ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

৮ বছরেও শেষ হয়নি বর্ষবরণে যৌন হয়রানির বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০০, ১৪ এপ্রিল ২০২৩  
৮ বছরেও শেষ হয়নি বর্ষবরণে যৌন হয়রানির বিচার

৮ বছরেও শেষ হয়নি বর্ষবরণে যৌন হয়রানির বিচার। আদালতে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, দ্রুত মামলা বিচার শেষ করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, আগামী পয়লা বৈশাখের আগে মামলার সুসংবাদ দিতে পারবো।

২০১৫ সালের পয়লা বৈশাখে টিএসসিতে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। কিন্তু এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষ হয়নি আজও। ঘটনায় জড়িত ৮ আসামির মধ্যে সাত জনকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মো. কামাল নামের এক আসামিকে নিয়েই মামলার বিচারকাজ চলছে ধীর গতিতে। তবে তিনিও জামিনে আছেন। 

২০১৭ সালের ১৯ জুন মামলাটিতে একমাত্র আসামি কামালের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। সাক্ষ্য দিতে না আসায় ২৭ জন সাক্ষীর বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশ তাদের হাজির করতে পারছে না।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির করতে পারেনি। এজন্য আদালত আগামী ২৪ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত সাত জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মামলাটি নিয়ে আমরা সবাই তৎপর। আদালত থেকে সাক্ষী হাজির করতে থানায় সমন পাঠানো হয়। অনেকে ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। এজন্য সমন পাঠানো হলেও তা ফেরত আসছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মামলাটি শেষ করতে। আশা করছি, আগামী পয়লা বৈশাখের আগে মামলার বিষয়ে আমরা একটা সুসংবাদ দিতে পারবো। চেষ্টা করবো পহেলা বৈশাখের আগেই মামলার বিচার শেষ করতে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিসুর রহমান বলেন, মামলার এজাহারে কামালের নাম ছিল না। পুনঃতদন্তে চার্জশিটে তার নাম এসেছে। সে একজন ডায়াবেটিস রোগী। গরিব মানুষ। লালবাগের খাজী দেওয়ানে সে ফুটপাতে সবজির ব্যবসা করে। যেহেতু সে ডায়াবেটিস রোগী, এজন্য ওইদিন সে বের হয়েছিল হাঁটাহাটি করার জন্য। ওই ঘটনা ঘটার পরে জায়গাটা ফাঁকা হয়ে যায়। এরপর কামাল সেখানে হাঁটাহাটি করতে যায়। সেখানে যে কোনো ঘটনা ঘটছে, সে বিষয়ে কামাল কোন কিছু জানতো না। সে হেঁটে এসেছিলো আর তার ছবি ওই ভিডিও ফুটেজে এসেছে। ভিডিও ফুটেজে তার ছবি আসার কারণে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। সে ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না।’

তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকৃত আসামিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়েছে। যেনতেনভাবে চার্জশিট দিয়ে নিরাপরাধ ব্যক্তিকে মামলায় সম্পৃক্ত করেছে। ন্যায়বিচার সকলের প্রত্যাশা। প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার না করে অযথা, ভুলভাবে তাকে মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। আমরা ন্যায়বিচার আশা করছি। প্রকৃত সত্যটা উদঘাটিত হোক। নিরাপরাধ মানুষ অযথা যেন সাজা না পায় সেই আশায় আছি।’

২০১৫ সালের পয়লা বৈশাখে কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়। ওই ঘটনায় ভিকটিমদের পক্ষ থেকে কেউ মামলা না করায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। শাহবাগ থানার পুলিশ মামলাটি কয়েকদিন তদন্তের পরই তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়।

মামলার একমাস পর ১৭ মে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও থেকে আটজন যৌন হয়রানিকারীকে শনাক্ত ও তাদের ছবি পাওয়ার কথা জানান তৎকালীন পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক। শনাক্তকৃতদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। কিন্তু তাদের নাম-ঠিকানা না পাওয়ার অজুহাতে ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনও গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে শনাক্তকৃত আসামিদের মধ্যে মো. কামাল (৩৫) গ্রেপ্তার হলে তাকে প্রথমে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন করা হয়।

২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশ দেন। পুনঃতদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক একমাত্র আসামি কামালকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৯ জুন ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার ওই আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র সাত জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরা হলেন-মামলার বাদী এসআই আবুল কালাম আজাদ, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া তদন্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার দাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাত হলের শিক্ষার্থী তুহিন কান্দি দাস, চা-পান দোকানী শাহজাহান, শাহ আলম, শরবত বিক্রেতা মালেক ও মনিরুল ইসলাম। গত ১৯ মার্চ অপর সাক্ষীদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ