জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক দাঁড়িপাল্লার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। সেইসঙ্গে আপিল বিভাগ দলটির নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া, জামায়াতের দলীয় প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহারের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।
রবিবার (১ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রায়ের পর জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়েরকৃত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো। আজকের এই রায়ের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক সংসদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো।”
আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এ রায়ের পরে দেশে সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাণবন্ত সংসদ গঠিত হবে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই তাদের ইচ্চা অনুযায়ী ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে বেছে নেবেন। আমরা আরো প্রত্যাশা করি, দেশে আগামী সংসদে ইন্টারেস্টিং গঠনমূলক বিতর্ক হবে যার মাধ্যমে গণতন্ত্র স্থায়ী রূপ লাভ করবে।”
তিনি বলেন, “আজকে আপিল বিভাগ হাইকোর্টে যে রায় ছিলো আপিল বিভাগ তা বাতিল করেছেন এবং ইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন এবং অন্যান্য যেসব ইস্যু আসবে তা যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়।”
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই রায় দেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের কার্যতালিকার মামলাটি রায়ের জন্য এক নম্বরে ছিলো।
এই রায়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “১২ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো, নিবন্ধন ফিরে পেল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এখন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে নির্বাচন করতে পারবেন, আর কোনো বাধা রইল না।”
এর আগে গত ১৪ মে নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিলের রায় ঘোষণার জন্য ১ জুন রবিবার দিন ঠিক করা হয়।
জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তরীকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একটি রিট আবেদন করেন।
২০১৩ সালের ১ অগাস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চ ওই রিটের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন। ওই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন ওই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। তাতে এ দলটির দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। শুনানিতে জামায়াতের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ ওই আপিল খারিজ করে দেয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়ায় সেই আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন করা হয় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে।
ঢাকা/মামুন/ইভা