ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

বিচারের আশায় আদালতে ঘুরছেন রাজু

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১১, ২৫ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ০৯:২৯, ২৫ অক্টোবর ২০২৩
বিচারের আশায় আদালতে ঘুরছেন রাজু

রাজিব কর রাজু

২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কোতয়ালী থানাধীন গোয়ালনগর এলাকার বাসা থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী রাজিব কর রাজুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে প্রায় এক বছর চিকিৎসা নেন তিনি। এরপর মামলা করতে কোতয়ালী থানায় যান। থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নিয়ে তাকে ঘোরাতে থাকেন। পরে গত বছরের ২২ মার্চ রাজু ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। মামলায় কোতয়ালী থানার সাব-ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান ও আব্দুল জলিল এবং এএসআই ফরিদ ভূঁইয়াকে আসামি করা হয়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক (বর্তমানে বিচারপতি) কেএম ইমরুল কায়েশ বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনফেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি রাজধানীর কোতয়ালী থানার তিন পুলিশ সদস্যকে নির্দোষ বলে দাবি করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।  তবে পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে গুরুদণ্ড প্রদান করেছে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ।

এদিকে পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদী গত মার্চ মাসে নারাজি দাখিল করলেও এ পর্যন্ত আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেননি। ফলে আদালতে সে হয়রানি হচ্ছেন মর্মে অভিযোগ করেছেন রাজু। বিচারের আশায় আদালতে ঘুরছেন তিনি।

রাজু বলেন, ওরা আমার সব নিয়ে গেছে। আর্থিকভাবে চরম অস্বচ্ছল অবস্থায় আছি। আর ওদের নির্যাতনে বসতে, দাঁড়াতে পারি না। আর শীতকালে পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়। শারীরিক নির্যাতনের বিচার চাইতে এসে ধাপে ধাপে নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। কারণ হিসেবে বলেন, ওই ঘটনার পর ঢাকা ছেড়ে কুমিল্লাতে চলে যাই। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে নারাজি দাখিল করি।

তিনি বলেন, ৫ বার আদালতে এসেছি জবানবন্দি দিতে। কিন্তু তা এখনো নেওয়া হয়নি। এর আগে তদন্তের স্বার্থে পিবিআই ডাকলে তখনও আসতে হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে বিচার চাইতে আদালতে আসি। এখনো আসছি। কিন্ত বিচার তো পাচ্ছি না। 

রাজু বলেন, বাদীর অভিযোগ পিবিআই সম্পূর্ণরূপে আসামিদের পক্ষ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন শ্রী কৃষ্ণ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি আমাকে স্বর্ণ কেনার জন্য টাকা দেয়। তার অভিযোগের ভিত্তিতে আমার বাসায় আসামিরা আসে বলেছেন। যে ব্যক্তিকে আমি চিনি না, দেখিনি। সে ব্যক্তির সঙ্গে আমার একটি আপস নামা দেখানো হয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করেছেন। মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় একাধিক জায়গা থেকে টাকা নিয়ে আপসের প্রস্তাব করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকেও আপসের প্রস্তাব এসেছে। আমি রাজি হইনি। বিচার চেয়েছি। যার কারণে সব জায়গায় আমি হয়রানির শিকার হচ্ছি।

তিনি বলেন, এ ঘটনার কিছুদিন পর আমার বেবির জন্ম হয়। তখন এমন অবস্থা, বাচ্চাকে দুধ কিনে খাওয়াবো সেই টাকাও ছিলো না। ধার-দেনা, করে চলতে হয়েছে। আমার সব পুঁজি তারা শেষ করে দিছে, কি নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। নির্যাতনের প্রমাণ মেডিক্যাল রিপোর্টেও আছে। তারপরও পিবিআই বলছে তারা নির্যাতন করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই এসআই মিজান ও এএসআই ফরিদ ভূঁইয়া সাদা পোশাকে ভিকটিমের ৬৯ নম্বর গোয়ালনগর কোতয়ালীর বাসায় সিলিং ভেঙে ঢুকে। কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আসামিরা ভিকটিম রাজুকে হাতকড়া পরিয়ে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। ভিকটিমের বাসা তল্লাশি করে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩৮ টাকার স্বর্ণ এবং তার মায়ের চোখ অপারেশন করার ৪১ হাজার ৩০০ টাকা ছাড়াও বাসা থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ কোতয়ালী থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আসামিরা তার ওপর অমানসিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনে ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসা শেষে তাকে আবার থানায় নিয়ে আসা হয়। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজুকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে সাদা কাগজে নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর লিখে রাখেন। এরপর তাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘তুই যদি মুখ খুলিস এবং তোকে যদি তাঁতীবাজার এলাকায় দেখতে পাই তবে মেরে ফেলব।’ আসামিদের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে ভিকটিম প্রায় এক বছর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে এ বিষয়ে ভিকটিম আদালতে মামলা করেন।

অন্যদিকে বাদী এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে আবেদন করলে অভিযোগটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ হেডকোয়াটার্সে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রদান করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় মামলায় অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশ আসামি মিজানুর রহমান, মো. আব্দুল জলিল এবং ফরিদ মিয়াকে একটি ইনক্রিমেন্ট সমপরিমাণ অর্থ আগামী ৫ বছরের জন্য কর্তনের আদেশ দেন। আদালতে করা মামলায় পিবিআই ঢাকা মেট্টো (উত্তর) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরী অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদন দাখিলের পর বাদী গত ২ মার্চ আদালতে নারাজি দাখিল করেন। নারাজি দাখিলের দিন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের বিধান থাকলেও ওই দিনসহ পাঁটি ধার্য তারিখ পার হয়েছে। তবে এখনো আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেনি।

এ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, নারাজি দিয়েছেন, আদালত এখনো জবানবন্দি কেন নেননি, তা আমি বলতে পারবো না। যেহেতু তিনি নারাজি দিয়েছেন আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করবেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, যেদিন নারাজি দাখিল করি সেদিন সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আদালত সেদিন আর জবানবন্দি গ্রহণ করেন নাই। সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর তারিখ ধার্য ছিল। ওইদিনও আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করেন নাই। 

/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়