হাইকোর্টে শুনানিতে উঠছে নুসরাত হত্যা মামলা
বহুল আলোচিত ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য শিগগরই হাইকোর্টে উঠছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য মামলাটি বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার ও বিচারপতি শাহেদ নুর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ আদালতের অবকাশকালীন ছুটি শেষে নুসরাত হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নুসরাত হত্যা মামলার আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল দ্রুত শুনানির জন্য গত ১২ মার্চ অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে মেনশন (উপস্থাপন) করেছিলেন। অবকাশকালীন ছুটি শেষে বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করতে বলেছেন। আগামী ২৯ মার্চ কোর্ট খোলার পরই আমরা নুসরাত হত্যা মামলা দ্রুত শুনানির জন্য আদালতের দৃষ্টিতে আনবো। এপ্রিল মাসেই উচ্চ আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হতে পারে।’
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী আরো বলেন, নুসরাত হত্যা মামলায় ফেনীর বিচারিক আদালত ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। উচ্চ আদালতেও যেন আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে সে বিষয়ে আইনি যুক্তি তুলে ধরবো। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত আছি।’
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, নুসরাত হত্যা মামলাটি হাইকোর্টে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুতের পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নিম্ন আদালতের রায়ের পর এ মামলা চার মাসের মাথায় হাইকোর্টে শুনানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
নুসরাত হত্যা মামলায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর রায় দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে হত্যার দায়ে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলাসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ২৯ অক্টোবর ডেথ রেফারেন্সের জন্য নুসরাত হত্যা মামলার রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আসে।
সাধারণত, বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, যা ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হিসেবে পরিচিত। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায় ও নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। আর সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারাগারে থেকে জেল আপিল করতে পারেন। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করতে পারেন। ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল, জেল আপিল ও আবেদন একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।
বর্তমানে ২০১৫ সালের মামলার শুনানি হচ্ছে। আর ২০১৬ সালের ডেথ রেফারেন্সের জন্য পেপারবুক তৈরি হচ্ছে। তবে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয়। যেমন-এর আগে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলা, সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ এস আলী হত্যা মামলা ও ব্লগার রাজীব হত্যা মামলা, রাজন-রাকিব হত্যা মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুতের পর হাইকোর্টে আপিল শুনানি হয়েছে। নুসরাত হত্যা মামলাটিও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুতের পর ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, নুসরাত হত্যা মামলায় দণ্ডিত সব আসামিই আপিল করেছেন।
গত বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় সোনাগাজী থানায় নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের করা মামলায় অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন বোরকা পরা দুর্বৃত্তরা। গত বছরের ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।
অগ্নিসন্ত্রাসের এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদরাসার ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।
ঢাকা/মেহেদী/জেডআর
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন