নিষিদ্ধ ব্রাহমা আমদানি
প্রাণিসম্পদের ৫ কর্মকর্তা ও সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জাল-জালিয়াতি করে আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু এনে সাদেক অ্যাগ্রোর মাধ্যমে বিক্রি করে মিলেমিশে অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রাণিসম্পদের ৫ কর্মকর্তা ও সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- পানি সম্পদ অধিদপ্তরের অধীন কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক ডা. মো. মনিরুল ইসলাম, পরিচালক (উৎপাদন) ডা. এ বি এম খালেদুজ্জামান, গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের বায়ার অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার (লিভ রিজার্ভ) ডা. ফিরোজ আহমেদ খান, উপ-পরিচালক (লিভ/রিজার্ভ ট্রেনিং অ্যান্ড রিজার্ভ পদ) ডা. এ বি এম সালাহ উদ্দিন, সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেন এবং ইমরানের বন্ধু তৌহিদুল আলম জেনিথ।
নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরুসহ ৪৪৮টি গবাদিপশু কোনও ধরনের নিলাম ছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর মাধ্যমে জবাই করে ৬০০ টাকা কেজি দরে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি, গোপনে ব্রাহমা গরু বিক্রি ও গরুর সিমেন বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত ২, ৩ ও ৪ জুলাই সাদিক অ্যাগ্রোর মোহাম্মদপুর, সাভার, নরসিংদী ও খামারবাড়ি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে অভিযান চালায় দুদক টিম। অভিযানে অধিকাংশ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সাদিক অ্যাগ্রো রাতারাতি লাভের আশায় ব্রাহমা গরু আমদানি করে। ২০২১ সালের ৫ জুলাই তাদের আমদানি করা ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ করে ঢাকা কাস্টম হাউস। পরে সেগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হেফাজতে সাভারের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়। সাদিক অ্যাগ্রো এসব গরু জব্দের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করলে উচ্চ আদালতের রায় তাদের বিপক্ষে যায়।
জানা গেছে, গত রমজানের আগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এসব কর্মকর্তা আর্থিক লাভবানের উদ্দেশে কৌশলে ১৫টি গরু সাদিক অ্যাগ্রোকে দিয়ে দেয়। তার মধ্যে ৩টি মারা যায়। বাকি গরু কোরবানিতে বিক্রির জন্য সাদিক অ্যাগ্রো তাদের খামারে রাখে।
ব্রাহমা গরুগুলো সাদিক অ্যাগ্রো এবারের পবিত্র ঈদুল আজহার বাজারে চড়া দামে বিক্রি করলে এজাতের গরু নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হয়। তারপরই টনক নড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের। দুদকের টিম ১ জুলাই নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরুর সন্ধানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের খামার ও সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান চালায়।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাদিক অ্যাগ্রোতে আবারও অভিযান চালায় দুদকের টিম। সাদিক অ্যাগ্রোতে ৬টি ব্রাহমা গরুর সন্ধান পেলেও অভিযানের সময় খামারের মালিক ও ব্যবস্থাপক—কাউকে পাওয়া যায়নি।
দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে খামারে এই অভিযান চালানো হয়। এ সময় ঢাকা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আক্তার উপস্থিত ছিলেন। জব্দ করা ৬টি গরু প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের জিম্মায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জানায়, ব্রাহমা জাতের গরুর মাংস বেশি হয়। জাতটির উৎপত্তি ভারতে। পরে যুক্তরাষ্ট্রে আরও দুই থেকে তিনটি জাতের সংমিশ্রণে এটিকে উন্নত করা হয়। দুই থেকে আড়াই বছরের দেশি গরুর ওজন যেখানে ২৫০ থেকে ৩৫০ কেজি হয়, সেখানে ব্রাহমা জাতের গরুর ওজন হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার কেজি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, দুধ বেশি দেওয়া গরুর পালন কমে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্রাহমা জাতের গরু বাংলাদেশে আমদানি নিষিদ্ধ।
নঈমুদ্দীন/এনএইচ