ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

৭ বছরেও শুরু হয়নি জাহাজ বাড়ির জঙ্গি আস্তানার মামলার বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৬ জুলাই ২০২৩   আপডেট: ০৯:২৩, ২৬ জুলাই ২০২৩
৭ বছরেও শুরু হয়নি জাহাজ বাড়ির জঙ্গি আস্তানার মামলার বিচার

সাত বছর আগে কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার সাত বছরেও শুরু হয়নি। কবে নাগাদ মামলার বিচার শুরু হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। তবে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, অতি দ্রুত মামলার বিচার শুরু হবে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ভয়ঙ্কর হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হামলার তিন বছর চার মাস ২৬ দিন পর ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ে আট আসামির মধ্যে সাত জনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাস দেন আদালত। এ ঘটনার মাত্র ২৫ দিন পর এই দিনে (২৬ জুলাই) কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এতে ৯ জঙ্গি মারা যায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। সেখানে চার বছর পার হলেও এ মামলার বিচারই শুরু হয়নি। মামলাটি অধিকতর চার্জ শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে। ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটির চার্জ শুনানি শেষে ২৩ মার্চ আদেশের জন্য রাখেন আদালত। এরপর বিভিন্ন কারণে আর চার্জ শুনানি হয়নি। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার এক আসামির মৃত্যু প্রতিবেদন ও অধিকতর চার্জ শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, এটি একটি আলোচিত মামলা। আমাদের আদালত থেকে অনেক আলোচিত মামলার বিচার শেষ করেছি। কিন্তু কিছু কারণে মামলার বিচার এখনও শুরু হয়নি। অনেক সময় কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয় না। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর মামলাটির এক আসামির মৃত্যু সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও চার্জ শুনানির জন্য আছে। মৃত্যু প্রতিবেদন আসলে এ মামলার চার্জ গঠন হবে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষীদের হাজির করে দ্রুত এ মামলাটির বিচার শেষ করা হবে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর এ মামলার আসামি মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর মারা গেছেন বলে আদালতকে জানানো হয়। এরপর আদালত এ মামলায় মৃত্যু প্রতিবেদন ও অধিকতর চার্জ শুনানির জন্য ধার্য করেন। পরবর্তীতে পাঁচটি ধার্য তারিখ পার হলেও মৃত্যু সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি পুলিশ। এতে এ মামলার চার্জ শুনানিও আটকে গেছে। 

এ মামলার আসামিরা হলেন- রাকিকুল হাসান রিগ্যান, সালাহ্ উদ্দিন কামরান, আব্দুর রউফ প্রধান, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান, মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন, আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট, মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর, আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে কুলমেন ও হাদিসুর রহমান সাগর। আসামিদের মধ্যে আজাদুল কবিরাজ পলাতক রয়েছেন। আব্দুর রউফ জামিনে আছেন। আসামি আবুল কাশেম মারা গেছে। এছাড়া, অপর সাত আসামি কারাগারে আছেন।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ‘জাহাজ বিল্ডিং’ এর পঞ্চম তলায় ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই ভোরে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে ৯ সন্দেহভাজন জঙ্গি মারা যায়। হাসান নামে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে পুলিশ। পালিয়ে যায় একজন। তারা সবাই জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য।

ওই ঘটনায় ২৭ জুলাই রাতে মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলম বাদী মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

২০১৯ সালের ৯ মে মামলাটি বিচারের জন্য সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই আদালত ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন। 

আসামি সালাউদ্দিনের আইনজীবী আফরোজা পারভীন সিলভিয়া বলেন, সালাউদ্দিন এ ঘটনার সাথে জড়িত না, সে নির্দোষ। বিচারও শুরু হয় না, আবার আসামি জামিনও পাচ্ছে না। আশা করি, এ মামলার বিচার দ্রুত শেষ হবে। ন্যায় বিচারে তিনি খালাস পাবেন।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়