ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

টেন্ডারবাজি করে অবৈধ অর্থের মালিক জি কে শামীম

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১০, ১৭ জুলাই ২০২৩   আপডেট: ১০:২৩, ১৭ জুলাই ২০২৩
টেন্ডারবাজি করে অবৈধ অর্থের মালিক জি কে শামীম

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার দক্ষিণপাড়া গ্রামের মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম। চলতেন রাজকীয় হালে। সাত জন দেহরক্ষী থাকতো সব সময়।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে সাত দেহরক্ষীসহ গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর আস্তে আস্তে তার সব অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসে। র‌্যাব তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করে। মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি পুলিশ।

পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে বিপুল অর্থের মালিক হন জি কে শামীম। আর এ কাজে তাকে সাহায্য করেন তার দেহরক্ষীরা।

চার্জশিটে বলা হয়, জি কে শামীম জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানী প্রাইভেট লিমিটেডের প্রোপাইটর। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক পদে বহাল থেকে তার দেহরক্ষীদের নিজ নামীয় অস্ত্র প্রকাশ্যে বহন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করে লোকজনের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, জুয়ার ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল, গরুর হাটবাজারে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার জন্য রয়্যালিটি ফি বাবদ এক শতাংশ হিসেবে গ্রহণ করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ বৈভবের মালিক হন। জি কে শামীম অবৈধ অস্ত্র প্রকাশ্যে বহন করে সংঘবদ্ধভাবে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে অর্জিত অবৈধ অর্থ বিদেশ পাচার করার জন্য মজুত করেছিলেন।

এদিকে, রাজধানীর গুলশান থানার মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় জি কে শামীমসহ ৮ জনের রায়ের দিন আজ ধার্য রয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালত এ রায় ঘোষণা করবেন। গত ২৫ জুন মামলাটি রায়ের জন্য ছিল। কিন্তু ওইদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় তা পিছিয়ে ১৭ জুলাই ঠিক করেন আদালত।

রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশ করছে রাষ্ট্রপক্ষ। আর আসামিপক্ষ বলছে, তারা খালাস পাবেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান বলেন, জি কে শামীমসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে করা মামলায় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সব অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, তাদের সর্বোচ্চ সাজা ১২ বছরের কারাদণ্ড হবে।

জি কে শামীমের আইনজীবী শাহিনুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি। কাজেই আশা করছি, তারা খালাস পাবেন।

মামলার আসামি হলেন-মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মোরাদ হোসেন, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. শহীদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন ও মো. আনিছুল ইসলাম।

গত ২৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে। ৬ মার্চ শেষ করে।

গত ১৫ জুন রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের এ তারিখ ধার্য করেন। এর আগে ১৭ জানুয়ারি আত্মপক্ষ শুনানিতে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। গত ২১ ডিসেম্বর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।

২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিকেতনের নিজ বাসা থেকে শামীমকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার এফডিআর চেকসহ বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি টাকা জব্দ করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি অস্ত্রও পাওয়া যায়।

এ ঘটনার পর র‌্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার মিজানুর রহমান ২১ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আবু সাঈদ তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৪ আগস্ট আদালতে জিকে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

/মামুন/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ