ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

দুই সন্তানকে হত্যা: দুজনের সাক্ষ্যে আটকে আছে বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
দুই সন্তানকে হত্যা: দুজনের সাক্ষ্যে আটকে আছে বিচার

ফাইল ফটো

রাজধানীর বনশ্রীতে সাড়ে সাত বছর আগে দুই শিশুকে হত্যার পর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বিষাক্ত খাবারে তাদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, ময়নাতদন্তে জানা যায়, শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে ওই দুই শিশুকে। পরে শিশু দুটির মা মাহফুজা মালেক জেসমিনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন তাদের বাবা। সে মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক এবং তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিতে না আসায় বিচার আটকে আছে। তারা সাক্ষ্য দিলেই আলোচিত এ মামলার বিচার শেষ হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মামলাটি ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ লুৎফুল মজীদ নয়নের আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু, ওই দিন কোনো সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হননি। তাই, আদালত আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।

মামলার নথি থেকে দেখা যায়, মামলাটিতে সাড়ে তিন বছর আগে ২০২০ সালের ৩ মার্চ সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা রামপুরা থানার পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান। এর পর থেকে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ডা. প্রদীপ বিশ্বাস এবং আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক লোকমান হেকিমকে সাক্ষ্য দিতে সমন পাঠানো হয়। তারপরও তারা সাক্ষ্য দিতে আসছেন না। আদালত তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হেলাল বলেছেন, মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ২০ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক এবং চার্জশিট জমা দেওয়া তদন্ত কর্মকর্তা ভাইটাল সাক্ষী। আদালত আদেশ দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সমন পাঠাই। এটা কার্যকরের দায়িত্ব পুলিশের। তারা সাক্ষী হাজির করতে পারছে না। এদিকে তারা সাক্ষ্য দিতে না আসায় তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আদালতকে জানিয়ে আমরা চেষ্টা করব দুই সাক্ষীকে আদালতে হাজির করার। চিকিৎসককে যদি হাজির করতে না পারি, তদন্ত কর্মকর্তাকে করব, যদি তিনি মারা না গিয়ে থাকেন।

এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, এর আগে একবার পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে আপসের সাক্ষ্য দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা এর বিরোধিতা করেছি। এটা হত্যা মামলা, সে হোক বাবা বা মা। এখানে আপসের কোনো সুযোগ নেই। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি, তার সর্বোচ্চ সাজা হবে। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী মাজহারুল ইসলাম হারুন বলেন, স্বজ্ঞানে কোনো মা তার সন্তানদের হত্যা করতে পারেন না। একটা সময় তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। সে সময় হয়তো তিনি দুই সন্তানকে মেরে ফেলতে পারেন। মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে। কিন্তু, সাক্ষী আসছে না। আমাদের তো নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। হয়রানির শিকার হচ্ছি আমরা।

২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রামপুরা থানাধীন বনশ্রীর বি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর সাততলা বাড়ির চতুর্থ তলা থেকে ইশরাত জাহান অরণী (১২) ও তার ভাই আলভী আমানকে (৭) অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ৮টার দিকে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর দুই শিশুর বাবা-মাসহ পরিবারের অনেকেই খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন।

৩ মার্চ দুই সন্তানকে হত্যার অভিযোগ এনে মাহফুজা মালেকের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় মামলা করেন তার স্বামী আমান উল্লাহ। তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন মাহফুজা মালেক।

১৪ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও জোনাল টিমের পরিদর্শক লোকমান হেকিম হত্যার অভিযোগে একমাত্র আসামি মাহফুজা মালেকের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ছেলে-মেয়ে পড়ালেখায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের হত্যা করেন মাহফুজা মালেক জেসমিন। প্রথমে তিনি তার মেয়ে নুসরাত জাহান অরণীকে গলায় হাত চেপে ধরে ও ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে ছেলে আলভী আমানকেও একই ওড়না দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় নাক ও মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি জামিন পান মাহফুজা মালেক। বর্তমানে তিনি জামিনেই আছেন।

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়