ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

দুই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক সাজার অপেক্ষায় অরিত্রীর পরিবার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২০ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২২:৫৮, ২০ জানুয়ারি ২০২৪
দুই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক সাজার অপেক্ষায় অরিত্রীর পরিবার

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় রায়ের তারিখ রোববার (২১ জানুয়ারি) ধার্য রয়েছে। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ-১২ এর বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালত এ রায় দেবেন। 

রায়ে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রত্যাশা করছে অরিত্রীর পরিবার। অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী বলেছেন, আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু, আইন তো নিজস্ব গতিতে চলে। আপনি যখন পেশীশক্তির বিরুদ্ধে লড়তে যাবেন, অন্যায় যারা করে তারা কিন্তু তখন মরিয়া—এ অন্যায় করেছি আমি, এখান থেকে ছাড় পাবো কেমন করে? এটা এস্টাব্লিস করব, আমি অপরাধ করিনি। একজন খুন করেও এ কথা বলে। আবার যে সামান্য আঘাত করে, সেও এ কথা বলে। একজন আরেকজনকে চড় মেরে বা অপমান করেও বলে আমি এ অপরাধ করিনি। 

তিনি বলেন, শতভাগ চেষ্টা করেছি। সাক্ষীদের আদালতে হাজির করিয়েছি। রায় যা হয় দেবে, আমার আর কী করার আছে? তবে, এটা আলোচিত মামলা শুধু না, একটা সন্তান হারানোর মামলা। এ কারণে সারাজীবন ব্যথিত থাকব। এর একটা শাস্তি হোক। এই শাস্তিটা দৃষ্টান্তমূলক হোক এই সমাজের জন্য। শিক্ষকদের যে আচরণ, সেটা পেশাদারি না। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ৯০ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষকসুলভ আচরণ করে না। চেয়ারটা পেলে অনেক শিক্ষক মন্ত্রী-মিনিস্টারের মতো আচরণ করে। এই অশুভ লোকগুলো চেয়ারের দোহাই দিয়ে হয়রানি করে, রূঢ় আচরণ করে। 

রায় শুনতে আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন দিলীপ অধিকারী।

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিটি সাক্ষী আসামিদের বিরুদ্ধে বলেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আশা, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে এবং ভুক্তভোগী পরিবার তার ন্যায়বিচার পাবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, আদালতের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আদালত যে আদেশ দেবেন, আমরা তা মাথা পেতে নেবো। আশা করি, আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন।

গত ২৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ঠিক করেন আদালত। আসামিরা হলেন—নাজনীন ফেরদৌস ও জিনাত আক্তার।

অরিত্রীর আত্মহত্যায় ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় তার বাবা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে দণ্ডবিধির ৩০৫ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ৩ ডিসেম্বর পরীক্ষা চলাকালে অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান শিক্ষক। মোবাইল ফোনে নকল করেছে, এমন অভিযোগে অরিত্রীকে পরদিন তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। দিলীপ অধিকারী স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ওই দিন স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিয়ে যেতে বলেন। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে শান্তিনগরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে। অরিত্রীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

২০১৯ সালের ২০ মার্চ শিক্ষক নাজনীন ফেরদৌস ও জিনাত আক্তারকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার। নির্দয় ব্যবহার ও অশিক্ষকসুলভ আচরণের কারণে অরিত্রী আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

দুই আসামির বিরুদ্ধে যে ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে, ওই ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। এছাড়া, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডেরও বিধান আছে।

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়