃহীত

করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমলেও নতুন করে শুরু হয়েছে ডেঙ্গু সংক্রমণ। দেশজুড়ে প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কও বাড়ছে। বর্তমান ডেঙ্গু আক্রান্তদের শরীরে নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, এ বছর ডেঙ্গুরোগীদের শরীরে নতুন যেসব উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে অন্য সময়ের ডেঙ্গুর উপসর্গের তেমন মিল নেই। এসব উপসর্গের মধ্যে অন্যতম- রোগীর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, তীব্র জ্বর ও মাথাব্যথা। এসব নতুন উপসর্গের কারণে অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েও বুঝতে না পারায় হাসপাতালে যেতে দেরি করছেন। এতে চিকিৎসা বিলম্বিত হওয়ায় রোগীর অবস্থা জটিল হচ্ছে এবং অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরও ৭৫০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪১৬ জনে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৩২ হাজার ৭১৬ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৯ হাজার ৪৬৬ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১১৮ জন।  

এদিকে গত দুই-তিন সপ্তাহে ডেঙ্গু পরিস্থিতি হঠাৎ করে এতটাই খারাপ হয়েছে যে, হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগী প্রতিদিনই বাড়ছে। তাদের চাহিদামত বেড এবং চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সকল সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করেও চাপ সামলানো সম্ভব হচ্ছে না।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ডেঙ্গুর ভয়াবহতা জানিয়ে বলেন, এখন প্রত্যেক জেলায় ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালে তিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি। আমরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু রোগীর সংখ্যা না কমলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো কঠিন। তাই মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। 

মুগদা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালের দশম ফ্লোরটি আলাদাভাবে ডেঙ্গুরোগীদের জন্যই রাখা হয়েছে। ওয়ার্ডের বাইরের খোলা জায়গাকেও ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গুরোগীর চাপে এই হাসপাতালের অন্য রোগের চিকিৎসা নিতে আসা অনেকেই বেড না পেয়ে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

যাত্রাবাড়ী থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন জিয়া ইসলাম। তিনি জানান, তার ছেলের ৪-৫ দিন থেকে জ্বর ও মাথাব্যথা। জ্বরের জন্য নিজেরাই নাপা কিনে খাওয়ানোর পরও জ্বর না কমায় এবং ছেলে দুর্বল হয়ে পড়ায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখানে পরীক্ষা করার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। বর্তমানে জ্বর একটু কমলেও দুর্বলতা এখনও কাটেনি। 

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ৯৮টি বেড প্রস্তুত করা হয়। সেখানেও চলছে ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসা। এই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফারহানা রহমান জানান, এবারের ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে আলাদা কিছু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর ও প্রচণ্ড মাথাব্যথা। এসব নতুন উপসর্গের কারণে অনেকে বুঝতে পারছেন না, ডেঙ্গু কিনা। যার কারণে হাসপাতালে আসতে দেরি করছেন। এতে রোগীর শরীরে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। হাসপাতালে এনে চিকিৎসা শুরু করতে করতেই কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, এবারের ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ২০ বছরের বেশি। তবে ৪০-৫০ বছর বয়সী ডেঙ্গু আক্রান্তদের মারা যাবার হার বেশি। মারা যাওয়া রোগীদের ৩৫ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। ডেঙ্গু আক্রান্তরা দেরি করে হাসপাতালে আসার কারণে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন। 

টুটুল নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী তালতলা থেকে তার ১২ বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছেন রাজধানীর শিশু হাসপাতালে। তিনি বলেন, ছেলের যে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে এটা প্রথমে বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম, সাধারণ জ্বর তাই বাসাতেই রেখেছিলাম। তিন দিনেও জ্বর না কমায় হাসপাতালে আনার পর পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এখানে রোগীর অনেক চাপ, সিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফ্লোরে থেকেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আমাদের ছেলেটা আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছে। 

এদিকে, রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। মুগদা হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক জানান, খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ৫০০ শয্যার মুগদা জেনারেল হাসপাতাল হওয়ায় এবং এখানে কম খরচে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষেরা চিকিৎসাসেবা পান। যার কারণে সবসময় এই হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি থাকে। বর্তমানে ডেঙ্গুরোগী বেশি হওয়ায় সবাইকে বেড দিতে পারছি না, অনেককে ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি করা হচ্ছে না। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে এক লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সেবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭৯ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন মাত্র সাত জন। গত ২০২১ সালে বছরজুড়ে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজার ৪২৯ জন এবং মারা গেছেন ১০৫ জন। চলতি বছরে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে বেশি মৃত্যু হচ্ছে। আর নারীদের মৃত্যুহার পুরুষদের তুলনায় বেশি।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়