ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

পি কে হালদারসহ ১৪ জনের সর্বোচ্চ সাজা চায় দুদক

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ৮ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১০:১২, ৮ অক্টোবর ২০২৩
পি কে হালদারসহ ১৪ জনের সর্বোচ্চ সাজা চায় দুদক

গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে করা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় রায় আজ। 

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওই দুটি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করে তা পাচার করেছেন। রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জনেও অভিযোগ। টাকা পাচারের পাশাপাশি নিজেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

গত বছর ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাকে গ্রেপ্তার। বর্তমানে ভারতের কারাগারে রয়েছেন তিনি।

এদিকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং মামলাটি রায়ের অপেক্ষায়।

রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালত পি কে হালদারসহ ১৪ জনের মামলায় রায় ঘোষণা করবেন। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা ২২ বছরের কারাদণ্ড প্রত্যাশা করছে দুদক। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন। তারা ন্যায়বিচার প্রার্থণা করছেন।

দুদকের আইনজীবী মীর আহাম্মদ আলী সালাম বলেন, আপনারা জানেন এটি একটি বহুল আলোচিত মামলা। পি কে হালদারসহ মোট আসামি ১৪ জন। পি কে হালদার এ মামলায় পলাতক রয়েছেন। তিনি ভারতের কারাগারে আটক আছেন। এছাড়া, তার মাসহ ৯ জন পলাতক। চার জন কারাগারে আছেন। দুদকের পক্ষ থেকে এ মামলায় শতাধিক সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, তাদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।

সর্বোচ্চ কত বছরের সাজা হতে পারে এমন প্রশ্নে দুদকের এ আইনজীবী জানান, দুর্নীতির অভিযোগে সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে ১২ বছরের সাজা হতে পারে। আমরা তাদের ২২ বছরের সাজাই প্রত্যাশা করছি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম বলেন, পি কে হালদার পলাতক রয়েছেন। তিনি দেশে নেই। মামলায় ১৪ জন আসামি হলেও চার জন আইনি লড়াই করেছেন। আমরা যাদের বিরুদ্ধে লড়েছি তাদের মধ্যে কাউকে বলা হচ্ছে পি কে হালদারের আত্মীয়, আবার কাউকে বলা হচ্ছে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মী। তাদের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং করা হয়েছে বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে। আমরা বলেছি পি কে হালদার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে যে কাজগুলো করেছেন, তাদের না জানিয়েছে করেছে। কাজেই এ বিষয়ে তাদের নলেজ থাকার কথা নয়। পি কে হালদার কখনও কখনও তার আত্মীয় স্বজনকে অ্যাবইউজ করেছেন বিভিন্নভাবে। যেগুলো তারা জানতেও পারেনি।

রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন বলেন, অবশ্যই ভালো কিছুই আশা করছি। তবে ভালো হতো যদি পি কে হালদার গ্রেপ্তার হতেন এবং মামলা কনটেস্ট করতেন। তাহলে হয়তো প্রকৃত সত্যটা কি ছিলো এটা সবার সামনে চলে আসতে পারতো। পি কে হালদারের অনুপস্থিতিতে মামলার ট্রায়াল হয়ে গেছে। এখন কিছু করারও নেই। আশা করছি, পি কে হালদারের যারা কর্মী, আত্মীয় ছিলেন তাদের বিষয়টি আদালত বিবেচনা করবেন। টাকা পাচারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই মামলায় এমন কোনো তথ্য আসেনি যে পি কে হালদার দেশের বাইরে টাকা নিয়ে গেছেন। এমন কোনো এভিডেন্স আসেনি। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা নিয়েছেন। সেই টাকাগুলো আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে পার্ছেস করা হয়েছে সে তথ্যগুলো মামলাতে এসেছে। তাহলে মানিলন্ডারিং কীভাবে হয়েছে, আদৌও দেশের বাইরে টাকা নিয়েছেন, আদৌও অ্যাবইউজ করেছেন কি না জিনিসগুলো তো আড়ালেই রয়ে গেলো, সামনে আসলো না। আমরা আমাদের বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করেছি। এখন দেখি কি হয়।

গত ৪ অক্টোবর দুদক ও আসামিপক্ষের  যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের এ তারিখ ঠিক করেন।

মামলার ১৪ আসামির মধ্যে সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা, অবন্তিকা বড়াল ও শংখ বেপারী কারাগারে আছেন। পি কে হালদারসহ ১০ জন পলাতক রয়েছেন।

পলাতক অপর আসামিরা হলেন- পি কে হালদারের মা লিলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।

২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।

মামলার এজাহারে বলা হয়, পি কে হালদার বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন। মামলাটি তদন্ত করে চার্জশিট দাখিল করে দুদক৷ চার্জশিটে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে প্রায় এক কোটি ১৭ লাখ কানাডিয়ান ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশটিতে পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর এ মামলায় চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়