ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কম্বোডিয়ার সামরিক স্থাপনায় থাইল্যান্ডের বিমান হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ২৪ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১৬:০৯, ২৪ জুলাই ২০২৫
কম্বোডিয়ার সামরিক স্থাপনায় থাইল্যান্ডের বিমান হামলা

প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার সামরিক স্থাপনায় বৃহস্পতিবার সকালে হামলা চালিয়েছে থাইল্যাল্ডের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। উভয় পক্ষই জানিয়েছে, সীমান্ত বিরোধ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা উত্তেজনা সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে।সংঘর্ষে থাইল্যান্ডের একজন সামরিক কর্মী ও ১১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। খবর রয়টার্সের।

থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বিতর্কিত সীমান্তে থাইল্যান্ড যে ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রেখেছিল, তার মধ্যে একটি বিমান কম্বোডিয়ায় বোমাবর্ষণ করে একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে।

আরো পড়ুন:

থাই সেনাবাহিনীর উপ-মুখপাত্র রিচা সুকসুওয়ানন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী সামরিক লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে বিমান শক্তি ব্যবহার করেছি।” থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সঙ্গে তাদের সীমান্তও বন্ধ করে দিয়েছে।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি ‘ওয়াত কেও সেখা কিরি স্বারাক প্যাগোডা’র দিকে যাওয়া সড়কে দুটি বোমা ফেলেছে। 

কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছে, থাইল্যান্ড নৃশংস, বর্বর এবং সহিংস সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। সংঘর্ষ বন্ধে জাতিসংঘের কাছে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে কম্বোডিয়া।

এদিকে থাই দূতাবাস কম্বোডিয়ায় অবস্থানরত নিজেদের নাগরিকদের অবিলম্বে দেশ ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছে। সীমান্ত সংঘর্ষ ক্রমেই তীব্র হয়ে ওঠায় এই আহবান জানানো হয়েছে। দূতাবাস সতর্কবার্তায় বলেছে, “এই সংঘর্ষ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং আরো বিস্তৃত আকার ধারণ করতে পারে।”

দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “যেসব থাই নাগরিকের কম্বোডিয়ায় থাকার জরুরি প্রয়োজন নেই, তাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদে দেশটি ত্যাগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।” পাশাপাশি, কম্বোডিয়ায় অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ থেকেও বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ।

আজ বৃহস্পতিবার ভোরে সীমান্তে সংঘর্ষ শুরু করার জন্য উভয় দেশ একে অপরকে অভিযুক্ত করেছে। থাই সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়ার সেনারা প্রাচীন ‘তা মুয়েন থম’ মন্দিরের নিকটবর্তী থাই সেনাঘাঁটিতে গুলি চালিয়েছে। থাইল্যান্ডের দাবি, কম্বোডিয়া প্রথমে একটি ড্রোন পাঠায় এরপর সেনা মোতায়েন করে।

এছাড়াও কম্বোডিয়ার সেনারা থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের কাপ চেয়ং জেলায় বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে থাই সেনাবাহিনী। 

তবে, কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল মালি সোচেতা বলেন, “থাই সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কম্বোডিয়ান বাহিনী আত্মরক্ষার্থে জবাব দিয়েছে।”

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, “থাই বাহিনী কম্বোডিয়ার ওদ্দার মেঞ্চি ও প্রোহ ভিহেয়ার প্রদেশে সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।” তিনি বলেন, “কোনো সমস্যা সমাধানে আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ পথ অনুসরণ করেছি, তবে এই পরিস্থিতিতে সশস্ত্র আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদেরও সশস্ত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়েছে।”

এদিকে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার রকেট হামলায় এক থাই সেনা ও ১১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। 

থাইল্যাল্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কম্বোডিয়াকে পিছু হটার আহ্বান জানিয়েছে। হুমকি দিয়ে বলেছে, কম্বোডিয়া যদি সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে যায় তবে থাইল্যান্ড আত্মরক্ষার ব্যবস্থা আরো তীব্র করতে প্রস্তুত।

গত বুধবার এক থাই সেনা ল্যান্ডমাইনে পা হারানোর পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। এরপরই থাইল্যান্ড তাদের রাষ্ট্রদূতকে কম্বোডিয়া থেকে প্রত্যাহার করে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, বর্তমান সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যে আরো বড় আকারের সশস্ত্র সংঘাতে পরিণত হতে পারে, যা গোটা অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়