ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

তারেক-জোবায়দার সর্বোচ্চ সাজার প্রত্যাশায় দুদক

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৯, ১ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১২:৩৭, ১ আগস্ট ২০২৩
তারেক-জোবায়দার সর্বোচ্চ সাজার প্রত্যাশায় দুদক

তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান (ফাইল ফটো)

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলায় রায়ের দিন আগামীকাল বুধবার (২ আগস্ট) ধার্য রয়েছে। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করবেন।

তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পলাতক আছেন। এ কারণে তারা মামলায় আইনি লড়াই করতে পারেননি।

রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পৃথক দুই ধারায় তাদের সর্বোচ্চ সাজা ১৩ বছরের কারাদণ্ড হবে বলে আশা করছেন দুদকের আইনজীবী। তারেক রহমানের পক্ষের আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, তার (তারেক) জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকার তড়িঘড়ি করে মামলার রায় দিচ্ছে।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে অবৈধ উপার্জন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য জানতে পেরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তারেক রহমানকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিস দেয়। তিনি জেলখানায় থাকা অবস্থায় নোটিস গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান নোটিসের জবাব দেওয়ার জন্য দুদকের কাছে সময় চান। সুতরাং, তারা ঘটনা সম্পর্কে অবহিত। তারা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। তারা যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন, তা নিয়ে দুদক প্রাথমিক ইনকোয়ারি করেছিল এবং এফআইআর করার সময় চার কোটি ৭৩ লাখ টাকার তথ্য গোপন ও বিভিন্ন অভিযোগ ওই মুহূর্তে আমরা পেয়েছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়। পরবর্তীতে তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় দুদক এবং তদন্ত কর্মকর্তা। তারপরও দুদক নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ১৮টা সিজার লিস্টের ভিত্তিতে এফআইআরে যে ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার অভিযোগ ছিল, সেখান থেকে সরে এসে ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা অবৈধ উপার্জন এবং ৫৮ লাখ টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। দুদক অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে সঠিকভাবে তদন্ত করে চার্জশিট দাখিল করে। 

তিনি বলেন, তারেক রহমান ও তার স্ত্রীকে হাজির হওয়ার জন্য আমরা বার বার নোটিস দিয়েছি। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তার পক্ষে আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হন। তারা তাকে ডিফেন্ড করার জন্য চেষ্টা করেছেন। এমনকি, তারা প্রাইভেট আইনজীবী চেয়েও এখানে ডিফেন্ড করার জন্য তার পক্ষ থেকে বক্তব্য দিয়েছে। তারেক যেহেতু পলাতক, এজন্য সুযোগ পাননি। তিনি দেশ ও জাতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। তিনি উপস্থিত হননি, তার স্ত্রীও উপস্থিত হননি। সে কারণে মাননীয় আদালত তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার করতে বাধ্য হয়েছেন। এ বাধ্যবাধকতার কারণেই ৪২ জন সাক্ষী আমরা উপস্থিত করি। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি। তথ্য গোপনের অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা তিন বছর এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছর। আমরা আশা করছি, তাদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।

তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে আইনজীবী আইনি লড়াই করতে পারেননি। তবে, প্রতিটি ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হন তাদের নিয়োজিত আগের আইনজীবী। তাদেরই একজন জাকির হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যান। তার সাথে যান স্ত্রী জোবায়দা রহমানও। তাদের মামলায় পলাতক দেখানো হয়েছে। তাদের পক্ষে ডিপেন্ড করার সুযোগ ছিল না। তবে, আমরা দেখেছি, ১৯৮২ সালের ঘটনা নিয়ে এ মামলা। মামলাটির অভিযোগ মিথ্যা। ১ টাকাও কেউ তছরুপ করেনি। কোনোরকম দুর্নীতি হয়নি। এ মামলায় আসামি ছিল তিনজন। তারেক রহমানের স্ত্রী হওয়ার কারণে জোবায়দা রহমানকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। মামলায় জোবায়দা রহমানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মামলায় জোবায়দা রহমান এবং তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকে সুপ্রিম কোর্ট খালাস দিয়েছেন। তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা কারণে রাজনৈতিকভাবে তড়িঘড়ি করে মামলার রায় দেওয়ার প্ল্যান করছে সরকার। আমরা এখানে ন্যায়বিচার আশা করি না।

গত ২৭ জুলাই আদালত যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ২ আগস্ট ধার্য করেন।

২০২২ সালের ২৬ জুন হাইকোর্ট তারেক ও জোবায়দাকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করেন এবং ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার দুর্নীতি মামলা দায়ের ও তার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে করা পৃথক রিট আবেদন খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা এ মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে যত দ্রুত সম্ভব বিচার কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে এ রায় পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে মামলার রেকর্ড ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠাতে বলা হয়।

গত বছর ১ নভেম্বর আদালত তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাদের আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়। তারপরও তারা হাজির হননি। গত ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন একই আদালত। গত ২৪ জুলাই মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। 

ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা অর্থাৎ তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। তবে, উচ্চ আদালত ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বাতিল করেন।

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়