ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

গোপীবাগে ৬ খুন: তদন্ত শেষ হয়নি ৯ বছরেও, হতাশ স্বজনরা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২১ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ১১:১৫, ২১ ডিসেম্বর ২০২২
গোপীবাগে ৬ খুন: তদন্ত শেষ হয়নি ৯ বছরেও, হতাশ স্বজনরা

ফাইল ছবি

২০১৩ সালের এইদিনে (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওয়ারীর গোপীবাগের বাসায় লুৎফর রহমান ফারুকসহ ৬ জন খুন হন। এ ঘটনা দেশসহ বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত ৯ বছরেও শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, দীর্ঘদিনেও মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশ নিহতদের পরিবার। লুৎফর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, আমরা মামলা নিয়ে হতাশ। হতাশ হলে কি আর আশা থাকে। মামলা নিয়ে আমাদের আশা-পাওয়ার কিছু নাই।

এদিকে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশের হাত ঘুরে মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রায় ৯৭ বার সময় নিয়েছে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। সর্বশেষ গত ২১ নভেম্বর মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদীর আদালত ২১ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।

মামলা সম্পর্কে বাদী ও নিহত লুৎফর রহমান ফারুকের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ৯ বছর হয়ে গেল পাঁচটি পরিবার ৬ জনকে হারিয়েছি। এখনো মামলার তদন্তই শেষ হলো না। আর বিচার তো দূরের কথা। মামলার কোনো অগ্রগতি নাই। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা আসে আবার চেঞ্জ হয়। এভাবেই চলছে মামলাটি। কবে শেষ হবে তদন্ত আর বিচার কবে পাবো। মামলা নিয়ে আমাদের আশা পাওয়ার কিছু নেই।

তিনি বলেন, বাবাকে হারিয়েছি। বড় ভাইকেও হারিয়েছি। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। কিন্তু প্রিয় মানুষদের অভাব অনুভব হয় ক্ষণে ক্ষণে। ঘটনার অনেক সময় পার হয়ে গেছে। বিচারের আশা করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছি। মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে। আর কতদিন আশা থাকবে? হতাশ হয়ে যাচ্ছি।

আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, উপস্থাপক মাওলানা ফারুকী হত্যাসহ অনেক আলোচিত মামলার তদন্তই শেষ হচ্ছে না। বিষয়গুলো সরকারের নজরে তো আছেই। সিক্স মার্ডারের ঘটনাটি দেশসহ বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

মা সালমা বেগমের প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। যদি তার চোখ বাঁধা ছিল। কিন্তু সবই তো শুনেছেন কি ঘটেছে। স্বামী-সন্তান হারানোর কষ্ট কেউ ভুলতে পারে না। মায়ের ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। আর চারজনও মায়ের কাছে ছিল সন্তানের মতই। মা এখনো কাঁদেন তাদের জন্য।

মামলা সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। এখনো খুনের আসল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। কোনো ক্লু নেই। কাজেই এ মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তদন্তের দায়িত্বে আসার পর কারাগারে আটক আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কিন্তু তারা কেউ এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মুখ খুলছে না। এ মামলার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।’

পীর লুৎফর রহমান ফারুকসহ ৬জন নির্মমভাবে খুনের ঘটনায় তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর ওয়ারী থানায় মামলা করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, লুৎফর রহমান ফারুক পীর ছিলেন। তার অনেক মুরিদ ছিলেন, যারা বাসায় যাতায়াত করতেন। তিনি নিজেকে সবার কাছে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে দাবি করতেন। তার ধর্মীয় মতাদর্শের সঙ্গে প্রচলিত ধর্মীয় মতাদর্শের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল। যার কারণে ইতিপূর্বে রাজধানীর বিবির বাগিচায় লুৎফর রহমানের ওপর হামলা চালানো হয় এবং গেন্ডারিয়া ও গোপীবাগে হামলার চেষ্টা করা হয়।

২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর মাগরিবের নামাজের আগে ১০/১২ জন লোক ধর্মীয় বিষয়ে জানার জন্য এসেছে বলে জানায়। লুৎফর রহমান ফারুক সবাইকে দরবার ঘরে বসতে দিয়ে তাদের খাবারের ব্যবস্থার জন্য মুরিদ শাহিনকে বাজারে পাঠায়। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে লুৎফর রহমান ফারুক, তার বড় ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক, তার মুরিদ শাহিন, মজিবুর, মঞ্জুরুল আলম, রাসেল ভূইয়া-সবাইকে মুখে স্কটেপ দিয়ে মুখ আটকিয়ে, হাত-পা বেঁধে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। একই সময় আসামিরা লুৎফর রহমান ফারুকের তাওই, আনোয়ার মিস্ত্রি ও অন্য একজন মুরিদকে হাত-পা-মুখ বেঁধে দরবার রুমে ফেলে রাখে। ঘটনার সময় আসামিদের একজন বলে, ওনার (লুৎফর রহমান ফারুক) আরেক ছেলে আছে আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ কোথায়? এরপর লুৎফর রহমান ফারুকের স্ত্রী ও তার পুত্রবধূর কাছে আসামিরা বলে যায়, ‘এই ৬ জনকে মারার অর্ডার ছিল, মারছি। তোরা যদি পুলিশ কিংবা মিডিয়ার কাছে মুখ খুলোস তাহলে তোদের অবস্থা ওদের মতো হবে।’

এদিকে আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন-হাদিসুর রহমান সাগর, জুলফিকার বিন সাদ ওরফে আবু ওয়াক্কাস, মামুনুর রশীদ রিপন, সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম ওরফে জিতু ওরফে নিরব ওরফে নিয়ন ওরফে হিমু, সৈয়দ আল আমিন, তরিকুল ইসলাম, আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আ. হাদী, মো. আজমির অমিত, মো. গোলাম সরোয়ার, জাহাঙ্গীর হোসেন ও রফিকুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে আজমির অমিত ও গোলাম সরোয়ার জামিনে আছেন। 

/মামুন/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়