ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

‘হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে কথা রাখেনি কেউ’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১২:০০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে কথা রাখেনি কেউ’

‘হুমায়ুন আজাদ মারা যাওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি কথা দিয়েছিলেন তার সমাধিতে একটা কিছু করে দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কক্ষের নাম হবে তার নামে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি, তাকে মনে রাখেনি। তিনি ৭২টি বই লিখে গেছেন। বইয়ের মাঝেই বেঁচে থাকবেন তিনি।’

এভাবেই দুঃখের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হন হুমায়ুন আজাদ।  ২২দিন ঢাকা সিএমএইচে এবং ৪৮দিন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এরপর ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট তিনি জার্মানির মিউনিখে মারা যান।

হামলার পরদিন তার ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি চার্জশিট দাখিল করা হয়। গত বছর ১৩ এপ্রিল ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন হত্যা মামলায় চার জঙ্গিকে ফাঁসির রায় দেন।

একই ঘটনার বিস্ফোরক আইনের মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় মামলার বিচার চলছে ধীর গতিতে। গত ২ জানুয়ারি মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিলো। কিন্তু মামলাটি সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে ঢাকার ১৩ নম্বর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ কুদরত-এ-ইলাহীর আদালতে বদলির আদেশ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আদালতে নথি পাঠানো হয়ে। তবে ওই আদালতে এখনো মামলার ধার্য তারিখ পড়েনি। 

সংশ্লিষ্ট আদালতের আইয়ুব খান নামে এক কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি বদলি হয়ে আমাদের আদালতে এসেছে। তবে এখনো ধার্য তারিখ পড়েনি।

মামলা সম্পর্কে হুমায়ুন আজাদের ছোট ভাই মো. মঞ্জুর কবির বলেন, ভাইকে হারানোর ১৮ বছর হয়ে গেলো। এটা নিয়ে প্রত্যাশার কিছু নেই। ঘটনাটি আস্তে আস্তে হালকা হয়ে গেছে। আর এ ঘটনার সাথে জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী জড়িত। আমার ভাই বারবার বলে গেছেন। কিন্তু তাকে তো মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়নি। বিচার নিয়ে আমাদের চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই।

তিনি বলেন, হুমায়ুন আজাদ মারা যাওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি বলেছিলেন, তার সমাধিতে একটা কিছু করে দেবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষের নাম তার নামে হবে। কিন্তু সবাই সে কথা ভুলে গেছে। তিনি তো আর ফিরে আসবেন না। ৭২টি বই লিখেছেন তিনি। বইয়ের মাঝেই বেঁচে থাকবেন। বই পড়ে মনে রাখবে, আকৃষ্ট হবে। আমাদের প্রত্যাশা তার সমাধিস্থলে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে কিছু একটা করা হোক। যাতে তার একটা স্মৃতি থাকে। আক্রান্ত স্থান বিশেষ কিছু করা হোক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষ তার নামে করা হোক। এরচেয়ে বেশি কিছু আমাদের বলার নেই।

চতুর্থ অথিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান চৌধুরী বলেন, মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সম্প্রতি আমাদের আদালত থেকে মামলাটি বদলি হয়ে গেছে। আমাদের আদালতে হত্যা মামলার রায় হয়েছে। বিস্ফোরক মামলাটিও আমরা শেষ করার চেষ্টা করেছি।

হুয়ায়ুন আজাদের ওপর হামলায় ঘটনায় তার ভাইয়ের দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর সিআইডির পুলিশ কাজী আবদুল মালেক পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি চার্জশিট দাখিল করেন।

২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। গত ১৩ এপ্রিল মামলার রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শুরা সদস্য মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন এবং আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ, নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু এবং সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদকে ফাঁসির রায় দেন আদালত।

অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায় ৪৯ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ইফতেখার উদ্দীন নামে এক ফটোগ্রাফার সাক্ষ্য দেন। এরপর আর কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।

মামলাটিতে ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, আতাউর রহমান সানি, নূর মোহাম্মদ সাবু ওরফে শামীম, মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার ওরফে ভাগ্নে শহিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিএমএম আদালত শায়খ আব্দুর রহমান ও আতাউর রহমান সানির ঝালকাঠির বিচারক হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দিয়ে অপর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। এরপর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে বাদী মামলাটির বর্ধিত তদন্তের আবেদন করেন।

২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল সিআইডি পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার পরিবর্তে হত্যার অভিযোগে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরা হলেন-জেএমবির সূরা সদস্য আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাওন, রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদ ও নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু।

বিস্ফোরক মামলার আসামি হলেন-আনোয়ারুল আলম, মিজানুর রহমান ও নুর মোহাম্মদ। এদের মধ্যে নুর মোহাম্মদ পলাতক রয়েছে। অপর দুই আসামি কারাগারে রয়েছে।

আসামি আনোয়ার হোসেনের আইনজীবী তামান্না আহমেদ বলেন, আনোয়ার গরীব মানুষ। ঘটনার আগে কখনো ঢাকাতে আসেনি। আর হুমায়ন আজাদ স্যার হামলাকারীদের যে বর্ণনা দিয়েছেন তার সাথে আনোয়ার যায় না। মামলার চার্জশিটে গরমিল, মৃত্যুর রিপোর্ট আসেনি। তদন্ত কর্মকর্তা ঠিকমত তদন্ত করেনি। জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। আসলে সে ঘটনার সাথে জড়িত না। 

/মামুন/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়