ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

৩৫ বছর অপেক্ষার পর রায়, আশায় পরিবার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ০৯:৩৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
৩৫ বছর অপেক্ষার পর রায়, আশায় পরিবার

সগিরা মোর্শেদ

৩৫ বছর আগে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় গুলিতে সগিরা মোর্শেদ সালামকে (৩৪) হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় করা মামলায় রায়ের দিন আজ ধার্য রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইনের আদালত।

আসামিরা হলেন-সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, জা সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহিন, শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান, মারুফ রেজা ও মন্টু মন্ডল।

রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছে ভিকটিমের পরিবার। তারা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা আশা করছেন। এদিকে আসামিপক্ষ বলছে, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। কাজেই তারা খালাস পাবেন।

এ বিষয়ে বুধবার রাতে সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম বলেন, প্রায় ৩৫ বছর পর মামলাটির রায় হচ্ছে। ভালো কিছু আশা করছি। পক্ষে রায় আশা করছি। বাকিটা আদালতের ওপর। তবে চেষ্টা করেছি মামলা নিষ্পত্তির জন্য। ২৫ বছর তো গেলই। বিচার পাবো এমন আশা ছিলো। হতাশার কিছু নেই।

তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে মারুফ রেজার পক্ষে মামলাটির ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ ছিলো। এরপর মামলাটি ডিপ ফ্রিজে ফেলে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে হাইকোর্ট মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। চার বছর পর রায়ের পর্যায়ে এসেছে।

সগিরা মোর্শেদ যখন মারা যান তখন তাদের তিন মেয়েই ছিলেন ছোট। আব্দুস সালাম মায়ের আদরেই মেয়েদের বড় করেছেন। আব্দুস সালাম বলেন, সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠতাম। দুই মেয়ে ভিকারুননিসায় পড়তো। ওদের স্কুলে দিয়ে আসতাম। কাজে যেতাম। পরে আবার মেয়েদের স্কুল থেকে নিয়ে আসতাম। ছোটটা স্কুলে দিয়ে আসতাম। এভাবেই দিনটা যেত। রাতে যখন ঘুমোতে যেতাম তখন মনে মনে আগামীকাল সকাল থেকে আবার স্ট্রাগল শুরু হবে। এখন চিন্তা করি, আল্লাহ কিভাবে সময় পার করেছে। তবে সগিরার বড় বোন ছিলো। তিনিও ওদের দেখভাল করতো। যাই হোক, রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা আশা করছি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সংশ্লিষ্ট আদালতের প্রসিকিউটর মো. রফিক জানান, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় ভিকটিমের পরিবার ৩৫ বছর পরে হলেও ন্যায়বিচারের আশায় আছে। একটু দেরি হলেও মামলার বিচার শেষ হচ্ছে। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। সাক্ষীদের জবানবন্দি সেই চিত্র ওঠে এসেছে। আশা করি, রায় একটি নজির সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, মামলার বাদী তার স্ত্রী হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য যে আইনি লড়াই করে গেছেন সত্যি তা অকল্পনীয়। বাদী এখনো লড়াই করে যাচ্ছেন। স্ত্রী মৃত্যুর পর বাদী এখনো বিয়ে করেননি। তিনটা মেয়েকে মা ছাড়া তিনি অনেক কষ্টে লালন-পালন করেছেন। অনেক ধৈর্য ধারণ করে মামলাটি চালিয়ে আসছেন। আমরা একটা ন্যায়বিচারের আশায় আছে। আমরা মনে করি, আদালতে যেসব সাক্ষী উপস্থাপন করা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিবেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী বলেন, মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় বাদী একবারও বলেননি এরাই সেই আসামি। একমাত্র ভিকটিমের মেয়ে ছাড়া কেউ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আশা করি, মামলার রায়ে আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন।

১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকেলে সিদ্ধেশ্বরীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে সগিরা মোর্শেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় রমনা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার স্বামী সালাম চৌধুরী। মামলাটি ২৫ জন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে গড়ে একজন করে আসামি গ্রেপ্তার করেন। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্টু নামে একজনকে আসামি করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এরপর মামলাটি উচ্চ আদালতে স্থগিত করা হয়।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালে মামলাটি তদন্তের ভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন পিবিআই ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) এর পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম।

২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
মামলাটিতে ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। গত ১২ ডিসেম্বর মামলার পাঁচ আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। ২৫ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঠিক করেন।

/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়