ঢাকা     শুক্রবার   ১৩ জুন ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ৩০ ১৪৩২

ধর্ষণ মামলায় কারাগারে নোবেল

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০১, ২০ মে ২০২৫   আপডেট: ১৭:১১, ২০ মে ২০২৫
ধর্ষণ মামলায় কারাগারে নোবেল

গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ছবি: মামুন খান

ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার ‘সা রে গা মা পা’ খ্যাত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডেমরা থানার ইন্সপেক্টর মুরাদ হোসেন তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

নোবেলের পক্ষে তার আইনজীবী জসিম উদ্দিন জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, “মামলার ঘটনা গত বছরের ১২ নভেম্বর। আর বাদি আসামির স্ত্রী। গতকাল (১৯ মে) রাত পর্যন্ত তারা একই বাসায় ছিলেন। ভুল বোঝাবুঝিতে মামলা করেছেন। ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নাই। লিগ্যালি তার ওয়াইফ, চার মাসের প্রেগন্যান্ট। নোবেল তার সাথে সংসার করতে চান। আমরা আপোস করে নিব।”

এসময় বিচারক কাবিননামা আছে কি না, জানতে চান। তখন আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেন, “তাড়াহুড়ার কারণে কাবিননামাটা আনা হয়নি।”

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন। 

ভুক্তভোগীর মামলার সূত্র ধরে পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, “আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি সাংসারিক, ব্যক্তিজীবন নিয়ে ভালো অবস্থায় নেই আসামি। বাদী দাবি করেছেন, ইডেন কলেজে তিনি অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয়। পরে ফোনে কথাবার্তা হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর তাদের দেখা হয়।”

“আসামি বাদীকে তার ডেমরার স্টুডিওতে নিয়ে যান। সেখানে তাকে আটকে রাখেন। ২-৩ জনের সহায়তায় তাকে ধর্ষণ করেন, মারধর করেন,” যোগ করেন তিনি। 

এ সময় বিচারক জানতে চান, “ঘটনার ৫ মাস পর মামলা কেন? কারণ বাদী একজন ছাত্রী। মূল বক্তব্য হলো, বাদীকে আটকে রেখে ২-৩ জনের সহায়তায় তাকে ধর্ষণ করা হয়।”

এ বিষয়ে ডেমরা থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের সাব-ইন্সপেক্টর ইলামনি বলেন, “ভিকটিমকে আটকে রাখেন তারা। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না। তাকে মারধর করা হতো। একটা ভিডিও দেখতে পায় তার পরিবার। তারা এসে তাকে উদ্ধার করে।”

শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে নোবেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সোমবার (১৯ মে) নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই তরুণী। 

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী ইডেন কলেজের ছাত্রীর সঙ্গে নোবেলের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে প্রেম হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর গায়ক নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ভুক্তভোগীকে ডেমরা থানাধীন তার বাসায় নিয়ে যান। এরপর কয়েকজন আসামির সহায়তায় ওই ছাত্রীকে আটকে রাখেন তিনি। 

অভিযোগে বলা হয়, এরপর ১২ নভেম্বর রাত অনুমানিক ৮টার সময় ভুক্তভোগীকে আটকে তার মোবাইল নিয়ে নেন নোবেল ও তার সহযোগীরা। বাদী তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য আসামিকে মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়ার জন্য বললে নোবেল ওই তরুণীর ২৬ হাজার টাকার রেডমি ১০ প্রো মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলেন।

ভুক্তভোগীর তার অভিযোগে বলেছেন, এরপর আসামি নোবেল তাকে তার বসতঘরে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখেন। নোবেলের কথা মতো বাসায় না থাকলে তার মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। তাই বাদী আসামির ভয়ে কাউকে কোনো কিছু বলার সাহস পাননি। 

অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, আসামি নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ১৯ মে পর্যন্ত বাদীকে মারপিট করেন। আসামি তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরো ২-৩ জনের সহায়তায় বাদীকে সিঁড়ি দিয়ে চুলের মুটি ধরে টানা-হেঁচড়া করে আরেকটি কক্ষে আটক নিয়ে রাখেন। ওই ঘটনার একটি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বাদীর পিতা-মাতা তাকে চিনতে পারেন। এরপর তার পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেন।

ঢাকা/এম/রাসেল 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়