ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

শোক দিবসের কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা: বিচার শেষ হয়নি ৬ বছরেও

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১৫ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ০৯:০৮, ১৫ আগস্ট ২০২৩
শোক দিবসের কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা: বিচার শেষ হয়নি ৬ বছরেও

৬ বছর আগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আগে ঢাকার পান্থপথের ওলিও হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার চলছে। আড়াই বছরের অধিক সময় আগে চার্জ গঠন করে মামলার বিচার শুরু হয়। এই দীর্ঘ সময়ে মাত্র একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তবুও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না।

পান্থপথের ওলিও হোটেলে আশ্রয় নিয়ে জঙ্গিরা ২০১৭ সালের ১৫ আগস্টের কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। তবে তাদের পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৪ আগস্ট রাত থেকে অভিযানের মধ্যে ওলিও হোটেল ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। পরে সোয়াট নামে অভিযানে। এক পর্যায়ে সকালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এক জঙ্গি আত্মঘাতী হন।

ঘটনার পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২৭ মাস মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধ বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে বিচারাধীন। চার্জ গঠনের প্রায় আড়াই বছর পর গত ১৯ জুন মামলার বাদী কলাবাগান থানার এসআই সৈয়দ ইমরুল সাহেদ সাক্ষ্য দেন। এরপর আর কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। 

সর্বশেষ গত ১ আগস্ট মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন আদালত আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। কয়েক সাক্ষীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট টাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ান খান (জাকির) বলেন, মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এক জনের সাক্ষ্য হয়েছে। জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেও সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। সাক্ষী হাজির করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাক্ষী আসলে মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো।

কয়েকজন আসামিপক্ষের আইনজীবী সুব্রত দেবনাথ রানা বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটা কিছু তো হোক। সাক্ষী আসুক আমরা ট্রায়াল ফেস করতে রাজি আছি। তবুও মামলাটির বিচার যেন দ্রুত শেষ হক। হয় আসামিরা খালাস পাবে নয়তো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাজা হবে। একটা কিছু হওয়া প্রয়োজন। এভাবে বিনাবিচারে আর কত দিন। সাক্ষীদের জেরা, যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে আসামিদের কীভাবে নির্দোষ প্রমাণ করা যায় সেই চেষ্টা করবো। তারা যেন ন্যায়বিচার পায় সে জন্য কাজ করবো। আশা করি, আসামিরা ন্যায় বিচার পাবেন।

আবুল কাশেম নামে এক আসামির আইনজীবী এম সাব্বির আহমেদ বলেন, জামালপুরে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। সেই মামলায় তার সাজাও হয়। এরই মাঝে তাকে এ মামলায় শ্যোন অরেস্ট দেখানো হয়। ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। মামলার সাক্ষী আসছে না। কিন্তু আমাদের নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই ৩০০ মিটার দূরে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা ওই অভিযানের এক পর্যায়ে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে।

হামলার পরিকল্পনা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই সময় কলাবাগান থানায় ১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন কলাবাগান থানার এসআই সৈয়দ ইমরুল সাহেদ। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজু আহম্মেদ।

চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলেন- আকরাম হোসেন খান নিলয় ওরফে স্লেড উইলসন, নাজমুল হাসান ওরফে মামুন, আবুল কাশেম ফকির ওরফে আবু মুসাব, আব্দুল্লাহ আইচান কবিরাজ ওরফে রফিক ,তারেক মোহাম্মদ ওরফে আদনান, কামরুল ইসলাম শাকিল ওরফে হারিকেন ওরফে রোবট ওরফে তানজিম, লুলু সরদার ওরফে সহিদ ওরফে মিস্ত্রি, তাজরীন খানম শুভ, সাদিয়া হোসনা লাকী , আবু তুরাব খান, তানভির ইয়াসিন করিম  ওরফে হিটম্যান ওরফে জিন, হুমায়রা জাকির নাবিলা, নব মুসলিম আব্দুল্লাহ  ও তাজুল ইসলাম ওরফে ছোটন ওরফে মোহাম্মদ ওরফে ফাহিম। এদের মধ্যে তাজুল ইসলাম কিশোর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শিশু আইনে পৃথক একটি চার্জশিট দাখিল করা হয়।

আসামিদের মধ্যে আবু তুরাব খান ও সাদিয়া হোসনা লাকীর ছেলে আকরাম হোসেন ও মেয়ে তাজরীন খান।

২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি আবু তুরাব খান ও লুলু সরদারকে অব্যাহতি দিয়ে ১১ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়