ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

কাওছারের মৃত্যু

হত্যা না আত্মহত্যা, উত্তর খুঁজছে সিআইডি 

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০০, ২৬ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১২:৫০, ২৬ জানুয়ারি ২০২৪
হত্যা না আত্মহত্যা, উত্তর খুঁজছে সিআইডি 

কাওছার। ছবি: সংগৃহীত

ছেলে মানুষের মতো মানুষ হবে এমন আশায় মাদ্রাসায় ভর্তি করায় পরিবার। কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে মা-বাবা বাকরুদ্ধ। অন্যদিকে কাওছারের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের ডানা মেলছে। পরিবারের দাবি, হত্যা। তবে পল্লবী থানা পুলিশ ও পিবিআই বলছে, আত্মহত্যা। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।

২০১৭ সালের ৭ আগস্ট পল্লবী থানাধীন মারকাযু তারতীলিল কুরআন মাদ্রাসা থেকে ৮ বছর বয়সী হাফিজুর রহমান কাওছারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কাওছারের বাবা বই বিক্রেতা দুলাল খান মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ ৪ জনের নামে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে দুই দফা অব্যাহতি চেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে দুই সংস্থা। এখন মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর মামলাটি অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছিলো। কিন্তু ওইদিন তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালত আগামী ৩১ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার সাব-ইন্সপেক্টর সেলিম রেজা।

মামলা সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের টিম-৪ এর ইন্সপেক্টর জাহিদুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। নতুন পেয়েছি, তদন্ত করে কি হয় দেখা যাক। কাজ চলছে। আশা করছি, আসল সত্য বের হবে। লক্ষ্য দায়সারা না, আসল সত্য ফাইন্ড আউট করা। তদন্ত শেষ হলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবো।

মামলা সম্পর্কে কাওছারের বাবা দুলাল খান বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। সিআইডি তদন্ত করছে। ওনাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।

তিনি বলেন, ৮ বছর ৯ মাসের একটা ছেলে। পৃথিবীর কি বুঝে। তাকে মেরে বাথরুমে ফেলে রেখেছে। মাথা ফাটা, পায়খানার রাস্তা ফাটা। কোনো কিছুর আশা নাই। ভালো কাজের জন্যই তো মাদ্রাসায় দিছিলাম।

তিনি বলেন, একমাত্র ছেলে। ওর জন্য বুকটা ফেটে যাচ্ছে। সব সময় ছেলে চোখের সামনে। এ ঘটনার পর ওর মা অসুস্থ। বড় আদরের ছিলো ছেলেটা। তাকে খুন করলো।

কাওছারকে হত্যা মামলায় দুলাল খান অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালের ২২ জুলাই কাওছারকে পল্লবী থানাধীন মারকাযু তারতীলিল কুরআন মাদ্রাসায় নুরানী বিভাগে ভর্তি করা হয়। সে নিয়মিত পড়াশোনা করে আসছিল।  ৬ আগস্ট সন্ধ্যা ৭ টার দিকে দেখা করতে তার মা ফাতেমা বেগম মাদ্রাসায় যান। ছেলের সাথে কথাবার্তা বলে ৮টার দিকে বাসায় চলে আসে। পরদিন সকাল ৮টার দিকে আল আমিন নামে পরিচিত একজন দুলাল খানকে ফোন দিয়ে ছেলেকে মাদ্রাসায় দেখতে আসতে বলেন। সেখানে গিয়ে তিনি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল জুনাইদ বিন ইসহাকের রুমে কাওছারের লাশ দেখতে পান। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, জুনাইদ বিন ইসহাক, তার স্ত্রী মোছা. সুমাইয়া খাতুন, মাদ্রাসার ইয়াহিয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান কাওছারকে মারধর করতো। ওইদিন কোরআন শিক্ষাকালে আসামিরা তাকে মারধর করে। মারধরের কারণে কাওছার মৃত্যুবরণ করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মামলার পর পল্লবী থানা পুলিশ তদন্ত করে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার সাব-ইন্সপেক্টর ফারুকুজ্জামান মল্লিক।

আসামিদের অব্যাহতির বিষয়ে তিনি বলেন, কাওছারকে মারকাযু তারতীলিল কুরআন মাদ্রাসায় নুরানী বিভাগে ভর্তি করা হয়। তবে সে ঠিকমত পড়াশোনা করতো না। পড়াশোনায় অমনোগী ছিলো এবং প্রায়ই মাদ্রাসার দেয়ালের সাথে নিজের মাথা ঠুকতো। তার মা ৬ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে দেখা করার জন্য মাদ্রাসায় যায়। তবে দেখা না করে প্রিন্সিপাল জুনাইদ বিন ইসহাকের সাথে ছেলের পড়াশোনা ও বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে চলে আসে। ঘটনার একদিন আগে কাওছার মাদ্রাসার বড় ছাত্রদের কাছে জানায়, সে এখানে পড়াশোনা করবে না। তাকে বাসায় না নিয়ে গেলে আত্মহত্যা করবে। সে জানতে পারে, তার মা তার সাথে দেখা করতে এসেছিল। তবে দেখা করে নাই শুনে রাগে ক্ষোভে অভিমানে মনের কষ্টে ৭ আগস্ট সকাল ৫ টা থেকে রাত সোয়া ৮টার মধ্যে যেকোনো সময় মাদ্রাসার বাথরুমে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

তবে পুলিশের দেওয়া এই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নারাজি দাখিল করেন দুলাল খান। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান একই তথ্য উল্লেখ করে সন্ধিগ্ধ আসামি মামুনুর রশীদ সুমনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধেও নারাজি দাখিল করেন দুলাল খান। ২২ সালের ২৪ জানুয়ারি আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

জুনায়েদের আইনজীবী বলেন, ছেলেটা মাদ্রাসায় পড়বেই না। ওর মা ওকে জোর করে মাদ্রাসায় নিয়ে আসে। মাদ্রাসায় দিয়ে ছিটকিনি আটকায়ে দিতে বলে। পরে রাগে-ক্ষোভে ছেলেটা আত্মহত্যা করে। এর আগে দুই দফায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনও দেওয়া হয়।

মোস্তাফিজের আইনজীবী আনিসুর রহমান বলেন, মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। আশা করছি, এবারও আসামিদের বিরুদ্ধে একই রিপোর্ট আসবে। ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে। তাকে খুন করা হয়নি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা করেছে।

আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে এমন প্রশ্নে এ আইনজীবী বলেন, ছেলেটা তো আত্মহত্যা করেছে। শেষ মুহূর্তে এসে হয়তো বাঁচার চেষ্টা করেছিল। লাফালাফি করতে গিয়ে হয়তো আঘাত পেয়েছে। দুই দফা তদন্ত হয়েছে। তৃতীয় দফায় কি হয় দেখা যাক।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ