ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

ব্লগার নিলয় হত্যা

‘বিচার হলে নিহতের কাছের মানুষগুলো শান্তি পাবে’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ৭ আগস্ট ২০২৩  
‘বিচার হলে নিহতের কাছের মানুষগুলো শান্তি পাবে’

ব্লগার নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল (ফাইল ফটো)

সাত বছর আগে রাজধানীর গোড়ানে নিজ বাসায় খুন হন ব্লগার নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। কবে নাগাদ বিচার শেষ হবে, তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। 

নিলয় হত্যা মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছে নিলয়ের পরিবার। তার স্ত্রী আশামণি বলেছেন, ‘এভাবে যাদের (ব্লগার) হত্যা করা হয়েছে, সেই মানুষগুলো তো আর আসবে না। তবে যদি বিচার হয়, তাহলে তাদের কাছের মানুষগুলো শান্তি পাবে।’

২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে নিজ বাসায় খুন হন ব্লগার নিলয়। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি ১৩ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক বিন কাদের। এর পর ৬ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন আদালত। কিন্তু, ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত ২২ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। সেদিন নিলয়ের স্ত্রী আশামণি সাক্ষ্য দেন। এর পর এক বছরে আর কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা যায়নি। আদালত কয়েকজন সাক্ষীর বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তারপরও পুলিশ সাক্ষীদের হাজির করতে পারেনি। সর্বশেষ গত ২ আগস্ট মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ঠিক করেছেন।

মামলার বাদী নিলয়ের স্ত্রী আশামণি বলেন, ‘ভেবেছিলাম, ২-১ বছরের মধ্যেই মামলাটির বিচার শেষ হবে। কিন্তু সাত বছর হয়ে গেলেও মামলার বিচার শেষ হলো না। এই দিন এলে অনেকে যোগাযোগ করে। পরে আবার ভুলে যায়।’

তিনি বলেন, ‘একটা মানুষ চলে গেছে। সে তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু, বিচার হলে তো আমরা শান্তি পাবো। সেই আশায় আছি। বিচারের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু, কবে নাগাদ হবে, জানি না। ন্যায়বিচারের আশায় আছি। আমি একা বিচার চাইলে তো হবে না। সরকার যদি চায়, তাহলে হয়ত বিচারটা দ্রুত শেষ হবে। এভাবে যাদের (ব্লগার) হত্যা করা হয়েছে, সেই মানুষগুলো তো আর আসবে না। তবে, যদি বিচার হয়, তাহলে তাদের কাছের মানুষগুলো আত্মতৃপ্তি পাবে, শান্তি পাবে। শুধু শুধু মানুষগুলোকে হত্যা করলো। দোষীদের দৃষ্টান্তুমূলক সাজা চাই।’

সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আবদুস সাত্তার দুলাল বলেছেন, ‘মামলাটিতে একজনের সাক্ষ্য হয়েছে। এরপর অপর সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে আদালত থেকে সমন পাঠানো হয়। কিন্তু, পুলিশ সাক্ষীদের হাজির করতে পারে না। কেন সাক্ষী আসে না, পুলিশ সে বিষয়ে রিপোর্টও দেয় না। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের গ্রেপ্তার করে এনে সাক্ষ্য দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। মামলাটি সেনসিটিভ। সাক্ষীরা যদি নিয়মিত আদালতে আসেন, তাহলে মামলার বিচার দ্রুত শেষ হবে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার শেষ করতে। বিচারে যেন আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হয়, আর ভুক্তভোগী পরিবার যেন নায়বিচার পায়।’

২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানের ১৬৭ নম্বর বাড়ির পঞ্চমতলায় ভাড়া বাসায় খুন হন ব্লগার নিলয়। বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে চার যুবক নিলয়ের বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী আশামণিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নীলয়কে হত্যা করে। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিলয়ের স্ত্রী অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

২০২০ সালের ৪ অক্টোবর মামলাটি তদন্ত শেষে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়াসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস।

চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হলো—মো. মাসুম রানা, সাদ আল নাহিয়ান, মো. কাওসার হোসেন খাঁন, মো. কামাল হোসেন সরদার, মাওলানা মুফতি আব্দুল গাফফার, মো. মর্তুজা ফয়সলে সাব্বির, মো. তারেকুল আলম ওরফে তারেক, খায়রুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাহাব, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, মো. আরাফাত রহমান ও মো. শেখ আব্দুল্লাহ ওরফে জুবায়ের।

আসামিদের মধ্যে মেজর জিয়া ও সাদ আল নাহিয়ান পলাতক। গত বছর নভেম্বর মাসে আবু সিদ্দিক সোহেল আদালত থেকে পালিয়েছে। আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, খাইরুল ইসলাম, আরাফাত রহমান সিয়াম ও মোজাম্মেল হোসেন কারাগারে আছে। অপর আসামিরা জামিনে আছে।

মামলা সম্পর্কে আসামি তারেকুল ও আব্দুল গাফফারের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘তারা ঘটনার সাথে জড়িত না। এজাহারে নাম ছিল না। সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপরও তাদের অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মামলাটিতে সাক্ষ্য চলছে। বাদী তাদের নাম বলেননি। এখন ট্রায়ালের মাধমে কিভাবে আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ করা যায়, সেই চেষ্টা করব। আশা করছি, ন্যায়বিচার পাবো।’

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়