ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

মায়ের ১০ মিনিটের প্রতীক্ষা, মেয়ে ফিরলেন লাশ হয়ে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০২, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৩:২৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩
মায়ের ১০ মিনিটের প্রতীক্ষা, মেয়ে ফিরলেন লাশ হয়ে

সাইদা ইসলাম মিম

স্বামীকে হারিয়েছেন ২২ বছর আগে। তিন সন্তানকে নিয়ে নাজমা আক্তারের সংসার। অনেক সংগ্রাম করে সন্তানদের বড় করছিলেন তিনি। এর মধ্যে ১১ বছর আগে বড় ছেলেটাও মারা যায়। এরপর এক ছেলে ও এক মেয়েকে বুকে জড়িয়ে সুখে-দুঃখে দিন কাটছিল তার। কিন্তু এই চলার গতিও রোধ হলো। এবার একমাত্র মেয়ে সাইদা ইসলাম মিম হলেন হত্যার শিকার।

গত ৮ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচে সোহাগ কাউন্টারের সামনে থেকে নৃত্যশিল্পী মিমের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত্যুর আগে মায়ের সঙ্গে কথা হয় মিমের। মাকে তিনি বলেছিলেন, বাসায় ফিরতে আর ১০ মিনিট লাগবে। সেই ১০ মিনিট শেষ হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু মিম আর প্রাণ নিয়ে বাসায় ফেরেননি।  

এ ঘটনায় নাজমা আক্তার রমনা মডেল থানায় ৯ অক্টোবর মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মিমের প্রেমিক নাজমুল হুদা সজলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে সজল কারাগারে রয়েছে। 

এদিকে সজলের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ১০ অক্টোবর দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে রমনা মডেল থানাধীন মালিবাগস্থ স্টাফ কোয়ার্টারের দেয়ালসংলগ্ন ফ্লাইওভারের ওপর থেকে মিমকে ফেলে হত্যা করেন সজল। তাদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে সজল অন্যত্র বিয়ে করে। এক পর্যায়ে সজলের স্ত্রী তাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। এ নিয়ে পারিবারিক জীবনে তাদের মনোমালিন্য ও কলহ সৃষ্টি হয়। এ কারণে সজল ভিকটিমকে সুপরিকল্পিতভাবে কৌশলে পশ্চিম রামপুরার বাসা থেকে বারে নিয়ে যায়। সে ভিকটিমকে মদ পান করিয়ে মোটর সাইকেলে করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে। পরে শান্তিনগরস্থ ফ্লাইওভারে এনে ভিকটিমকে নিচে ফেলে হত্যা করে। 

নাজমা আক্তার বলেন, কোলে-পিঠে করে মেয়েটাকে বড় করেছি। আমার শান্ত মেয়েটাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে খুন করলো। ওই ছিল আমার জীবনের সব। সব জায়গায় মেয়েটার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। 

তিনি বলেন, অনেক বছর আগে সজল ও আমরা একই বাসায় থাকতাম। সজলের বড় বোনের সাথে আমার মেয়ে বিভিন্ন নাচের অনুষ্ঠানে যেত। একই বাসায় থাকায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওরা বাসা ছেড়ে মিরপুর চলে যায়। সজল বিয়েও করে। তার দুইটা বাচ্চাও আছে। তোর সংসার আছে, আবার আমার মেয়ের সাথে যোগাযোগ করার কি দরকার? দুই মাস আগে সে মিমকে পুনরায় ফোন করা শুরু করে। মিম তাকে ব্লক করে দেয়। মিম আমাকে বলেছিল- মা সজল আমাকে ফোন দেয়। আমার ভয় লাগে। এ জন্য দুই মাস সে বাসা থেকে বের হয় নাই।

সেদিনের স্মৃতি মনে করে নাজমা আক্তার বলেন, সেদিন আমরা একসঙ্গে নাস্তা করেছি। পরে মিম বলল, মা আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। অনেকদিন মেয়ে ঘরবন্দি ছিল এ জন্য আমি বাধা দেইনি। যদি জানতাম সজলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে, তাহলে যেতে দিতাম না। সাড়ে ১১টার দিকে ফোন দিলে  জিজ্ঞাসা করি- কোথায়? সে বলল, মা আর ১০ মিনিট লাগবে।  কিন্তু এক ঘণ্টা হয়ে যায় মেয়ে আর আসে না। সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ফোন দিতে থাকি কিন্তু ফোন ধরে না। পৌনে একটার সময় ফোন দিলে রমনা থানার একজন পুলিশ ধরে আমাকে ঘটনাস্থলে যেতে বলে। গিয়ে দেখি, মেয়ের লাশ।

আমি ওর (সজল) দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। বিচারটা দেখে যেতে চাই। বলেন নাজমা আক্তার। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তে তাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা উঠে এসেছে। কেউ কাউকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা ছিল না। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফাইনালি কিছু বলা সম্ভব নয়। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তবে আসামি স্বীকার করেছে, সে হত্যা করেছে।  

আগামী ২৭ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে বলে জানা গেছে। 

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়