গ্রেপ্তার ৩ হাজার
টাকা দিয়ে ঝটিকা মিছিল, আইনের আওতায় আসবে অর্থদাতারা: পুলিশ
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান।
রাজধানীতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রায়ই ঝটিকা মিছিল করছেন। জনশূন্য রাস্তায় আকস্মিক এসব মিছিল আয়োজনে বিপুল অংকের অর্থ ঢালা হচ্ছে। নির্দিষ্ট অংকের অর্থের লোভে অনেকে মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে ঝটিকা মিছিলে অংশ নিচ্ছে। হচ্ছে গ্রেপ্তারও।
পুলিশ বলছে, ঝটিকা মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ও আতঙ্ক সৃষ্টির ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। এ ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই অর্থ লেনদেনের বিষয়টি জানা গেছে। এই ঝটিকা মিছিলে অর্থায়নকারীদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি–মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “চলতি বছরের আজকের দিন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবশ্যই যারা সরাসরি মিছিলে অংশ নিয়েছেন, শুধু তাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
ডিসি তালেব জানান, ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে এসে এসব ঝটিকা মিছিলে অংশ নিচ্ছেন। তদন্তে জানা গেছে, এসব কার্যক্রমের পেছনে অর্থায়ন করা হচ্ছে এবং প্রতিটি মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট টাকার পরিমাণও নির্ধারিত।
“মূলত তাদের উদ্দেশ্য হলো নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া, ঢাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে সক্রিয়তা প্রদর্শন করা।”
একই দিনে ঢাকায় একাধিক ঝটিকা মিছিলের ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিএমপির মুখপাত্র বলেন, “আমরা তাৎক্ষণিকভাবে মিছিলে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদেরই গ্রেপ্তার করছি। পরে যাচাই-বাছাই করে তাদের পূর্বাপর ইতিহাস যাচাইয়ের পরেই মামলা দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরো জানান, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যক্তিদের গতিবিধির ওপরও কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।
ডিসি তালেব বলেন, “অনেককে হাতেনাতে ককটেলসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব ককটেল বিপজ্জনকভাবে তৈরি করা হয়। তাদের উদ্দেশ্য জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। আমরা প্রতিটি ঘটনার পর সতর্কতা বাড়িয়েছি।”
তিনি জানান, সম্প্রতি একদিনে ২৪৪ জন এবং অন্যদিন ১৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিছিলে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক প্রণোদনার বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। গ্রেপ্তাররা স্বীকার করেছেন, মিছিলে অংশ নিতে ঢাকার বাইরে থেকে আগতদের যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি নির্দিষ্ট অর্থ দেওয়া হয়।
ডিসি তালেব বলেন, “তাদের মোটিভেট করার জন্য বিভিন্নভাবে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। যারা এই আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে।”
ডিএমপির মুখপাত্র বলেন, “গ্রেপ্তার হওয়া অধিকাংশই ঢাকার বাইরের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা। এটি প্রমাণ করে তারা পরিকল্পিতভাবে রাজধানীতে এসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন সামনে থাকায় রাজনৈতিক তৎপরতা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। যে কোনো অপতৎপরতা রুখে দেওয়ার সক্ষমতা ডিএমপির রয়েছে।”
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ