ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বর্ষার আবরণে এসেছে শরৎ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ১৬ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বর্ষার আবরণে এসেছে শরৎ

কাশফুল (ছবি : সংগৃহীত)

শাহ মতিন টিপু : নীলাকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা..! হ্যাঁ, নীলাকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসিয়ে এসেছে শরৎ। রৌদ্র-মেঘের ছায়ার খেলা, ছড়িয়ে পড়া শিউলি ফুল, দুলতে থাকা কাশবন, দুর্গাপূজার আয়োজনের হাঁকডাক জানিয়ে দিল শরৎ এসেছে। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছে শরৎ আবহ।

 

বর্ষার আবরণের মধ্যে এল শরৎ। আজ শরতের প্রথম দিন। ১ ভাদ্র। বর্ষার বিষণ্ণতা পরিহার করে শরৎ এসেছে শান্ত স্নিগ্ধ কোমল রূপ নিয়ে। যেখানে নেই কোনো মলিনতা, আছে কেবল নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস। কি অপূর্ব রঙের খেলা, কি অপূর্ব মায়াবি রঙিন ভুবন সাজায় প্রকৃতি শরতের বুকে তা মনোদৃষ্টি না দিয়ে দেখলে বোঝা যায় না। শরতে প্রাণবন্ত রূপ নিয়ে হেসে ওঠে গ্রামবাংলার বিস্তৃত দিগন্ত।

 

শরতের নিজস্ব রূপবিন্যাসে আকাশ মাটি বন-বৃক্ষ নদীতরঙ্গ সবই যেন হয়ে ওঠে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত। সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে, শুভ্র কাশের আঁচল উড়িয়ে, কণ্ঠে শেফালি ফুলের মালা দুলিয়ে শরৎ আসে প্রকৃতিজুড়ে। মাঠে মাঠে চিরসবুজ ধানখেতের নয়নাভিরাম দৃশ্য, ধানের শিষে আগামী দিনের ফসলের মুকুল।

 

শরতের শান্ত ও স্নিগ্ধ রূপ মনে এক প্রশান্তি এনে দেয়। দিনের সোনালি রোদ্দুরের ঝিলমিল আর রাতের ধবধবে জ্যোৎস্নার টানে মন হয়ে ওঠে মাতোয়ারা।

 

বাংলাদেশ ষড়্‌ঋতুর দেশ। ষড়্‌ঋতুর তৃতীয় ঋতু শরৎ। ভাদ্র আর আশ্বিন এ দুই মাস শরৎকাল। আষাঢ় মাস শেষ হয়ে শ্রাবণের কয়দিন পার হলেই আকাশ আর বিলের অবস্থা পাল্টে যায়। এক শান্ত, প্রশান্ত ভাব নেমে আসে। আকাশে বেড়ে যায় মেঘের জড়াজড়ি মৃদু বাতাসে কাঁপে বিলের পানি।

 

শরৎকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক! সাদা কাশফুল, শিউলি, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, আলোছায়ার খেলা দিনভর এইসব মিলেই তো শরৎ। শরতের স্নিগ্ধতা এক কথায় অসাধারণ! জলহারা শুভ্র মেঘের দল যখন নীল, নির্জন, নির্মল আকাশে পদসঞ্চার করে তখন আমরা বুঝতে পারি শরৎ এসেছে। শরতের আগমন সত্যিই মধুর।

 

শরতের কাশফুলে আকর্ষিত হয় না, এমন কেউ নেই। কাশফুল নদীতীরে বনের প্রান্তে অপরূপ শোভা ছড়ায়। এ অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করেনি এমন মানুষ খুঁজে মেলা ভার। গাছে গাছে শিউলির মন ভোলানো সুবাসে অনুভূত হয় শরতের ছোঁয়া।

 

শরৎকালে কখনো কখনো বর্ষণ হয়, তবে বর্ষার মতো অবিরাম নয়। বরং শরতের বৃষ্টি মনে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। চারপাশের শুভ্রতার মাঝে বৃষ্টির ফোঁটা যেন আনন্দ-বারি! বৃষ্টি শেষে আবারও রোদ। দিগন্তজুড়ে একে সাতরঙা হাসি দিয়ে ফুটে ওঠে রংধনু।

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘আজি কি তোমার মধুর, মুরতী / হেরিণু শরৎ প্রভাতে হে মাতা বঙ্গ শ্যামল অঙ্গ ঝরিছে অনল শোভাতে’। শরতে আকর্ষিত এই কবি আরো লেখেন, ‘শরতে আজ কোন অতিথি এলো প্রাণের দ্বারে।/ আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দগান গা রে...।’

 

প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ শরতের চরিত্রের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন প্রিয়তমাকে। কাজী নজরুল ইসলামও শরতে হারানো প্রিয়াকে অনুভব করেছেন। লিখেছেন, ‘শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ/ এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথি কই...।’ একই রকম বিরহ আক্রান্ত হয়ে কবি লিখেছেন, ‘দূর প্রবাসে প্রাণ কাঁদে আজ শরতের ভোর হাওয়ায়।’

 

অনেকের মতে, শরৎকালে মনে নেচে ওঠে উৎসবের নেশা। কারণ, মাঠে মাঠে সবুজ ধানের ওপর সোনালি আলোর ঝলমলানি কৃষকের মনে জাগায় আসন্ন নবান্নের প্রতীক্ষা। আলোক-শিশিরে-কুসুমে-ধান্যে বাংলার প্রকৃতিও হেসে ওঠে। আর বাঙালির সেই প্রাণের উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা তো আছেই।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ আগস্ট ২০১৪/টিপু/এএ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়